সঞ্জীব বর্মন, ডয়চে ভেলে: কট্টর হিন্দুত্ববাদী অ্যাজেন্ডার কালো ছায়া ও রাশিয়ার প্রতি নরম মনোভাব সত্ত্বেও পশ্চিমা বিশ্ব আপাতত ভারতের মোদী সরকারকে কাছে টানার চেষ্টা করছে৷ বার্লিন সফরেও যথেষ্ট খাতির পেলেন মোদী৷

ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অনেক রসায়নের মতো ভারত ও জার্মানির সম্পর্কের উপরও প্রভাব ফেলছে৷ তাই সোমবার বার্লিনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে স্বাগত জানাতে গিয়ে জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস এশিয়া মহাদেশে ভারতের বিশেষ গুরুত্ব তুলে ধরেন৷

এই সফরকে ঘিরে জার্মানির সংবাদমাধ্যমে যথেষ্ট কৌতূহল দেখা গেছে৷ অতীতে দুই দেশের সরকার প্রধান ও মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের মধ্যে নিয়মিত বাৎসরিক বৈঠক এমন গুরুত্ব পায় নি৷

গণতন্ত্র হওয়া সত্ত্বেও ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘন, ধর্মীয় স্বাধীনতা, সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়নের মতো বর্তমান প্রবণতা হিন্দুত্ববাদী মোদীর সরকারের উপর কালো ছায়া ফেলেছে৷ জার্মানিতেও সেই বদনাম অজানা নয়৷ ইউক্রেন সংকটের ক্ষেত্রে এখনো রাশিয়ার আচরণের সরাসরি নিন্দা করে নি নতুন দিল্লি৷ পশ্চিমা বিশ্বের মতো মস্কোর উপর নিষেধাজ্ঞা চাপানো বা বাণিজ্যিক সম্পর্ক কমানোর পথে যায় নি ভারত৷ তা সত্ত্বেও বার্লিনে অন্তত প্রকাশ্যে মোদীকে কোনো বিড়ম্বনায় পড়তে হয় নি৷ বরাবরের মতো সংবাদ সম্মেলন এড়িয়ে চলায় তাঁকে কোনো অপ্রিয় প্রশ্নের মুখেও পড়তে হয় নি৷

জার্মানিসহ পশ্চিমা বিশ্ব বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের নানা বিতর্কিত অবস্থান সত্ত্বেও সে দেশকে বরং কাছে টানার চেষ্টা করছে৷ চ্যান্সেলর শলৎস জাপানকে তার এশিয়া সফরের প্রথম গন্তব্য হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন৷ বার্লিনে এশিয়ার প্রথম সরকার প্রধান হিসেবে মোদীকে সাড়ম্বরে স্বাগত জানালেন তিনি৷ অথচ চীনের সঙ্গে জার্মানির নতুন সরকার এখনো উচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ শুরু করে নি৷ শুধু চীনের করোনা সংকটকে এমন শীতল মনোভাবের জন্য দায়ী করা যাচ্ছে না৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নও চীনের বদলে ভারতকে বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে৷

আসলে ইউক্রেন সংকট অনেক হিসাবনিকাশ গোলমাল করে দিয়েছে৷ বিশ্বকে আর শুধু স্বৈরাচারী ও গণতান্ত্রিক শিবিরে ভাগ করা যাচ্ছে না৷ তাই পুটিনের রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি কমাতে বা বন্ধ করতে সৌদি আরব ও কাতারের মতো দেশের শরণাপন্ন হতে হচ্ছে জার্মানিকে৷ ভারতকেও ভবিষ্যতে ‘গ্রিন হাইড্রোজেন’ জ্বালানির উৎস হিসেবে দেখছে জার্মানি৷ ১৪০ কোটি জনসংখ্যার এই দেশে বর্তমান রেকর্ড তাপপ্রবাহ জলবায়ু বিপর্যয়ের অশনি সংকেত নিয়ে আসছে৷ ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা সামলাতে ভারতের আরও সক্রিয় ভূমিকা দেখতে চায় জার্মানি৷ দক্ষ কর্মীর ঘাটতি মেটাতেও ভারতের মানবসম্পদ বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে৷

প্রশ্ন হলো, এমন সুবিধাজনক অবস্থার কতটা ফায়দা তুলতে পারবে মোদী সরকার৷ শ্রীলঙ্কার মতো সংকট সৃষ্টি না হলেও বিপুল রাষ্ট্রীয় ঋণ, মূল্যস্ফীতি ও অর্থনীতির উপর চাপ সামলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে সরকারকে৷ আরও বিদেশি বিনিয়োগ ও সহযোগিতা সেই ভার কিছুটা লাঘব করতে পারে৷ তবে রাশিয়ার প্রশ্নে মোদীর সরকার তার সুবিধাবাদী অবস্থান কতকাল বজায় রাখতে পারবে, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে৷ ইউক্রেনের ঐক্য ও অখণ্ডতা সম্পর্কে নীরব থাকলে চীনের আগ্রাসনের মুখে কতটা আন্তর্জাতিক সংহতি আশা করতে পারে ভারত?