নিজস্ব প্রতিবেদক : নাপিত আনোয়ার, শনপাপড়ি বিক্রেতা হকার হানিফ মিলে চক্র গড়ে তুলে। তারা রাজধানীর পুরান ঢাকায় সোশ্যাল মার্কেটিং কোম্পানি (এসএমসি)’র নাম অনুকরণ করে এসএনসি নামে চিনি ও লবন দিয়ে তৈরি করতেন নকল খাওয়ার স্যালাইন। দেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে শ্রমজীবী মানুষকে টার্গেট করে দেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে ছড়িয়ে দিয়েছে এই চক্র। তীব্র গরমে এই ধরনের নকল স্যালাইন পানে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যাসহ মৃত্যু ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। ফলে সাধারণ মানুষ প্রতারণার শিকার হচ্ছিল।

নকল স্যালাইনসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি চক্রের ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সাইবার এন্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ উত্তর। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন- আনোয়ার হোসেন (৩৮), শাহ নেওয়াজ খান (৩৩), মোরশেদুল ইসলাম (৫১), সবুজ মিয়া (২৩), আরিফ (২৩) ও হানিফ মিয়া (৩০)। অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে নকল স্যালাইনসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরির মেশিন, স্যালাইন, নকল কোমল পানীয়, নকল ড্রিংকো উদ্ধার করা হয়।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

ডিএমপির এই অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, নকল পণ্য তৈরির চক্রটি একদিকে পুরান ঢাকায় বিএসটিআইয়ের অনুমোদন ছাড়া স্যালাইনের নকল প্যাকেট বানাচ্ছে, অপর দিকে লবণ চিনি দিয়ে স্যালাইন বানাচ্ছে। কোটি কোটি নকল স্যালাইন তৈরি করে তারা রাজধানীসহ সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। বর্তমানে ধান কাটার সিজন, আরেক দিকে নির্বাচন। ফলে বাজারে প্রচুর স্যালাইনের চাহিদা রয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে জড়িত উৎপাদনকারী থেকে শুরু করে সবাইকে গ্রেপ্তার করেছি। তারা নকল স্যালাইনের পাশাপাশি ভেজাল কোমল পানীয়, ম্যাংগো জুস করত। নামীদামী ব্র‍্যান্ডের মোড়কে কেমিক্যাল দিয়ে শিশু খাদ্য, কোমল পানীয়, ম্যাংগো জুস তৈরি করত।

গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, চক্রের সদস্যরা সবাই বিভিন্ন ব্যবসা করতো। আনোয়ার হোসেন এক সময় সেলুন ব্যবসা করত, হানিফ মিয়া বিক্রি করতো সনপাপড়ি। তারা এখন নকল টেস্ট স্যালাইনের কারখানা মালিক। তারা পুরান ঢাকার কদমতলি থানা এলাকায় ভাড়া বাসায় এসব নকল পন্য তৈরি করতো। এটির মূলহোতা হলো আনোয়ার হোসেন। কোন তারিখ ছাড়াই বিএসটিআই এর অনুমোদন ছাড়া তৈরি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিশন দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে অনলাইনে ফেইসবুকে বিজ্ঞাপন দিয়ে ডিলার নিয়োগ দিত। শিশু খাদ্যে সোডিয়াম স্যাকারিন আর্টিফিশিয়াল ফ্লেভার, মানহীন কেমিক্যাল দিয়ে এসব ভেজাল খাদ্য তৈরি করত। এসব কাজে তাকে সহায়তা করত শাহ নেওয়াজ ও মোর্শেদ। শাহনেওয়াজ প্রাণ কোম্পানির ডিস্ট্রিবিউটর। প্রাণ কোম্পানির পাশাপাশি নকল শিশু খাদ্য বিক্রি করত। এজন্য বড় আকারের কমিশন পেতো আনোয়ার।

হারুন আরও বলেন, কেমিক্যাল ও আর্টিফিশিয়াল ফ্লেভার ব্যবহার করে ভেজাল খাদ্য তৈরি করছে। এসব খেয়ে লোকজন অসুস্থ হচ্ছে। তীব্র তাপদাহে ও পানিশূন্যতা পূরণের জন্য এসব স্যালাইন মানুষ পান করে। নকল স্যালাইন খাওয়ার পর মানুষ শরীরের নানা ধরনের জটিলতা দেখা দিতো। এমন কি ব্রেন, হার্ট ও কিডনিতেও নানা সমস্য দেখা দিত।

কোনো ধরনের অনুমোদ ছাড়াই নিজেরা কারখানা খুলে ভেজাল খাদ্য উৎপাদন করত।

ডিলারদের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমিশন দেওয়ার পরেও তাদের অনেক টাকা লাভ হতো। আসলে তাদের তেমন কোনো উৎপাদন খরচ নেই। কোনো ভ্যাট দিতে হয় না। এ চক্রের সঙ্গে জড়িত চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।