লাইফ স্টাইল | তারিখঃ জানুয়ারি ১৭, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 11413 বার
গ্রামের সংবাদ ডেস্ক : স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞানসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়েননি। কিন্তু তাঁর কাজ এই বিজ্ঞান ঘিরেই। কীভাবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ জন্মাল? কীভাবে নিজেকে তৈরি করলেন? পড়ুন ইনফো স্টেশনের প্রকৌশল প্রধান লিংকন মাহমুদ–এর গল্প।
আমি পড়াশোনা করেছি একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামে। স্কুল ও কলেজ ছিল মাদারীপুরের কালকিনিতে। মানবিক বিভাগ থকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে স্নাতকে ভর্তি হই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষ থেকে প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি আমার আগ্রহ জাগে। অনলাইনের বিভিন্ন মাধ্যমে প্রোগ্রামিংয়ের পড়াশোনা শুরু করি। এ সময় পত্রিকাগুলোয় প্রোগ্রামিং নিয়ে যত প্রতিবেদন ছাপা হতো, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তাম। তবে মানবিক বিভাগের হওয়ায় সেভাবে কারও নির্দেশনা পেতাম না। তাই যেখানে যা পেতাম, তা-ই বিশ্বাস করতাম। স্নাতক শেষ করে মনে হলো, প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে হবে। আমি সবকিছু ছেড়ে দিয়ে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ওয়ার্ডপ্রেসের কাজ শেখা শুরু করি। কিন্তু প্রশিক্ষণ নেওয়ার সময় মনে হয়েছে, আরও শেখার সুযোগ আছে। পরে জাভাস্ক্রিপ্ট শেখা শুরু করি।
আমার মনে হয়েছে, যদি ভালো কারিগরি দক্ষতা থাকে, তাহলে আরও কাজ পাব। তাই পিএইচপি শেখা শুরু করি। পিএইচপি শেখার জন্য বিভিন্ন পেশাজীবীর সহায়তা নিই। এ সময় গ্রামীণটেকে শিক্ষানবিশি শুরু করি। যা যা শিখেছি, তা কাজে ব্যবহারের চেষ্টা করতাম। তবে এত কিছুর পরও প্রোগ্রামিংয়ের চাকরি পেতে সমস্যা হচ্ছিল। তখন বুঝতে পারি, আমাকে প্রোগ্রামিং–সংক্রান্ত কিছু সনদ অর্জন করতে হবে। বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে সনদ নিই।
এ সময়ই পিএইচপির আন্তর্জাতিক কারিগরি সনদ—জেন্ড সার্টিফিকেশনের কথা শুনি। কিন্তু সে সময় আমার জেন্ড পরীক্ষার প্রস্তুতি ও ফি দেওয়ার টাকা ছিল না।
তখন পরিচিতজনদের জন্য ওয়েবসাইট বানিয়ে অর্থ উপার্জন শুরু করি। পরীক্ষা দিই। ২০১৭ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর (আন্তর্জাতিক প্রোগ্রামার দিবস) ৯৯তম বাংলাদেশি হিসেবে জেন্ড সনদ পাই।
পরীক্ষার প্রস্তুতির সময়ই হ্যাকারর্যাংকে প্রোগ্রামিংয়ের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছিলাম। সমস্যা সমাধানের দক্ষতা বাড়াতে এটা অনেক সাহায্য করে। আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। নেটওয়ার্ক হয়।
এই সনদ অর্জনের পর নানা প্রতিষ্ঠান থেকে কাজের সুযোগ আসতে থাকে। শিক্ষাপ্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠান পার্পেল প্যাচে (তখন নাম ছিল উইজার্ডস) সফটওয়্যার প্রকৌশলী হিসেবে কাজ শুরু করি।
এখন ইনফো স্টেশন নামের একটি প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানে প্রকৌশল প্রধান হিসেবে কাজ করছি। দেশ-বিদেশের নানা প্রতিষ্ঠানকে আমরা প্রযুক্তিনির্ভর সেবা দিই।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার সুযোগ না পেলেও এখন কম্পিউটার ও প্রযুক্তি নিয়েই আমার সব কাজ। আমি মনে করি, যাঁরা চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করেন, তাঁদের প্রযুক্তি দুনিয়ায় অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। গত সাত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, কম্পিউটারবিজ্ঞান না পড়ে এসেও অনেকেই ভালো করছেন। শুরুতে একটু পিছিয়ে থাকেন বলেই হয়তো তাঁদের শেখার আগ্রহ বেশি। আগ্রহই তাঁদের এগিয়ে নেয়। সংগৃহীত।