উজ্জ্বল রায়, জেলা প্রতিনিধি নড়াইল থেকে: নড়াইলে ড্রাগন ফল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। নড়াইলের লোহাগড়ায় ড্রাগন ফল চাষে অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেছেন সৈয়দ রওশন আলী। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার এসএইচবিআর আলিম মাদরাসার সাবেক সিনিয়র শিক্ষক।

নড়াইল জেলায় ড্রাগন ফল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। টক-মিষ্টি ও মিষ্টি স্বাদের ড্রাগনের চাষে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন তারা। ৯০ শতাংশ জমিতে ড্রাগন চাষ করা কৃষকের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ফলটির চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে।
স্বল্প মূলধন ও অল্প জায়গায় ড্রাগন চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন সৈয়দ রওশন আলী। তার সাফল্য দেখে ড্রাগন চাষে এগিয়ে এসেছেন এ উপজেলার অন্য কৃষকেরা। উপজেলার ৩নং শালনগর ইউনিয়নের শেখ পাড়া বাতাসি গ্রামের মাঠে ড্রাগন চাষ করেছেন তিনি।

সৈয়দ রওশন আলী বলেন, একটি বীজতলা থেকে প্রতি ১৫ দিন পর পর অন্তত ২০০টি ফল সংগ্রহ করা যায়। তেমন রোগ বালাই না থাকায় একটু পরিচর্যায় অনেক ভালো ফলন পাওয়া যায়, ৭৩০টি খুঁটিতে চারা রোপণ করেছি, প্রতিটি খুঁটিতে পাঁচটি চারা রোপণ করে মোট ৩ হাজার চারা রোপণ করি। এতে প্রায় দশ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এপ্রিল থেকে মে মাসে ফুল আসে আর শেষ হয় নভেম্বর মাসে। ফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ফোটা এবং ফল ধরা অব্যাহত থাকে।

তিনি আরও বলেন, একটি ফলের ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে এক কেজির ও বেশি হয়ে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১০০ থেকে ১৩০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ হতে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব। ড্রাগন প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে ফল বিক্রি হয়। এ সময় চলতি মৌসুমে প্রায় পঁচিশ লাখ টাকার ফল বিক্রির আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাউড়িখোলা গ্রামের শিক্ষিত যুবক প্রসাদ কুমার গাইন বলেন, বতর্মান যে অবস্থা তাতে চাকরি পাওয়া অনেক সমস্যা। আমি ড্রাগন বাগান করতে চাই। সৈয়দ রওশন আলী স্যারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে আমি এখান থেকে চারা নিয়ে ড্রাগন ফলের বাগান করব।

আরেক যুবক মুনতাছির রাফি বলেন, ড্রাগন ক্ষেতটি খুব সুন্দর ও পরিপাটি। প্রতিটি গাছে ফুল ও ফল ধরছে। এছাড়া ড্রাগন ফলের দামও বাজারে বেশ ভালো পাওয়া যায়। এজন্য তিনিও ভাবছেন কিভাবে এটার আবাদ শুরু করবেন।

ড্রাগন বাগানের এক কর্মচারী বলেন, সৈয়দ রওশোন আলী ভাইয়ের বাগান গড়ে তোলার শুরু থেকে আমি আছি। এখানে আমি দুই বছর ধরে কাজ করছি। এ বাগানটিতে কাজ করতে অনেক ভালো লাগছে।

লোহাগড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ফারজানা আক্তার বলেন, সৈয়দ রওশন আলীর ড্রাগন চাষের সফলতা দেখে উপজেলায় অনেকেই এখন ড্রাগন ফলের চাষ করছেন। বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ বেশ জনপ্রিয় হলেও লোহাগড়ায় তেমন সাড়া পড়েনি। তবে সম্প্রতি ড্রাগন চাষ বেড়েছে। কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে উপজেলাতে বাণিজ্যিকভাবে ফলটির চাষ করা সম্ভব।