সারাবিশ্ব | তারিখঃ জুন ২৪, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 3110 বার
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে রুবলের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ। ডলারের বিপরীতে ক্রমাগত মূল্যমান বাড়তে থাকায় এ বছরের সবচেয়ে শক্তিশালী মুদ্রার স্থান দখল করে নিয়েছে রুশ মুদ্রা রুবল। বিশ্বের সেরা-কার্যকারি মুদ্রায় পরিণত হয়েছে রাশিয়ার মুদ্রা। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিবিএস নিউজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এ তথ্য।
গেলো ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসনের জবাব হিসেবে রাশিয়ার ওপর নজিরবিহীন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তার অন্যান্য পশ্চিমামিত্র দেশগুলো। এরপর টানা তিনমাস রুবলের দর পতন হতে থাকলেও হঠাৎই তা আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে।
সিবিএসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ডলারের বিপরীতে ৪০ শতাংশ বেড়েছে রুবলের দাম। নিউয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের জুন থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত, গত ৭ বছরে রুবলের মূল্য সর্বোচ্চে পৌঁছেছে।
এদিকে, নিষেধাজ্ঞায় কবলিত রুশ মুদ্রার এতদ্রুত ঘুরে দাঁড়ানোর ঘটনাটিকে হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের পুঁজি গঠন ও বৃদ্ধি বিষয়ক অধ্যাপক জেফরি ফ্র্যাঙ্কেল ‘একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
মূলত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের মুখোমুখি কোনো দেশের মুদ্রার মান এভাবে বাড়তে দেখা যায়নি বিশ্বের ইতিহাসে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের সমস্যার সম্মুখীন দেশ থেকে বিনিয়োগকারীরা চলে যাবেন এবং পুঁজি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে- এটিই স্বাভাবিক; এর ফলে সে দেশের মুদ্রার দামও কমে যাবে। কিন্তু রাশিয়ার ক্ষেত্রে অনেকটা উল্টো ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে।
অর্থ ও পুঁজি দেশে ধরে রাখার নানান পদক্ষেপ ‘অস্বাভাবিকভাবে’ কাজ করছে পুতিনের দেশে। ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রধান জ্বালানি রপ্তানিকারক রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত অনেকটা হিতেবিপরীত হিসেবে কাজ করছে ইউরোপের নিজের ওপরেই। অস্থীতিশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রভাবে বেড়ে গেছে জ্বালানির দাম। আবার পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার জবাবে ডলারের বিপরীতে রুবলে জ্বালানির মূল্য পরিশোধের আল্টিমেটাম দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফলে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে খুব একটা লাভবান হতে পারেনি পশ্চিম, বরং বিপরীতে বাড়ছে রাশিয়ার অর্থনীতি।
রুবল শক্তিশালী হওয়ার অর্থ হলো, রাশিয়া ওপর দেওয়া পশ্চিমাদের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কাজ করছে না। তবে মার্কিন গবেষকরা বলছেন, ডলারের বিপরীতে রুবলের এই সুরক্ষাব্যবস্থা কতদিন স্থায়ী হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়।
ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ইউক্রেন আক্রমণের পর ডলারের বিপরীতে রুবল সর্বকালের সবচেয়ে দুর্বল মুদ্রায় পরিণত হয়েছিল। ওই পরিস্থিতিতে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতি থেকে রুবেলের বহিঃপ্রবাহ বন্ধ করতে সুদের হার দ্বিগুণেরও বেশি, ২০ শতাংশে উন্নীত করে। এরপর কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা হয় এবং সুদহার কমিয়ে ইউক্রেন আক্রমণের আগের পর্যায়ে, অর্থাৎ আবারও সাড়ে ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এরই মধ্যে বিশ্বের মুদ্রা বাজারে স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরতে শুরু করে রুবল। মুদ্রা ক্রমাগত শক্তিশালী হতে থাকায় রাশিয়ার মুদ্রাস্ফীতিও এখন অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরপরেও রাশিয়ার বাজেটের ওপর চাপ থাকবে। কারণ দেশটির আয় জ্বালানি রপ্তানির ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। আর জ্বালানি বিক্রির বিষয়টি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ডলারের ওপর নির্ভর করে।