লাইফ স্টাইল : আপনার রান্নাঘর এবং ফ্রিজটি একনজর দেখুন, সেখানে কি আদা দেখতে পাচ্ছেন ? যদি না দেখে থাকেন তাহলে এখনই মুদি দোকানে যেতে হবে। কেননা এই ওষুধি বিস্ময় চীনা ঔষধ শাস্ত্র এবং ভারতীয় আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে রোগ নিরাময়ী মসলা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে বহুদিন। আধুনিক বিজ্ঞানও এবার তার পক্ষে দাঁড়িয়েছে।

আর শুধু মোটরযানে ভ্রমণের সময় সৃষ্ট অসুস্থতার চিকিৎসায়ই নয় বরং আরো নানা ধরনের অসুস্থতায় আদা বেশ কার্যকরী। মাথা ব্যাথা, বমি এবং নারীদের ঋতুস্রাবকালীন পেটের ব্যাথাসহ নানা রোগের উপশম করে আদা।

আদার সাতটি বিস্ময়কর উপকার হলো:

আদা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আদাতে রয়েছে বেশিরভাগ ঠাণ্ডা-সর্দিজনিত রোগের পেছনে দায়ী রাইনো ভাইরাস দমনের শক্তিশালি রাসায়নিক উপাদান। এছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং এটি একটি প্রাকৃতিক ব্যাথা-নাশক এবং জর প্রতিরোধী হিসেবেও কাজ করে।

আর্থ্রাইটিসের ব্যাথা দূর করে
আদা শরীরের জোড়াগুলোতে সৃষ্ট ব্যাথা এবং আর্থ্রাইটিসে আক্রান্তদের প্রদাহ দূর করে। কারণ আদাতে রয়েছে জিঞ্জারোল নামের একটি উপাদান। যা প্রদাহরোধী উপাদান। এটি প্রদাহজনক সাইটোকিন গঠন প্রক্রিয়াকে দমন করে। আর্থ্রাইটিস অ্যান্ড রিউম্যাটোলজি-তে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, হাঁটুর অস্ট্রিওআর্থ্রাইটিসের লক্ষণগুলো ব্যাপকহারে কমিয়ে আনে আদার নির্যাস।

মাংসে পেশির ব্যাথা লাঘব করে
জিমে যাওয়ার আগে আদা খান। গবেষণায় দেখা গেছে, আদা একটি প্রাকৃতিক ব্যাথা উপশমকারী এবং প্রদাহরোধী উপাদান হিসেবে কাজ করে। ভারী ব্যায়াম করার পর মাংসপেশিতে যে ব্যাথা সৃষ্টি হয় তা দূর করে আদা।
জার্নাল অফ পেইনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ২ গ্রাম আদা খান তারা ব্যায়াম করার ২৪ ঘন্টা পর মাংসপেশিতে অনেক কম ব্যাথা অনুভব করেন।
দৌড়বিদ সহ অন্যান্য ক্রীড়াবিদরাও আদা থেকে উপকৃত হতে পারেন। প্রদাহ এবং মাংসপেশির ব্যাথায় ট্যাবলেটের চেয়েও বেশি কার্যকর আদা।

পেটফাঁপা দূর করে
আপনারা জানেন আদা বমিরোধী। কিন্তু এটাই আদার একমাত্র পাকস্থলীজাত উপকারিতা নয়। আদা আপনার হজম শক্তি বাড়াবে এবং আপনাকে কষ্টকর এবং অস্বস্তিদায়ক পেট ফাঁপা থেকে রক্ষা করবে।
বায়ুনাশক ঔষধি উপাদান হিসেবে আদা পাচক রস এবং হজম প্রক্রিয়ার উদ্দীপনা বাড়ায়। পাশাপাশি এতে রয়েছে জিনজিয়াবিন এনজাইম যা প্রোটিন ভাঙ্গতে সহায়ক।

নারীদের ঋতুস্রাবকালীন ব্যাথা লাঘব করে
আদার সবচেয়ে বিস্ময়কর উপকারিতা হলো এটি নারীদের ঋতুস্রাবকালীন ব্যাথা লাঘব করে। জার্নাল অফ অল্টারনেটিভ অ্যান্ড কমপ্লিমেন্টারি মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঋতুস্রাবকালীন ব্যাথা উপশমের ক্ষেত্রে আদা ইবুপ্রোফেন ওষুধের মতোই কার্যকর।

মাইগ্রেনের ব্যাথাও দূর করে
মাইগ্রেনের ব্যাথা সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাথা। আদার রয়েছে প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিন সংশ্লেষণ দমনের ক্ষমতা। যা রক্তের শিরা-উপশিরাগুলোকে স্ফীত হওয়া এবং চাপ সৃষ্টি করা থেকে বিরত রাখে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, মাইগ্রেনের ব্যাথার চিকিৎসায় আদা ওষুধের মতোই কার্যকর। আর কি চাই? এছাড়া আদা বমির উদ্রেককারী পাকস্থলির মোচড়ানোও দূর করে। যা থেকে অনেক সময় মাইগ্রেনের ব্যথার উৎপত্তি হয়।

স্মৃতি শক্তির সংরক্ষণ করে
আদা আপনার মস্তিষ্ককে আলঝেইমার থেকে রক্ষা করবে। এই স্নায়ুক্ষয়ী রোগটি সৃষ্টি হয় মস্তিষ্কে অপ্রয়োজনীয় অ্যামিলয়েড প্রোটিন জমা হওয়ার মাধ্যমে। পরীক্ষাগারের এক গবেষণায় দেখা গেছে, আদা এই স্নায়ুক্ষয়ী প্রোটিন থেকে আপনার মস্তিষ্কের কোষগুলোকে প্রতিরক্ষা দিতে সক্ষম। এবং এভাবে আলঝেইমার রোগও প্রতিরোধ করতে সক্ষম। তবে মানুষের ওপর এ ব্যাপারে এখনো কোনো গবেষণা বা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়নি। তবে আদাকে মস্তিষ্কের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবারের তালিকাভুক্ত করাটাই শ্রেয়।
সূত্র: ফক্স নিউজ