লাইফ স্টাইল | তারিখঃ ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 3978 বার
এ বি এম কামরুল হাসান :
এক !
পনেরো বছর আগে যখন প্রথমবারের জন্য প্রবাসী হই, তখন এক সিঙ্গাপুর বা ব্রুনাই ডলারে পাওয়া যেত ৪৫ থেকে ৫০ টাকা! ব্রুনাইতে তখন একটি সিঙ্গারা পাওয়া যেত ৫০ সেন্টে! মানে একটি সিঙ্গারার দাম দাঁড়ায় প্রায় ২৫ টাকা ! দেশে তখন একটি সিঙ্গারার দাম দু টাকা! দু একটি দামি রেস্তোরায় দাম বোধ করি পাঁচ টাকা ছিল! দেশের তুলনায় এত দাম দেখে প্রায় ছ’মাস কোন সিঙ্গারা খাইনি! অথচ দেশে থাকতে সিঙ্গারা ছিল অপারেশনের বিরতিতে আমাদের প্রধান খাদ্য! বলাবাহুল্য, এবার দেশে যেয়ে প্যারাসিটামল এর চেয়ে দশগুন বড় আকৃতির একটি সিঙ্গারা খেয়ে এলাম ৫ টাকা দামে! অবশ্য, ব্রুনাইতে এখন একটি সিঙ্গারার দাম ৯০ থেকে ৯৫ টাকা!
দুই !
দেড় সপ্তাহের একটি সংক্ষিপ্ত স্বদেশ সফর শেষে আজ কর্মস্থলে ফিরছি! এখন আমি মধ্য গগনে! সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স এর বিনে পয়সার আকাশ ইন্টারনেট পেয়ে রাত জেগে লিখছি! আজ রাতের ঘটনাটি শাহজালাল বিমান বন্দরের! আমরা কিছু মিষ্টি কিনছি প্রাণের আউট লেট থেকে! আমার স্ত্রী খেয়াল করছে একজন ২৫/৩০ বছরের যুবক ঐ দোকানে পাউরুটির দাম বারবার দেখছে, আবার ফিরে যাচ্ছে! এভাবে কয়েক বার আসা যাওয়া শেষে সে আমাদের পাশে আশ্রয় নিয়েছে বিল দেয়ার জন্য! মনে এখনো দ্বিধা! এয়ার পোর্টে একটি পাউরুটির দাম ৪০ টাকা! আমি যেমন ঢাকা ব্রুনাই এর সিঙ্গারার দামের পার্থক্য বিবেচনায় ছ’মাস সিঙ্গারা খাইনি! সেও হয়ত নিজ গ্রাম আর শাহজালাল এয়ারপোর্টের পাউরুটির দামের পার্থক্য বিবেচনায় দ্বিধান্বিত! আমার স্ত্রী তাঁর পাউরুটির দাম দিতে চাওয়ায় সে কোন আপত্তি করেনি, মুহূর্তে দ্বিধাও কেটে গেল! পানি কিনতে চাইলাম! দোকানটিতে পানি শেষ! একটি প্রাণ ড্রিঙ্কস এর অফার করতে সে খুশিই হলো! ছোট একটি ড্রিঙ্কস এর দাম ৩০ টাকা! সামান্য আলাপচারিতায় ছেলেটি জানাল, সে প্রথম বারের মত রিয়াদ যাচ্ছে!
তিন !
নাম না জানা এসব রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কষ্টার্জিত বৈদেশিক মুদ্রার জন্যই দেশে আজ এগিয়ে যাচ্ছে! যারা এসব রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের কষ্টাজিত রোজগার বিদেশে পাচার করে তারা এদের কষ্ট কখনই টের পায় না! কারণ পাচারকারীরা বিমান বন্দরে এদের কখনোই দেখে না! রেমিট্যান্স যোদ্ধা যখন ইকোনমি ক্লাসের চেক ইন কাউন্টারের লম্বা লাইনে, পাচারকারী তখন বিজনেস ক্লাসের কাউন্টারে, এলেন আর গেলেন! রেমিট্যান্স যোদ্ধা যখন প্রাণের দোকানে পাউরুটি কিনবে কিনা ভাবছে, পাচারকারী তখন এয়ার পোর্টের বিজনেস লাউঞ্জের খাবার গিলছে! রেমিট্যান্স যোদ্ধা যখন ফেরার সময় ভিড়ের মধ্যে লম্বা লাইনে দাঁড়ানো, পাচারকারী তখন ভি আই পি গেট দিয়ে বিদ্যুৎ বেগে বেরিয়ে যাচ্ছে! রেমিট্যান্স যোদ্ধা ও মুদ্রা পাচাকারী, উভয় গোষ্ঠীকে বিমান বন্দরে একই মর্যাদা দেয়া উচিত! উভয় গ্রুপকে ভিআইপি মর্যাদা বা আম জনতা মর্যাদা দেয়া প্রয়োজন! তাতে বিদেশে আসা যাওয়ার পথে উভয় গোষ্ঠী উভয়কে চিনতে বা বুঝতে পারে! বিশেষ করে মুদ্রা পাচারকারীরা আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের দুঃখ কষ্ট কাছ থেকে দেখার সুযোগ পায়!
চার !
এক কোটিরও বেশি লোক আজ রেমিট্যান্স যোদ্ধা! যেটি মোট জনসংখ্যার প্রায় পনেরো ভাগের এক ভাগ! দেশ থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি উড়োজাহাজের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ আসনে বসে থাকে রেমিট্যান্স যোদ্ধারা! এরা সব সময় বিমানবন্দরে খাবার জিনিসের দাম দেখে দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভোগে! প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় কি পারে না বিমান বন্দরে এদের জন্য স্বল্প মূল্যে একটি খাবারের দোকান খুলতে? যাঁদের বি এম ই টি কার্ড রয়েছে, শুধু তাঁরাই এ সুবিধে পাবে! হয়ত স্বল্পমূল্যে বা নিদেনপক্ষে রেমিট্যান্স যোদ্ধার গ্রামের দামের মূল্যে! প্রয়োজন হলে দোকানটি চালাতে মন্ত্রণালয় ভর্তুকি দিবে! কোটির অধিক স্বল্প আয়ের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের জন্য তাঁদের অভিভাবক মন্ত্রণালয়ের এগিয়ে আসা প্রয়োজন! আশাকরি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্বের সাথে ভেবে দেখবে!
রচনার স্থান কাল : সিঙ্গাপুর এয়ারলাইন্স, এস কিউ ৪৪৭, বাংলাদেশ সময় রাত তিনটে! লেখকঃ প্রবাসী চিকিৎসক, কলামিস্ট!