০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্যে ব্যবহৃত হবে: চিফ প্রসিকিউটর

নিউজ ডেস্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক : জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর শেখ হাসিনা সরকার এবং আওয়ামী লীগ যে দমন-নিপীড়ন ও গণহত্যা চালিয়েছে, তা নিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রতিবেদনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের পক্ষে অকাট্য দলিল বলে মন্তব্য করে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘এই দলিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্যে ব্যবহার করা হবে।’

বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার ওপর শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগ যে দমন-নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তার তদন্ত করে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর), সে প্রতিবেদন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার তদন্তে পাওয়া তথ্য-প্রমাণে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই।’

তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মোটাদাগে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট হয়েছে যে, দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও নির্দেশে বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ সরাসরি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছেন।’

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের পক্ষে একটি সুস্পষ্ট এবং অসম্ভব জোরালো একটি প্রমাণ। এই প্রমাণটি তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (এভিডেন্স) সাক্ষ্য হিসেবে আসবে এবং অকাট্য দলিল হিসেবে এটাকে ট্রাইব্যুনালে ব্যাবহার করা যাবে। সেটা আমরা ব্যবহার করবো।’

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) প্রতিবেদনে গত জুলাই-আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দ্বারা সংগঠিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের মতো ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উঠে এসেছে। এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন গোষ্ঠী, সংগঠন এবং বিভিন্ন নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা জড়িত ছিলেন বলে প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৎকালীন সরকার, তার নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা; আওয়ামী লীগের সহিংস গোষ্ঠী ও সংগঠনের সঙ্গে একত্র হয়ে পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল। যার মধ্যে রয়েছে কয়েকশ’ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে গুরুতরভাবে শারীরিক নিপীড়ন ও বলপ্রয়োগ, ব্যাপকহারে নির্বিচার গ্রেপ্তার, আটক, নির্যাতনসহ অন্যান্য ধরনের নিপীড়ন। ওএইচসিএইচআর যুক্তিসংগত কারণে বিশ্বাস করে যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও নিরাপত্তা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরিকল্পনা, সমন্বয়, নির্দেশনায় এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো ঘটেছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওএইচসিএইচআরের অনুমান, বিক্ষোভ চলাকালে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই মিলিটারি রাইফেল ও প্রাণঘাতী মেটাল প্যালেটস লোড করা শটগানে নিহত হয়েছেন। এই ধরনের শটগান সাধারণত বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে থাকে। বিক্ষোভে কয়েক হাজার মানুষ গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। কেউ কেউ স্থায়ীভাবে আজীবনের জন্য কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পুলিশ ও র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ১১ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়েছিল। নিহতদের মধ্যে প্রায় ১২-১৩ শতাংশ শিশু বলে জানা গেছে। পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী শিশুদের টার্গেট করে হত্যা করেছে, ইচ্ছাকৃতভাবে পঙ্গু করেছে। নির্বিচার গ্রেপ্তার, অমানবিকভাবে আটক-নির্যাতন ও অন্যান্য ধরনের নিপীড়ন করেছে। বিশেষ করে শুরুর দিকে বিক্ষোভের সম্মুখ সারিতে থাকা নারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকরা মারাত্মকভাবে আক্রমণ করেছে। নারীরা যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। যার মধ্যে ছিল লিঙ্গভিত্তিক শারীরিক সহিংসতা ও ধর্ষণের হুমকি। কয়েকটি ডকুমেন্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য এবং ছবি-ভিডিও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআর নিশ্চিত হয় যে, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকদের একটি সম্প্রসারিত দল পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে বা ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল। তারা বিক্ষোভ দমনের জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে ব্যাপকভাবে বেআইনি সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক অভিযানে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশের সহিংস প্রচেষ্টাকে সাহায্য করতে অভিযান শুরুর আগেই সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা পুলিশের সঙ্গে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিল। অথবা পুলিশ ফোর্সের পেছনে থেকে আক্রমণে অংশ নিয়েছিল। পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও লোকজনকে থামিয়ে তল্লাশি চালিয়েছিল, বিক্ষোভকারীদের আটক করেছিল, সংগঠিত ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছিল।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশ ওএইচসিএইচআরকে পুলিশ সদস্য, আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের ৯৫ জনের নাম এবং তাদের ভূমিকা কী ছিল, তার বিস্তারিত সরবরাহ করেছে। পুলিশের মতে, এই ব্যক্তিরাই বিক্ষোভের সময় সহিংস হামলায় ব্যবহারের জন্য নাগরিকদের অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন। অস্ত্র সরবরাহ যাদের করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ১০ জন তৎকালীন সংসদ সদস্য, ১৪ জন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, ১৬ জন যুবলীগ নেতা, ১৬ জন ছাত্রলীগ নেতা, সাতজন পুলিশ সদস্য।

গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি ‘কোর কমিটি’র বৈঠক হয়। যেখানে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি প্রধান এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে বিজিবি কমান্ডারকে আরো দ্রুত প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য থেকে আরো জানা যায় যে, এক বৈঠকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিক্ষোভ দমনের জন্য বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে বলেছিলেন। বিশেষভাবে ‘বিক্ষোভের মূল হোতা’, ‘গন্ডগোল সৃষ্টিকারী’দের গ্রেপ্তার, হত্যা ও হত্যার পর লাশ লুকিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ০৫:১৯:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
৫৩

গণহত্যা নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্যে ব্যবহৃত হবে: চিফ প্রসিকিউটর

আপডেট: ০৫:১৯:০৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর শেখ হাসিনা সরকার এবং আওয়ামী লীগ যে দমন-নিপীড়ন ও গণহত্যা চালিয়েছে, তা নিয়ে জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনের প্রতিবেদনকে মানবতাবিরোধী অপরাধের পক্ষে অকাট্য দলিল বলে মন্তব্য করে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘এই দলিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকার্যে ব্যবহার করা হবে।’

বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্র্যাইব্যুনালে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার ওপর শেখ হাসিনা সরকার ও আওয়ামী লীগ যে দমন-নিপীড়ন ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে তার তদন্ত করে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর), সে প্রতিবেদন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার তদন্তে পাওয়া তথ্য-প্রমাণে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই।’

তাজুল ইসলাম বলেন, ‘মোটাদাগে জাতিসংঘের প্রতিবেদনে সুস্পষ্ট হয়েছে যে, দল হিসেবে আওয়ামী লীগ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও নির্দেশে বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ সরাসরি প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করেছেন।’

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, ‘জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনটি মানবতাবিরোধী অপরাধের পক্ষে একটি সুস্পষ্ট এবং অসম্ভব জোরালো একটি প্রমাণ। এই প্রমাণটি তদন্ত সংস্থার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে (এভিডেন্স) সাক্ষ্য হিসেবে আসবে এবং অকাট্য দলিল হিসেবে এটাকে ট্রাইব্যুনালে ব্যাবহার করা যাবে। সেটা আমরা ব্যবহার করবো।’

