রাসেল আহমেদ,খুলনা:মাঝ আশ্বিনের বৃষ্টি মেঘের ছায়ায় বিশাল জলরাশির উপরে ফুটে আছে পদ্ম আর শাপলা।

রোদের তীব্রতায় ফুলগুলোও কিছুটা নির্জীব। দিগন্ত জোড়া পদ্ম আর শাপলা ফুলের সৌন্দর্য বিমোহিত করছে প্রকৃতি প্রেমীদের। ভূতিয়ার বিলে প্রায় তিন যুগের জলাবদ্ধতা, আকুলতা, শূন্যতা, গহীন বৃত্তান্ত কেবল তেরখাদা উপজেলাবাসীই মর্মে মর্মে উপলব্ধি করছে। বিলটির দিকে তাকালে সবুজ সোনালী ধানের পরিবর্তে পদ্মফুল ও শাপলা ফুলের পানির ঢেউ চোখে পড়ে।

তেরখাদা উপজেলার ভুতিয়ার বিলের এমন মনরম পরিবেশ দেখতে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে অনেক ভ্রমনপ্রেমি এখানে বেড়াতে আসা শুরু করেছে। পদ্ম ফুলের সৌন্দর্যে তাদের স্বাগত জানান দিচ্ছে। এরই মাধ্যমে মৌসুমী কর্মসংস্থান চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে বেড়েছে তেরখাদা উপজেলার সুনাম। ভ্রমন পিপাসুদের উপস্থিতিতে এখানে বেড়েছে নৌকার কদর। বিল জুড়ে ফুটে থাকা পদ্মফুল যেন দর্শনার্থীকে স্বাগত জানাচ্ছে।গত কয়েক বছর প্রকৃতিপ্রেমী মানুষকে পদ্মবিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে নৌকার মাঝি বনে গেছেন তেরখাদা এলাকার অনেকেই। দেশি মাছের ভান্ডার পদ্মবিল। কৈ,শিং, মাগুরের মজুদ এখানে। এছাড়া রয়েছে শৈল,গজাল, রয়না, খলিশা, পুঁটিমাছসহ দেশি প্রজাতির অনেক মাছ। শীতে পানি কমতেই জাল,পোলো নিয়ে মাছ ধরতে নেমে পড়ে অনেকেই। চারদিকে থাকে তখন উৎসবের আনন্দ।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শিউলি মজুমদার বলেন, ভুতিয়ার বিলের আয়তন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে মাত্র ৪০/৫০ হেক্টর জমিতে পদ্মফুল ফোটে, বাকি আগাছা ও শেওলায় ভরা। খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিনের স্থায়ী জলাবদ্ধতার ফলে তেরখাদা উপজেলার ভূতিয়ার বিল পাড়ের মানুষের মধ্যে নীরব দুর্ভিক্ষ চলে আসছে। বিল তীরবর্তী এ উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের হাজারও পরিবার অভাবের তাড়নায় কাজের সন্ধানে গ্রাম ছেড়ে শহরে পাড়ি জমিয়েছে। যেসব পরিবারের গায়ে মাছের আঁশটে গন্ধ ছিল তারা এখন শহরমুখী হয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। যারা এলাকায় টিকে রয়েছেন তাদের জীবন জীবিকার একমাত্র মাধ্যম এখন নৌকায় করে শাপলা শালুক তোলা আর মাছ ধরা। যদিও শ্রাবণের বৃষ্টিতে পানি বেড়ে যাওয়ায় মাছের দেখা মিলছে না।

খুলনার তেরখাদা উপজেলা ও নড়াইল জেলার অংশ বিশেষ নিয়ে প্রাকৃতিকভাবে ভূতিয়ার বিলটির সৃষ্টি। ২০০৩ সাল থেকে ভূতিয়ার বিলের ২০হাজার একর জমি স্থায়ী জলাবদ্ধতার শিকার হয়েছে।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফা বেগম নেলি বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। পদ্মফুল ঘিরে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের আনাগোনা ও সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। জায়গাটি মনমুগ্ধকর। ভুতিয়ার বিলের অপরুপ সৌন্দর্য রক্ষায় কার্যক্রর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।