এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি ও অসহযোগের ডাক
নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ নামে দুটি পৃথক বিভাগ করে জারি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সংস্থাটির চেয়ারম্যানের অপসারণ ও অসহযোগ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
আজ বুধবার (২১ মে) দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের রাজস্ব ভবনের নিচে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ডাক দেয় এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
অতিরিক্ত কর কমিশনার হাসিনা আক্তার, উপ-কর কমিশনার শাহাদাত জামিল শাওন ও মোস্তফিজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন সংবাদ সম্মেলনে।
গতকাল মঙ্গলবার অর্থ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। কিন্তু সেটি ফলপ্রসূ হয়নি। আজকের সংবাদ সম্মেলনে ওই সভার বিস্তারিত লিখিত বক্তব্যে তুলে ধরা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে ঐক্য পরিষদের ১৩ জনের প্রতিনিধিদলের মধ্যে মাত্র দুজন বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ পান। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে বলা হয়, এনবিআরের সব স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সংস্কারের পক্ষে এবং তারা চান এনবিআরকে আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পূর্ণাঙ্গ, টেকসই ও কার্যকরভাবে সংস্কার করা হোক। এনবিআরকে অক্ষুণ্ন রেখে আরও শক্তিশালী, আধুনিক ও জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করাই হবে দেশের জন্য কল্যাণকর।
সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদ জানায়, গতকালের সভায় রাজস্ব সংস্কার পরামর্শক কমিটির সদস্যরা বলেছেন, তাদের প্রতিবেদনে সংস্কারের যে রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে, তা অধ্যাদেশে প্রতিফলিত হয়নি। তারা রাজস্ব নীতি ও ব্যবস্থাপনা দুটি প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্ব এনবিআরের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই নির্ধারিত হওয়া উচিত- এই বিষয়ে জোরালো অবস্থান জানান।
এক্যপরিষদ জানায়, কিন্তু সভাশেষে অর্থ উপদেষ্টা মিডিয়ায় বলেছেন, দেশের স্বার্থে, ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ও দশের স্বার্থে যে অধ্যাদেশ অনুমোদন হয়েছে তা থাকবে। তবে ঐক্য পরিষদের বিষয়গুলো উপদেষ্টা কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে বিধি বা অন্য কিছু করে অ্যাড্রেস করার চেষ্টা করা হবে। এ বিষয়ে আর কোনো আলোচনা নয় বলে তিনি জানান। আন্দোলন চলবে কি চলবে না সে বিষয়ে কিছু আসে-যায় না বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা।
মিডিয়ায় উপদেষ্টার দেওয়া বক্তব্য তাদের আহত করেছে জানিয়ে ঐক্যপরিষদের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আমরা কিছু কথা বলার সুযোগ চেয়েছিলাম। কিন্তু সুযোগ দেওয়া হয়নি। অথচ সভাটি ‘ফলপ্রসূ’ ছিল বলে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।’
এনবিআরের চেয়ারম্যান সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঠিক তথ্য না দিয়ে প্রকৃত তথ্য আড়াল করেছেন- এমন অভিযোগ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এসব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে তারা অবিলম্বে এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি করেন।
অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আছে- জারিকৃত অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিল করতে হবে, রাজস্ব সংস্কার বিষয়ক পরামর্শক কমিটির সুপারিশ জনসাধারণের জন্য ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। এ ছাড়া এনবিআরের প্রস্তাবিত খসড়া এবং পরামর্শক কমিটির সুপারিশ আলোচনা-পর্যালোচনা করে প্রত্যাশী সংস্থাসমূহ, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সংশ্লিষ্ট সকল অংশীজনের মতামত নিয়ে উপযুক্ত ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে।
পরবর্তী আন্দোলন কর্মসূচি
ঐক্য পরিষদের নেতারা বলেন, আজ বুধবার দুপুরের পর থেকে এনবিআরের চেয়ারম্যানের সঙ্গে লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচি পালন করা হবে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের দাবির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হবে। এদিন এনবিআরের প্রধান কার্যালয়, ঢাকা ও ঢাকার বাইরে স্ব-স্ব দপ্তরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হবে। তবে, রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা এর আওতামুক্ত থাকবে।
আগামী শনি ও রোববার কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশন ব্যতীত ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে। এই দুই দিন কাস্টমস হাউস এবং এলসি স্টেশনে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি চলবে। তবে, রপ্তানি ও আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে।
আগামী সোমবার থেকে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ব্যতীত ট্যাক্স, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সকল দপ্তরে পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতি চলবে।
গত ১২ মে এনবিআর বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ এ দুই ভাগে ভাগ করে একটি অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে গত ১৪ মে থেকে আন্দোলন করে আসছেন তারা।