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) প্রতিবেদনে গত জুলাই-আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দ্বারা সংগঠিত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের মতো ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা উঠে এসেছে। এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন গোষ্ঠী, সংগঠন এবং বিভিন্ন নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা জড়িত ছিলেন বলে প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তৎকালীন সরকার, তার নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থা; আওয়ামী লীগের সহিংস গোষ্ঠী ও সংগঠনের সঙ্গে একত্র হয়ে পরিকল্পিতভাবে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল। যার মধ্যে রয়েছে কয়েকশ’ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড। হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে গুরুতরভাবে শারীরিক নিপীড়ন ও বলপ্রয়োগ, ব্যাপকহারে নির্বিচার গ্রেপ্তার, আটক, নির্যাতনসহ অন্যান্য ধরনের নিপীড়ন। ওএইচসিএইচআর যুক্তিসংগত কারণে বিশ্বাস করে যে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও নিরাপত্তা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পরিকল্পনা, সমন্বয়, নির্দেশনায় এই মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো ঘটেছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওএইচসিএইচআরের অনুমান, বিক্ষোভ চলাকালে প্রায় ১ হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন। যাদের বেশির ভাগই মিলিটারি রাইফেল ও প্রাণঘাতী মেটাল প্যালেটস লোড করা শটগানে নিহত হয়েছেন। এই ধরনের শটগান সাধারণত বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনী ব্যবহার করে থাকে। বিক্ষোভে কয়েক হাজার মানুষ গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। কেউ কেউ স্থায়ীভাবে আজীবনের জন্য কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পুলিশ ও র্যাবের তথ্য অনুযায়ী, ১১ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষকে গ্রেপ্তার ও আটক করা হয়েছিল। নিহতদের মধ্যে প্রায় ১২-১৩ শতাংশ শিশু বলে জানা গেছে। পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী শিশুদের টার্গেট করে হত্যা করেছে, ইচ্ছাকৃতভাবে পঙ্গু করেছে। নির্বিচার গ্রেপ্তার, অমানবিকভাবে আটক-নির্যাতন ও অন্যান্য ধরনের নিপীড়ন করেছে। বিশেষ করে শুরুর দিকে বিক্ষোভের সম্মুখ সারিতে থাকা নারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী এবং আওয়ামী লীগ সমর্থকরা মারাত্মকভাবে আক্রমণ করেছে। নারীরা যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। যার মধ্যে ছিল লিঙ্গভিত্তিক শারীরিক সহিংসতা ও ধর্ষণের হুমকি। কয়েকটি ডকুমেন্ট বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ সমর্থকদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের ঘটনাও ঘটেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য এবং ছবি-ভিডিও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ওএইচসিএইচআর নিশ্চিত হয় যে, বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকদের একটি সম্প্রসারিত দল পুলিশের সঙ্গে যৌথভাবে বা ঘনিষ্ঠ সমন্বয়ে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে কাজ করেছিল। তারা বিক্ষোভ দমনের জন্য সরকারের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করে ব্যাপকভাবে বেআইনি সহিংসতায় লিপ্ত হয়েছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অনেক অভিযানে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশের সহিংস প্রচেষ্টাকে সাহায্য করতে অভিযান শুরুর আগেই সশস্ত্র আওয়ামী লীগ সমর্থকরা পুলিশের সঙ্গে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়েছিল। অথবা পুলিশ ফোর্সের পেছনে থেকে আক্রমণে অংশ নিয়েছিল। পুলিশের পাশাপাশি আওয়ামী লীগ সমর্থকরাও লোকজনকে থামিয়ে তল্লাশি চালিয়েছিল, বিক্ষোভকারীদের আটক করেছিল, সংগঠিত ও পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছিল।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ পুলিশ ওএইচসিএইচআরকে পুলিশ সদস্য, আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের ৯৫ জনের নাম এবং তাদের ভূমিকা কী ছিল, তার বিস্তারিত সরবরাহ করেছে। পুলিশের মতে, এই ব্যক্তিরাই বিক্ষোভের সময় সহিংস হামলায় ব্যবহারের জন্য নাগরিকদের অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন। অস্ত্র সরবরাহ যাদের করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ১০ জন তৎকালীন সংসদ সদস্য, ১৪ জন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, ১৬ জন যুবলীগ নেতা, ১৬ জন ছাত্রলীগ নেতা, সাতজন পুলিশ সদস্য।

গত ১৮ জুলাই সন্ধ্যায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একটি ‘কোর কমিটি’র বৈঠক হয়। যেখানে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি প্রধান এবং গোয়েন্দা কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে বিজিবি কমান্ডারকে আরো দ্রুত প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য থেকে আরো জানা যায় যে, এক বৈঠকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নিজেই নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিক্ষোভ দমনের জন্য বিক্ষোভকারীদের হত্যা করতে বলেছিলেন। বিশেষভাবে ‘বিক্ষোভের মূল হোতা’, ‘গন্ডগোল সৃষ্টিকারী’দের গ্রেপ্তার, হত্যা ও হত্যার পর লাশ লুকিয়ে রাখার নির্দেশ দিয়েছিলেন।