কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি : কিশোরগঞ্জের ভৈরব বাজার স্টেশনের আউটারে যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে মালবাহী ট্রেনের ভয়াবহ সংঘর্ষে সোমবার রাত ১০টা পর্যন্ত ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক।

দুর্ঘটনায় দুমড়েমুচড়ে যাওয়ায় গুরুতর আহত হয়ে আরও প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ভয়াবহ এই ট্রেন দুর্ঘটনার কারণে গাফিলতির দায়ে তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে গঠন করা হয়েছে দুটি কমিটি।

রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সফিকুর রহমান বলেন, মালবাহী ট্রেনের চালক, সহকারী চালক ও পরিচালককে (গার্ড) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

সোমবার বিকাল সোয়া তিনটার দিকে ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় এগারসিন্ধুর গৌধূলির দুটি বগি যাত্রীসহ উল্টে যায়।

দুর্ঘটনার পর থেকে ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম, সিলেট, কিশোরগঞ্জ, নোয়াখালীসহ পূর্বাঞ্চলের ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে হাজার হাজার যাত্রী চরম দুর্ভোগের শিকার হন।

দুর্ঘটনা কবলিত বগি থেকে প্রথমে দশজনের এবং পরে একে একে আরও ৯টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রাত ১০টা পর্যন্ত ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

তাৎক্ষণিকভাবে বিস্তারিত জানাতে না পারলেও প্রাথমিক অনুসন্ধানের ভিত্তিতে রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) নাজমুল ইসলাম জানিয়েছেন, মালবাহী ট্রেনটি সিগন্যাল অমান্য করায় এই ঘটনা ঘটতে পারে।

তবে রেলওয়ের আরেকটি সূত্র বলছে, স্টেশনে কর্মরতদের ক্রসিং পয়েন্ট প্রস্তুতে ভুলের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এগারোসিন্ধুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি সিগন্যাল পেয়ে ঢাকার উদ্দেশে স্টেশন ছেড়ে যাওয়ার পর আউটারে কন্টেইনারবাহী একটি মালবাহী ট্রেনে ঢুকে পড়ে। সেটিও প্রবেশের সিগন্যাল পেয়েছিল।

এদিকে দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে পুলিশ ও র‍্যাব।

এছাড়াও উদ্ধার কাজে যোগ দিতে ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা সদরদপ্তর থেকে ২৩ জন, নরসিংদী থেকে ১০ জন, বেলাবো থেকে তিনজনসহ মোট ৩৬ কর্মী ভৈরবে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

ভৈরব বাজার ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার মোশাররফ হোসেন গণমাধ্যমকে ২৫ জনের মরদেহ উদ্ধারের তথ্য জানিয়েছেন।

ভৈরব উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ইকবাল হোসেনও এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ভৈরব ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, তাদের কাছে ১৫টি মরদেহ রয়েছে। আর বাকি মরদেহ রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তবে নিহতদের কারো পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি।

এদিকে দুর্ঘটনার প্রায় ৪ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মালবাহী ট্রেনটি ঘটনাস্থল ছেড়ে গেছে। ভৈরব জংশনের পার্শ্ববর্তী জগন্নাথপুর এলাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় ট্রেনটি।

রাতে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, উদ্ধারকারী ট্রেন এসেছে। যাত্রীবাহী ট্রেনটি উদ্ধারে কাজ শুরু হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখানে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যাদের উন্নত চিকিৎসা দরকার তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। নিহতদের মরদেহ দাফনের জন্য স্বজনদের ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে।

ভয়াবহ এ ট্রেন দুর্ঘটনায় হতাহতদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।