ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত
রাশেদুজ্জামান রয়েল : হিমের বিদায়। বসন্তে পা বাড়িয়েছে প্রকৃতি। বিদায় দেয়া হচ্ছে গাছের পুরনো পাতাকেও। সবুজের সমারোহে সাজছে বৃক্ষরাজি। রঙিন ফুলে খেলছে ভ্রমর। দক্ষিণা বাতাসে ঢেউ খেলছে মাঠের ফসল। বসন্তের পাখির গানে মুগ্ধ হচ্ছে হৃদয়। আজ পহেলা ফাল্গুন। বসন্তের প্রথম দিন। সঙ্গে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। তাই তো বসন্ত- ভালোবাসা মিলেমিশে আজ একাকার হবে।
কবি-সাহিত্যিকরা যুগে যুগে বসন্তের বন্দনা করেছেন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন, “আয় রে বসন্ত, হেথা, কুসুমের সুষমা জাগা রে, শান্তিস্নিগ্ধ মুকুলের, হৃদয়ের গোপন আগারে।” সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছেন, “ফুল ফুটুক না ফুটুক, আজ বসন্ত। শান-বাঁধানো ফুটপাথে, পাথরে পা ডুবিয়ে এক কাঠখোট্টা গাছ, কচি কচি পাতায় পাঁজর ফাটিয়ে, হাসছে।” নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন, “হয়তো ফুটেনি ফুল রবীন্দ্র-সঙ্গীতে যতো আছে, হয়তো গাহেনি পাখি অন্তর উদাস করা সুরে, বনের কুসুমগুলি ঘিরে। আকাশে মেলিয়া আঁখি, তবুও ফুটেছে জবা, দুরন্ত শিমুল গাছে গাছে, তার তলে ভালোবেসে বসে আছে বসন্তপথিক।
কবি-সাহিত্যিকদের এই বন্দনাই বলে দেয় বসন্ত ঋতু আসলেই নতুন রূপে সাজে প্রকৃতি। গাছে ফোটা আগুনঝরা পলাশ, কৃষ্ণচূড়ার সঙ্গে তরুণ হৃদয়েও লাগে রঙের আভা। তাই তো প্রতিবছর প্রকৃতির রূপে রঙিন হয়ে আড়ম্বরে বসন্ত উদ্যাপন করে বাঙালি। এবারও বসন্তকে রাঙাতে নতুন মাত্রা যুক্ত করেছে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। তাই তরুণ হৃদয় ভালোবেসেই বসন্ত বরণ করবেন। ঢাকাসহ সারা দেশ জুড়েই প্রকৃতিতে বসন্তের আভা লেগেছে। সবুজ পাতার ফাঁকে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ ও বসন্তের পাখি কোকিলের কুহুকুহু মিষ্টি সুরে পাগল হচ্ছে বাঙালির মন। বসন্ত ঋতুতে দেখা মেলে অতিথি পাখির। শহরের আশপাশে কিংবা গ্রামীণ বিভিন্ন লেক ও হ্রদে প্রায়ই দেখা যায় অতিথি পাখিকে। গ্রাম ও নগর জুড়ে রক্তিম পলাশ, অশোক, শিমুল, কৃষ্ণচূড়া, কাঞ্চন, পারিজাতসহ বিভিন্ন রঙিন ফুল মুগ্ধ করে বাঙালির হৃদয়। গ্রামের খাল-বিল জুড়ে দেখা যায় সাদা-লাল শাপলা আর পদ্মফুলের মিলনমেলা। তাই পহেলা ফাল্গুন এলেই বাঙালি মাতে বসন্ত উৎসবে।
ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদ, উত্তরার ৩ নম্বর সেক্টরে মুক্তমঞ্চ, পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্কসহ রাজধানীতে একাধিক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিয়েছে জাতীয় বসন্ত উৎসব আয়োজক কমিটি। কমিটির সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট বলেন, চলতি বছর পহেলা ফাল্গুন এবং পবিত্র শবেবরাত (মুসলিমদের একটি তাৎপর্যপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান) একইসঙ্গে হওয়ায় উৎসবটি অর্ধদিবস পালিত হবে। সুইট বলেন, আমরা ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রা বাদ দিয়ে সকাল ৭টা থেকে দুপুর পর্যন্ত উৎসব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রাজধানীর তিনটি স্থানে সাংস্কৃতিক কর্মসূচি পালিত হবে। এদিকে চারুকলার বকুলতলায় (চারুকলা অনুষদ) অনুষ্ঠান আয়োজন হচ্ছে। বকুলতলায় ফাল্গুনকে বরণে বর্ণাঢ্য আয়োজন থাকছে। চারুকলার আয়োজনে থাকছে শাস্ত্রীয় সংগীত, বসন্তের গান, কবিতা আবৃত্তি, লোকগান এবং নৃত্য। এ আয়োজনে মোট ৪২টি সাংস্কৃতিক দল অংশ নেবে। রাজধানীর অন্য দু’টি ভেন্যুতেও একই ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। এদিকে পহেলা ফাল্গুনের পাশাপাশি একইদিনে ভালোবাসা দিবসও উদ্যাপিত হবে। এ নিয়ে তরুণ-তরুণীদের মনে রয়েছে বাড়তি উদ্দীপনা। এ দিনে ফুলের চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়। ফলে ফুল ব্যবসাতেও যথেষ্ট চাঙ্গাভাব দেখা যায়।