​​​​​​​নিজস্ব প্রতিবেদক : সিটি করপোরেশনের অনুমতি না থাকলেও বর্ষাকালে ওয়াসা ও তিতাস গোপনে রাস্তা খুঁড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন দক্ষিণ ঢাকার মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি অভিযোগ করেন, অনুমতি ছাড়াই চুরি করে এই কাজটা করে ওয়াসা ও তিতাস, আর এভাবেই সড়কগুলো ধ্বংস করা হচ্ছে।

শনিবার রাজধানীর বাংলামোটরে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সে ঢাকা ইউটিলিটি রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডুরা) উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে এ মন্তব্য করেন মেয়র তাপস।

ওয়াসার কাছ থেকে দুই সিটি করপোরেশন রাজধানীর খালগুলোর দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার চার বছর পরও জলাবদ্ধতা পরিস্থিতির তেমন উন্নতি হয়নি। সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায় পথ-ঘাট। সেমিনারে উঠে আসে ঢাকার জলাবদ্ধতা নিরসন প্রসঙ্গ। এতে খাল পুনরুদ্ধারে রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও আইন প্রয়োগের ওপর জোর দেন আলোচকেরা।

বর্ষাকালে রাস্তা খোঁড়ার জন্য কোনো সংস্থাকে অনুমতি না দেওয়ার কথা আগেই জানিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে অনুমতি না পেয়ে ওয়াসা ও তিতাস গোপনে রাস্তা খুঁড়ছে বলে অভিযোগ মেয়র তাপসের।

শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, ‘অনুমতি না নিয়ে তারা পানির লাইন, গ্যাসের লাইন বসানোর অযুহাতে রাস্তা খনন করছে। বাধা দিলে তখন তারা চুরি করে এই কাজটা করে। তারা এভাবেই সড়কগুলো ধ্বংস করে।’

দুঃখপ্রকাশ করে মেয়র বলেন, ‘২০২৩ সালে যাত্রাবাড়ী সড়কটি ডিএসসিসির নিজস্ব অর্থায়নে ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঠিক করা হয়েছিল। অথচ তিন দিন আগে ওয়াসা কিছু না জানিয়ে বিনা অনুমতিতে আরসিসির সেই রাস্তা খনন করেছে, যা খুবই দুঃখজনক। টেকসই সমাধানে যাওয়া যাচ্ছে না এমন অনেক কারণে।’

তাপস বলেন, ‘একটা শহরে ১৪টার মতো সরকারের সেবা সংস্থা কাজ করে। সিটি করপোরেশন শুধু একাই সরকারের একটা সংস্থা নয়। ওয়াসা বলে তারা স্বাধীন, রাজউক বলে তারাও স্বাধীন। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হলো- রাজউক স্বাধীন সংস্থা হলেও সিটি করপোরেশনের নগরায়ণের পরিকল্পনা দেয় রাজউক। অথচ দুই সংস্থার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।’ এটি সাংঘর্ষিক নীতি বলে মনে করেন তিনি।

দখলকৃত খাল উদ্ধার করা হবে জানিয়ে মেয়র তাপস বলেন, ‘শ্যামপুর খাল ১০০ ফুট থাকলেও বাস্তবে রয়েছে আট ফুটের একটি নালা। কঠোরতার সঙ্গে আগামী মাস থেকে দক্ষিণের জিরানী, মান্ডা, শ্যামপুর ও কালুনগরের চারটি খাল দখলমুক্ত করা হবে, যদিও সেখানে অনেক প্রভাব ও চাপ রয়েছে। এমন অনেক প্রভাবশালী রয়েছে যারা খাল দখলমুক্ত করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে।’

এ সময় দখলকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এখন সময় এসেছে, দখলের পরিবর্তে ত্যাগ করতে হবে। যারা এতদিন দখল করেছেন, তারা এখন ত্যাগ করেন। আগামী প্রজন্মের জন্যও হলেও ত্যাগ করেন। তাদের জন্য সুন্দর একটা ঢাকা শহর আমরা বির্নিমাণ করতে চাই।’

সেমিনারে নগর পরিকল্পনাবিদ আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘শুধু ৩-৪-৫ লাখ টাকা জরিমানা নয়, আইনে যে কারাদণ্ড রয়েছে তাও করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রকল্পের সময় খালসহ বিভিন্ন জলাশয় ভরাট করা হয়। এরপর আবার ড্রেনেজ সিস্টেম চালু করা হয়। এগুলো করার সময়ই আসলে এসব খাল রক্ষায় উদ্যোগ নিতে হবে।’

জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, ‘খাল ভরাট করে যারা বাড়ি বানিয়েছেন, তাদের তালিকাটা দেখেন। সেখানে বেশ প্রভাবশালী রয়েছেন। সুতরাং এ কাজে রাজনৈতিক সদিচ্ছার খুব দরকার।’