ডা: ওবায়দুল কাদির : মানুষের শরীরে পিত্ত কোষে অথবা পিত্তবাহী নালীতে পিত্তরস জমাট বেঁধে প্রস্তরকণা আকার ধারণ করে যাকে পিত্ত পাথরী বলা হয়ে থাকে। পিত্তবাহী নালীতে কোনো অসুবিধা দেখা দিলে এই রোগটি হতে পারে। সচরাচর এই রোগটি অন্য কোনো কারণে হয় না। রোগের পিত্ত কোষ বা গলব্লাডারে যে পিত্ত পাথর হয় তার আকার এবং প্রকার বিভিন্ন রকম।

যেকোনো সাইজের ছোট-বড়-মাঝারি গোলাকার, সাদা কালো কাটা সবুজ বর্ণ ইত্যাদি হতে পারে। বালু কণার মতো অথবা পায়রার ডিমের আকারেরও হতে পারে। একটি অথবা একাধিক পাথরী পিত্ত জমে তীব্র ব্যথা হয়।

আমাদের দেশে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অত্যন্ত বেশি। এই পাথর যতদিন পিত্তকোষে আবদ্ধ থাকে ততদিন রোগী তেমন বিশেষ অস্বস্তি বোধ করে না, মাঝে মাঝে সামান্য বেদনার অনুভব করে। কিন্ত যখন পিত্তকোষ হতে এই পাথরগুলো পিত্ত নালীর মধ্য এসে পড়ে তখনই অসম্ভব ব্যথার সৃষ্টি হয় এবং রোগী অস্থির হয়ে পড়ে। এই ব্যথাকে পিত্ত শূল বা বিলিয়ারি কলিক বলে।

শারীরিক বিধিশুদ্ধ নিয়মানুসারে পিত্তকোষ থেকে সঞ্চিত পিত্তরস পিত্তনালী দিয়ে ক্রমে ক্রমে ক্ষুদ্রান্তের প্রথমাংশ বা ডিউডেনামের মধ্যে প্রবাহিত হয়। আহারাদির দোষে অথবা পিত্ত কোষের বা পিত্ত নালীর প্রদাহজনিত কারণে এই পিত্ত প্রবাহ বিঘ্নিত হতে পারে।

ফলে পিত্তরস জমাট বেঁধে যায় এবং ধীরে ধীরে পিত্ত পাথর দেখা দেয়। যদি পিত্ত পাথর ছোট হয় বা বালু কণার মত হয় তখন তা অনেক সময় নিজে থেকেই বেরিয়ে যায় এবং কখন সেটা বেরিয়ে যায় তা ঠিক বোঝা যায় না।

তবে পিত্ত পাথর আকারে বড় হলে বেরিয়ে যেতে পারে না তখন ব্যথার সৃষ্টি হয় এবং রোগী কষ্ট পায়। পিত্ত কোষ অঞ্চলে মাঝে মাঝে ব্যথা লক্ষণ দেখে অনেক সময় ধরা যায়। আবার অনেক সময় জীবনভর পিত্ত পাথরী পিত্ত কোষে থেকে যায় এবং তা সত্বেও রোগী কোন রূপ কোন ব্যথার অনুভব করে না।

এই রোগ হলে পিত্ত ক্ষরণ যথারীতি হতে পারে না। সর্বদা ঘরে বসে মানসিক পরিশ্রম করা, মাছ, মাংস প্রভৃতি উত্তেজক খাদ্য গ্রহণ, অধিক পরিমাণে চুন খাওয়া বা যান্ত্রিক কোন গোলযোগ হেতু এই রোগ হতে পারে।

পিত্ত রোগের কারণ হিসাবে এখানে উল্লেখ করা যায়- কিছু কিছু পিত্ত পাথর ক্যালসিয়াম লবণ অথবা বিলোরুবিনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। তবে বিলোরুবিন দিয়েই বেশি সৃষ্টি হয়ে থাকে। অতি নগন্য ক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম লবণ দ্বারা সৃষ্টি হয়। হেমোলাইসিসজনিত কারণে অতি মাত্রায় বিলোরুবিন সৃষ্টির ফলেই এই পাথর হতে পারে। পিত্ত প্রবাহ ঠিকমত না হলে পিত্ত জমাট বেধে যে পাথর সৃষ্টি হয় সেটা পরীক্ষা করে জানা গেছে।

প্রচন্ড বেদনা ডান পাশ হতে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। প্রচন্ড ব্যথায় রোগী ছটফট করে এবং অস্থির হয়ে পড়ে। অনেক সময় ব্যথার সঙ্গে বমি, পিত্ত বমি হয়ে থাকে। ব্যথার সঙ্গে ঠান্ডা ঘাম দেখা দেয়। নাড়ী দুর্বল হয়, ছটফট ভাব এবং হিমাঙ্গ ভাব দেখা দেয়, শ্বাস প্রশ্বাসে কষ্ট হয়। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর জন্ডিস রোগ হয় এবং দেহ হলুদ বর্ণ হয়ে যায়।

অপারেশন ছাড়া এই রোগের কোনো বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে গলব্লাডারের সার্জারিটায় ল্যাপারোস্কপি পথিকৃত। ল্যাপারোস্কপির অপারশনের মাধ্যমে রোগী পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়। এ জন্যই ল্যাপারোস্কপি সার্জারি দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে।

লো ক্যালোরির সুষম খাবার খান। দরকার হলে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। খাবারে যেন বৈচিত্র্য থাকে। রোজ এক ধরনের খাবার না খেয়ে সব রকম খাবার মিলিয়ে মিশিয়ে খান।

ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার রাখুন খাদ্যতালিকায়৷ যেমন, সবুজ শাক-সবজি, ফল, ব্রাউন রাইস, আটা–জোয়ার–বাজরার রুটি, ব্রাউন ব্রেড, খোসাওলা ডাল ইত্যাদি৷ পি–নাট বাটার খেতে পারেন।

মাংস বা চিকেনের যে অংশে চর্বি কম থাকে সেই অংশ খান৷ চিকেনের চামড়া ছাড়িয়ে নেবেন অবশ্যই৷ খাবারের তালিকায় বৈচিত্র্য আনুন। নিরামিষ প্রোটিনও খাবেন মাঝে মাঝে৷

যে ফ্যাট শরীরের জন্য ভাল এমন কিছু রাখুন রোজের ডায়েটে। যেমন বাদাম, অ্যাভোকাডো, অলিভ অয়েল। দিনে ২–৩ টেবিল চামচ বা ৩০–৪৫ মিলির বেশি তেল খাবেন না৷