সারাবিশ্ব | তারিখঃ জুন ২৯, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 3650 বার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রায় এক শতাব্দী পর আভ্যন্তরীণ সশস্ত্র বিদ্রোহ দেখলো পরমাণু শক্তিধর রাশিয়া। ভাড়াটে ওয়াগনার বাহিনীর প্রধান ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের নেতৃত্বে রুপ নেওয়া সশস্ত্র বিদ্রোহ প্রায় গৃহযুদ্ধের দিকেই মোড় নিয়েছিল। কিন্তু তা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে প্রতিহত করেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, বিদ্রোহের পর কোথায় আছেন রাশিয়ার সবচেয়ে সিনিয়র জেনারেলরা?
রুশ জেনারেল গেরাসিমভ এবং সুরোভিকিনকে নিয়ে রহস্য দানা বেধেছে। এরই মধ্যে গুঞ্জন শোনা গেছে দুইজনের মধ্যে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার স্থগিত বিদ্রোহের পর থেকে সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল ভ্যালেরি গেরাসিমভ জনসমক্ষে বা রাষ্ট্রীয় টিভিতে উপস্থিত হননি যখন ভাড়াটে নেতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিন গেরাসিমভকে হস্তান্তরের দাবি করেছিলেন। ৯ জুন থেকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতেও তার কোনো উল্লেখ করা হয়নি।
গেরাসিমভ (৬৭) ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের কমান্ডার। কিছু পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষকদের মতে রাশিয়ার তিনটি ‘পারমাণবিক ব্রিফকেস’ এর একটির ধারক তিনি৷
অপরদিকে সিরিয়া যুদ্ধে আক্রমণাত্মক কৌশলের জন্য ‘জেনারেল আর্মাগেডন’ নামে পরিচিত এবং ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার জেনারেল সের্গেই সুরোভিকিন জনসমক্ষে নেই। মার্কিন গোয়েন্দা ব্রিফিংয়ের ভিত্তিতে নিউইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিদ্রোহ সম্পর্কে তিনি মঙ্গলবারেই আগাম খবর পেয়েছিলেন। তিনি ডিবদ্রোহে কোনোভাবে জড়িত কিনা বর্তমানে রুশ কর্তৃপক্ষ তা পরীক্ষা করে দেখছে।
তবে বুধবার ক্রেমলিন এই প্রতিবেদনটিকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বুধবার রয়টার্সকে বলেছেন, সুরোভিকিন প্রিগোজিনের সমর্থনে ছিলেন, তবে পশ্চিমা গোয়েন্দারা নিশ্চিতভাবে জানেন না যে তিনি বিদ্রোহকে কোনোভাবে সাহায্য করেছিলেন কিনা।
মস্কো টাইমসের রুশ সংস্করণ এবং একজন সামরিক ব্লগার সুরোভিকিনের গ্রেপ্তারের খবর দিয়েছে। অপরদিকে রাশিয়ায় বড় অনুসারীদের নেতৃত্বে থাকা কিছু সামরিক সংবাদদাতা বলেছেন, তাকে এবং অন্যান্য সিনিয়র অফিসারদের তাদের আনুগত্য যাচাই করার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করছে এফএসবি নিরাপত্তা পরিষেবা।
তবে আদৌ সুরোভিকিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স। সাবেক রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রেস অফিসারে চালিত টেলিগ্রাম প্রভাবশালী চ্যানেল রাইবারে বলা হয়েছে, একটি শুদ্ধকরণ চলছে।
তিনি বলেন, কর্তৃপক্ষ বিদ্রোহ দমনে ‘নির্ধারকতার অভাব’ দেখিয়েছে বলে মনে করা সামরিক কর্মীদের মধ্য থেকে আগাছা বের করার চেষ্টা করছে। কিছু রিপোর্টার মনে করছেন সশস্ত্র বাহিনীর কিছু অংশ ওয়াগনার যোদ্ধাদের বিদ্রোহ থামাতে সামান্য ভূমিকা রেখেছে।
এই ধরনের পদক্ষেপ নিশ্চিত হলে, রাশিয়া ইউক্রেনে তার যুদ্ধ পরিচালনার পদ্ধতিকে পরিবর্তন করতে পারে। মস্কো যখন ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণকে ব্যর্থ করার চেষ্টা করছে এমন সময়ে র্যাংকেও অশান্তি সৃষ্টি হতে পারে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণোলয় থেকে আসলে কী চলছে সে সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করা হয়নি।
কিছু রুশ এবং পশ্চিমা সামরিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগুর চাকরি আরও নিরাপদ হতে পারে। তিনি পুতিনের একজন ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং তাকে তার কথিত অযোগ্যতার কারণে গেরাসিমভের সঙ্গে নিচে নাামতে চেয়েছিলেন প্রিগোজিন।
কার্নেগি এনডাউমেন্ট থিঙ্ক ট্যাঙ্কের রুশ সামরিক বিশেষজ্ঞ মাইকেল কফম্যান টুইটারে লিখেছেন, ‘আমি মনে করি তিনি (প্রিগোজিন) আসলেই আশা করেছিলেন শোইগু এবং গেরাসিমভের বিষয়ে কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হবে এবং পুতিন তার (প্রিগোজিনের) পক্ষে সিদ্ধান্ত দিবেন।’
গেরাসিমভ তার অনুপস্থিতিতে স্পষ্ট ছিল যখন পুতিন মঙ্গলবার গৃহযুদ্ধ এড়ানোর জন্য সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন, শোইগুর বিপরীতে যিনি তখন থেকে বেশ কয়েকবার প্রকাশ্যে উপস্থিত হয়েছেন।
গেরাসিমভের ডেপুটি সুরোভিকিনকে শেষ দেখা গিয়েছে শনিবার যখন তিনি একটি ভিডিওতে প্রিগোজিনকে তার বিদ্রোহ বন্ধ করার আবেদন জানিয়েছিলেন। তাকে ক্লান্ত দেখাচ্ছিল এবং তিনি চাপের মধ্যে কথা বলছেন কিনা তা স্পষ্ট নয়।
বুধবার সন্ধ্যায় একটি প্রমাণহীন রুশ মিডিয়া এবং ব্লগার রিপোর্টে দাবি করা হয়, সুরোভিকিনকে গ্রেপ্তারের পর মস্কোর লেফোরতোভো কারাগারে রাখা হয়েছে।
গেরাসিমভকে দায়িত্ব দেওয়ার আগে ইউক্রেন যুদ্ধের সামগ্রিক কমান্ডার হিসেবে কাজ করেছিলেন সুরোভিকিন। পশ্চিমা সামরিক বিশ্লেষকরা তাকে একটি কার্যকর অপারেটর হিসেবে বিবেচনা এবং কখনও কখনও রাশিয়ার যুদ্ধ সংবাদদাতারা তাকে সম্ভাব্য ভবিষ্যতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করেছিলেন।
কিংস কলেজ লন্ডনের ওয়ার স্টাডিজের ইমেরিটাস অধ্যাপক লরেন্স ফ্রিডম্যান বলেছেন, সুরোভিকিনের অপসারণ যদি সত্য হয়, তবে শনিবারের বিদ্রোহের চেয়ে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টাকে আরও অস্থিতিশীল করতে পারে ‘বিশেষ করে যদি প্রিগোজিন/সুরোভিকিনের অন্যান্য সহযোগীরা শুদ্ধ হতে শুরু করে।’
ফ্রিডম্যান টুইটারে বলেছেন, ‘সুরোভিকিন নৃশংস কিন্তু দক্ষ রুশ কমান্ডারদের একজন।’