লাইফস্টাইল ডেস্ক : ডায়াবেটিসকে সর্বগ্রাসী রোগ বলা হয়ে থাকে। জীবনপদ্ধতির বদল, কায়িক শ্রমে অনীহা, স্থূলতা, এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী। ডায়াবেটিস রোগীদের রুটিনমাফিক জীবন যাপন করতে হয়। নিয়মিত হাঁটাহাটি করতে হয়, ব্যায়াম করতে হয়। নিয়ন্ত্রিত খাবার খেতে হয়। বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর এক তৃতীয়াংশ আছে এইরোগের/জটিলতার ঝুঁকিতে।

বর্তমানে বিশ্বব্যাপী এই রোগের আধিক্য সবচেয়ে বেশি। ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা। এটি তখনই ঘটে যখন অগ্ন্যাশয় পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না বা যখন শরীর কার্যকরভাবে উৎপাদিত ইনসুলিন ব্যবহার করতে পারে না।

ডায়াবেটিস : নাস্তার আগে রক্তে গ্লুকোজ ৭ মিমোল/লি (১২৬ মি. গ্রাম) বা তার বেশি হলে সেটি ডায়াবেটিস।

খাওয়ার পর রক্তে গ্লুকোজ ১১.১ মিমোল/লি (২০০ মিগ্রাম) সেটি ডায়াবেটিস।

প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিস (জিডিএম) : নাস্তার আগে ৫.১ মিমোল/ (৯২ মিগ্রাম)লি, খাওয়ার পর ৭ মিমোল/১২৬ মিগ্রাম/লিয়ের বেশি। 80% pregnancy diabetic ২০ বছরে ডায়াবেটিস হয়। প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিস আসলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস। তাই সব প্রেগনেন্সি ডায়াবেটিকের উচিত follwo up এ থাকা। স্বাভাবিক হয়ে গেলেও তাই বাচ্চা হওয়ার ছয় সপ্তাহ পর গ্লুকোজ খেয়ে টেস্ট করা উচিত, দরকার হলে পরবর্তীকালেও।

স্বাভাবিক : নাস্তার আগে রক্তে গ্লুকোজ ৫.৬ মিমোল/লি (১০০ মি. গ্রাম) পর্যন্ত।

স্বাভাবিক : খাওয়ার পরে গ্লুকোজ ৭.৮ মিমোল/লি (১৪০ মিগ্রাম)

প্রিডায়াবেটিস : খাওয়ার পর গ্লুকোজ ৭.৯ মিমোল/লি (১৪১ মিগ্রাম) থেকে ১৯৯ মিগ্রাম (১১.০ মিমোল)/লি

প্রিডায়াবেটিস : নাস্তার আগে গ্লুকোজ ৫.৭ মিমোল/লি (১০১ মিগ্রাম) থেকে ১২৫ মি. গ্রাম (৬.৯ মিমোল)/লি

প্রিডায়াবেটিসদের ডায়াবেটিস হওয়ার আশংকা স্বাভাবিক লোকের চেয়ে তিনগুণ। প্রিডায়াবেটিসদের জটিলতাগুলো ডায়াবেটিস রোগীর মতোই। এ১সি ৬.৫ এর বেশি।

ঠিকমতো টেস্ট করা থাকলে যে কোনো একটা রিপোর্টই (কাট পয়েন্ট) ডায়াগনোসিস নিশ্চিত করবে।

টাইপ ১, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, প্রিডায়াবেটিস ও গর্ভকালীন ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন ধরনের ডায়াবেটিস শরীরকে প্রভাবিত করতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রভাব পড়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে।

ঠিক একইভাবে ডায়াবেটিস হলে পায়েও বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস পায়ে দুই ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে যেমন- ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি ও পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজ।

ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথির কারণে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস স্নায়ুর ক্ষতি করে। অন্যদিকে পেরিফেরাল ভাস্কুলার ডিজিজও রক্তের প্রবাহকে প্রভাবিত করে। ফলে পায়ে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। জেনে নিন সেসব কী কী:

★ ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি হলো এক ধরনের স্নায়ুর ক্ষতি যা ডায়াবেটিস রোগীদের হতে পারে। মায়ো ক্লিনিকের মতে, ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি পায়ের স্নায়ুগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ফলে পায়ে ও হাতে ব্যথা কিংবা অসাড়তা বোধ হতে পারে। এমনকি এটি পাচনতন্ত্র, মূত্রনালি, রক্তনালি ও হৃৎপিণ্ডের সমস্যারও সৃষ্টি করতে পারে।

★ পায়ের আলসার ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। ডায়াবেটিক ফুট আলসার হলো একটি খোলা ক্ষত, যা প্রায় ১৫ শতাংশ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে দেখা যায়। প্রাথমিকভাবে পায়ের তলায় হয় আলসার।

পায়ের আলসারের কারণে ত্বক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তবে ঘা না কমলে এর থেকে পচনের সৃষ্টি হয়ে পা কেটেও ফেলা লাগতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ কারণে প্রথম থেকেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

★ পায়ের তলায় বা আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ঘা হওয়ার সমস্যাকে অ্যাথলেটস ফুট বলা হয়। ডায়াবেটিস হলে এ সমস্যার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। এর অন্যতম কারণ হলো ছত্রাক সংক্রমণ। যা পরে চুলকানি, লালভাব ও পায়ের গুরুতর ক্ষতের কারণ হতে পারে।

★ ডায়াবেটিসের কারণেও কর্নস বা কলাসের ঝুঁকি বাড়তে পারে। কর্নস পায়ের অস্থির অংশের কাছে বা পায়ের আঙ্গুলের মাঝখানে শক্ত অবস্থায় বেড়ে ওঠে। আর কলাস হলো পায়ের নীচের অংশে শক্ত ত্বকের গঠন, ওয়েবএমডি অনুসারে।

ক্যালস সাধারণত খারাপ ফিটিং জুতা বা ত্বকের সমস্যার কারণে হয়। আর কর্নস জুতার চাপের ফলাফল যা আপনার পায়ের আঙুলের সঙ্গে আঙুলের ঘর্ষণে সৃষ্টি হয়।

★ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওনিকোমাইকোসিস নামক ছত্রাক সংক্রমণের ঝুঁকিও বেশি থাকে, যা সাধারণত পায়ের নখকে প্রভাবিত করে। এটি বিবর্ণ (হলুদ-বাদামি বা অস্বচ্ছ), পুরু ও ভঙ্গুর নখের দিকে পরিচালিত করে।

★ পায়ে গ্যাংগ্রিনও দেখা দিতে পায়ে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে। ডায়াবেটিস রক্তনালিগুলোকে প্রভাবিত করে। ফলে হাত কিংবা পায়ের আঙুলে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়, যা পরে গ্যাংগ্রিনের কারণ হতে পারে।

রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে ও টিস্যু মারা গেলে গ্যাংগ্রিন হয়। পায়ে গ্যাংগ্রিন দেখা দিলে তা কেটে ফেলতেও হতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে।

★ ডায়াবেটিসের কারণে স্নায়ুর ক্ষতি হয়, ফলে পায়ের পেশিগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। এ কারণে পায়ের বিকৃতি ঘটতে পারে।