স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ডেস্ক : ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার মাধ্যমে সুস্থ ও সুন্দর দেহ-মন অর্জন করা এবং বজায় রাখার তাগিদ এখন সারা বিশ্বে সবার মধ্যেই। হৃদ্‌রোগ, ডায়বেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থেকে শুরু করে শরীরের ব্যথাবেদনা, হাড়ক্ষয়, বাতের সমস্যা—এসব রোগের প্রতিরোধ ও চিকিৎসায়ও ওজন কমানো ও নির্দিষ্ট মাত্রায় রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা। এমনকি করোনা মহামারিতেও দেখা যাচ্ছে মরবিড অবেসিটি বা বিপজ্জনক রকমের বেশি ওজন এই রোগের ভয়াবহতা ও প্রকারান্তরে মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুণ।বিজ্ঞাপন

ওজন নিয়ন্ত্রণে লো কার্ব ডায়েট ও কলিফ্লাওয়ার রাইস

নিজের শরীর স্লিম আর ফিট রাখতে যুগে যুগে বহু বিশেষায়িত ডায়েট বা নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাসের দ্বারস্থ হয়েছে মানুষ। এরই ধারাবাহিকতায় কম শর্করা গ্রহণের মূলমন্ত্র নিয়ে বহু ধরনের লো কার্ব ডায়েট অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ করে অনেকেই দ্রুত সুফল পেয়েছে। এসব লো কার্ব ডায়েটের মধ্যে আছে একসময়ে সাড়া জাগানো এটকিন্স ডায়েট, প্যালেও ডায়েট আর হাল আমলে সবার মুখে মুখে ফেরা বিখ্যাত কিটোজেনিক ডায়েট বা কিটো ডায়েট। কম শর্করাযুক্ত খাবারের সমন্বয়ে করা লো কার্ব ডায়েট মানে কিন্তু না খেয়ে থাকা নয়। এ ক্ষেত্রে শর্করাজাতীয় খাবারের বিকল্প বিভিন্ন খাবার খেয়ে অত্যন্ত কার্যকরভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। তবে আমাদের মতো ভেতো বাঙালিসহ আরও যেসব দেশের মানুষ ভাত না খেয়ে থাকতে পারে না, তাদের জন্য ভাতের এক চমৎকার বিকল্প কলিফ্লাওয়ার রাইস বা ফুলকপি ভাত।

কলিফ্লাওয়ার রাইস কী
গোটা ফুলকপি কুরিয়ে বা গ্রেট করে দানাদার চালের মতো তৈরি করে তা ভাতের বিকল্প কলিফ্লাওয়ার রাইস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। সবজি কুরানোর যন্ত্রে হাতে গ্রেট করে অথবা ব্লেন্ডারে হালকাভাবে ফুলকপির ফুলগুলো ব্লেন্ড করে নিলেই হয়ে গেল ফুলকপির চাল। এবার এই চাল দিয়ে অনায়াসে রান্না করা যায় ফ্রাইড রাইস, পোলাও, বিরিয়ানি। নিজস্ব খুব কড়া কোনো স্বাদ, গন্ধ, বর্ণ না থাকায় চাল দিয়ে তৈরি করতে হয়—এমন যেকোনো রেসিপিতেই সুন্দরভাবে খাপ খেয়ে যায় কলিফ্লাওয়ার রাইস।আরও পড়ুনচাল ছাড়াই ফ্রায়েড রাইস

কলিফ্লাওয়ার রাইসের ইতিকথা
সেই ১৮৬৩ সালে লো কার্ব বা কম শর্করার ডায়েটের ওপরে বই লিখে ওজন সচেতন মানুষের মনে সাড়া জাগিয়েছিলেন ব্রিটিশ এক ফিটনেস এক্সপার্ট। এরপর ২০০২ সালের দিকে ব্যায়ামবিজ্ঞানী লরেইন কোর্ডেনের ‘প্যালেও ডায়েট’ বইয়ে প্রথম চালের ভাতের বদলে কলিফ্লাওয়ার রাইস খাওয়ার ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়া হয়। আর এখন তো কলিফ্লাওয়ার রাইস সারা বিশ্বেই সমাদৃত।বিজ্ঞাপন

কলিফ্লাওয়ার রাইস বনাম চালের ভাত
দানাদার ও সাদা ফুলকপি ভাত দেখতে ও খেতে কিছুটা হলেও ভাতের আমেজ দেয় আমাদের। অথচ এক কাপে ভাতের তুলনায় প্রায় ৮০ ভাগ কম ক্যালরি থাকে ফুলকপির ভাতে। নেট শর্করার পরিমাণও ভাতের তুলনায় প্রায় ১৮ ভাগের ১ ভাগ। এ ছাড়া ফুলকপির পুষ্টিগুণের ব্যাপারটা তো আছেই!

