নিজস্ব প্রতিবেদক : শিশুশ্রম নিষিদ্ধ থাকার পরও বর্তমানে দেশের ৩৫ লাখ ৪০ হাজার শিশুশ্রমিক রয়েছে। আর এ শিশুদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ১০ লাখ ৭০ হাজার।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় খাতভিত্তিক প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শিশুশ্রম জরিপ ২০২৩ এর এই প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইন্টারন্যাশনাল লেবার অর্গানাইজেশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুউমো পোওটেনেন, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব ড. শাহনাজ আরেফিন ও বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

জরিপের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গ্রামীণ এলাকায় ২৭ লাখ ৩০ হাজার শিশুশ্রমিক হিসেবে কাজ করে। শহর এলাকায় এ সংখ্যা ৮ লাখ ১০ হাজার। ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও শহরের তুলনায় গ্রামীণ এলাকায় বেশি শিশুকে কাজ করতে দেখা যায়।

প্রতিবেদনে ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশুদের জনসংখ্যার পরিসংখ্যান বিষয়ক তথ্য রয়েছে। এই বয়সের মোট শিশু ৩ কোটি ৯ লাখ ৯৬ হাজার। এদের ৫৫ দশমিক ২ শতাংশের বয়স ৫ থেকে ১১ বছর। দেশে ২ কোটি ৭ লাখ ৬৩ হাজার খানায় ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সি শ্রমজীবী শিশু রয়েছে। এ বয়সিদের স্কুলে উপস্থিতির হার ৩৪ দশমিক ৮১ শতাংশ।

বিবিএস জানায়, দেশে শিশুশ্রমিকের ৮২ শতাংশ তাদের নিজস্ব বাড়িতে বসবাস করে। এসব শিশুর ৩৩ দশমিক ৩ শতাংশ উৎপাদনে এবং কৃষি, বনায়ন এবং মাছ ধরায় ২৩ দশমিক ৬ শতাংশ নিযুক্ত রয়েছে। সামগ্রিকভাবে শিশু শ্রমিক কর্মচারী হিসেবে শ্রেণিভুক্ত ৬৮ দশমিক ৮ শতাংশ এবং স্কুলে যায় ৫২ দশমিক ২ শতাংশ। শিশু শ্রমিকদের গড় মাসিক আয় ৬ হাজার ৬৭৫ টাকা। এছাড়াও ২০ লাখ ১০ হাজার শিশু গৃহকর্মী রয়েছে, যাদের পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। আট লাখ শিশু রয়েছে যারা পারিশ্রমিক পায়। উভয় ক্ষেত্রেই পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। তিনটি প্রাথমিক সেক্টর কৃষি, শিল্প এবং পরিষেবা শিশুশ্রমিক নিয়োগ করে।

জরিপে বিবিএস দাবি করছে, আগামী ২০২৫ সালের মধ্য শিশুশ্রম নির্মূল করা হবে। বর্তমানে ২০২৪ সাল চলছে। যা এখন প্রস্তুতিমূলক পর্যায়ে পরিচালিত হচ্ছে।

জাতীয় শিশু জরিপটি এক হাজার ২৮৪টি প্রাথমিক স্যাম্পলিং ইউনিট (পিএসইউ) থেকে ৩০ হাজার ৮১৬টি খানা (১২টি নন-রেসপন্স খানাসহ) নির্বাচন করা হয়। পরবর্তী সময়ে ৬৪টি জেলা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ জরিপের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম চলে ২০২২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৫ মে পর্যন্ত।

তাদের মধ্যে ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ খাতে কাজ করে ৩৮ হাজার শিশু। বিবিএস বলছে, শুঁটকি মাছ উৎপাদনে ৮৯৮, চামড়ার তৈরি পাদুকা তৈরিতে ৫,২৮১, ওয়েল্ডিং বা গ্যাস বার্নার মেকানিকের কাজে ৪,০৯৯, অটোমোবাইল ওয়ার্কশপে ২৪,৯২৩ এবং অনানুষ্ঠানিক এবং স্থানীয় টেইলারিং বা পোশাক খাতে ২,৮০৫ জন শিশু কাজ করে।

পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যের ওপর ভিত্তি করে দেশের সমস্যার সমাধান করা হবে বলে জানিয়েছেন আইএলওর কান্ট্রি ডিরেক্টর টমো পউটিয়াইনেন বলেন, ‘এই সব তথ্যের মাধ্যমেই দেশের সমস্যাগুলোকে সমাধান করতে হবে। আমরা বাংলাদেশে শিশুশ্রম নির্মূলে কাজ করে যাচ্ছি। এই কাজে আমরা সবসময় বাংলাদেশের সাথে আছি। এই সমস্যা সমাধানে আইন প্রণয়ন করা হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমি মনে করি।’

এদিকে সভায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার জানান, ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা হবে।