কলিফ্লাওয়ার রাইসের উপকারিতা
কলিফ্লাওয়ার রাইসের উপাদান হচ্ছে গোটা তাজা ফুলকপি। শীতকালের এই ভরা মৌসুম মানেই ফুলকপির বড়া, ফুলকপির তরকারি, ফুলকপির শিঙাড়া। কিন্তু এই অভিনব কলিফ্লাওয়ার রাইস খেলে কম শর্করা খাওয়ার উপকারের পাশাপাশি ফুলকপির অনন্য পুষ্টিগুণ পাব বাড়তি পাওনা হিসেবে। ফুলকপির গুণের কথা তো বলে শেষই করা যায় না। তাও দেখে নেওয়া যাক এর প্রধান উপকারিতা আর উপযোগিতাগুলো।

পুষ্টিকর সবজি ফুলকপিতে আছে অপ্রত্যাশিত পরিমাণে ভিটামিন সি। তবে উচ্চতাপে নষ্ট হয়ে যায় বলে একমাত্র কাঁচা কলিফ্লাওয়ার রাইসেই যথার্থ ভিটামিন সি পাওয়া যায়। তবে পানি না দিয়ে অল্প তাপে তাড়াতাড়ি নেড়েচেড়ে কোরানো ফুলকপি স্টারফ্রাই করলেও কিছুটা অক্ষুণ্ন থাকে ভিটামিন সি। এ ছাড়া এতে আছে যথেষ্ট ভিটামিন বি৬, ভিটামিন কে, ম্যাংগানিজ ও পটাশিয়াম। তবে কোলিন নামের আধুনিক কালে আবিষ্কৃত এক বিশেষ পুষ্টি উপাদান উদ্ভিজ্জ উৎসের মধ্যে একমাত্র ফুলকপিতেই পাওয়া যায় খুবই ভালো পরিমাণে। গবেষণায় দেখা গেছে, এই কোলিন আমাদের হার্ট, লিভার, মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, ক্যানসার গবেষণায় উঠে এসেছে, ব্রকলি ও ফুলকপির বিশেষ অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট ক্যানসারের জন্য দায়ী কারসিনোজেনের বিরুদ্ধে ভালো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম।

আমাদের বাঙালি স্বাদগ্রন্থির পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি আর গলা অবধি উদরপূর্তির অভ্যাসের নিরিখে দেখতে গেলে ফুলকপি ভাতের ভবিষ্যৎ আপাতদৃষ্টিতে খুব উজ্জ্বল মনে না হলেও বাস্তবতা কিন্তু অন্য কথা বলে। কলিফ্লাওয়ার রাইসের ফাইবার আর পানির উপস্থিতির কারণে ভাতের বদলে খেলে কিছুটা হলেও পেট ভরে আর তৃপ্তি মেলে। আর বর্তমান সময়ে যখন অতিরিক্ত ওজনের ফলে বিভিন্ন মারাত্মক রোগ বেড়েই চলছে হু হু করে আমাদের দেশে, তখন শর্করার বিকল্প হিসেবে এই ফুলকপি ভাতের গুরুত্ব ও আবেদন স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের কাছে অবশ্যই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলোয় এর জনপ্রিয়তার কারণেও আমরা ধীরে ধীরে এই কিটোজেনিক লো কার্ব রাইসের দিকে আগ্রহী হচ্ছি। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে আমাদের সমাজের ফিটনেস–সচেতন মানুষের প্লেটেও ঘরে ঘরে নিত্যদিন শোভা পাবে ফুলকপি চালের পোলাও অথবা ফ্রাইড কলিফ্লাওয়ার রাইস।

সুত্র — সংগ্রহীত।