ঃ সাঈদ ইবনে হানিফ ঃ
হতাশা-মানব জীবনের অতি পরিচিত একটি বিষয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটাকে একটি রোগ বলেও অবিহিত করে থাকে। প্রাপ্তির আশা যেমন রয়েছে আমাদের জীবনে, তেমনি রয়েছে হারানোর বেদনা এবং হতাশা। জীবন ধারণের বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিভিন্ন আদান-প্রদান বা লেনদেনে অনেক কিছু না পাওয়ার আঘাতে হতাশা গ্রস্ত হই আমরা। হয়ে পড়ি চরম দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। এই হতাশাই আবার কাল হয়ে দাঁড়ায় আমাদের কারো কারো জীবনে। শয়তানের প্ররোচনায় হতাশ হয়ে এক সময় আত্মহত্যার মতো পথ বেছে নেয় অনেকে । ইসলাম মানুষকে হতাশ না হওয়ার ব্যাপারে যথেষ্ট উৎসাহ প্রদান করেছে। এক কথায় ইসলাম ধর্মে হতাশার কোনো স্থান নেই। এবিষয়ে (আতাউর রহমান) নামে এক ভাই যথার্থ লিখেছেন। পবিত্র কোরানে বহু স্থানে আল্লাহ তায়ালা বিভিন্ন প্রসঙ্গে বারবার বলেছেন, আমার রহমত থেকে তোমরা নিরাশ বা হতাশ হয়ো না। পবিত্র কোরানের সুরা জুমারের ৫৩নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আরো ইরশাদ করেছন, বলুন, হে আমার বান্দাগণ! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সব গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। সাধারণত বিভিন্ন বিপদের কারণেই হতাশাগ্রস্ত হই আমরা। কিন্তু ইসলামের নবী আমাদেরকে এই বিপদকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখার শিক্ষা প্রদান করেছেন। বোখারি শরীফের একটি হাদিসে এসেছে, নবিজি [সা.] বলেছেন, আল্লাহ যার কল্যাণ কামনা করেন, তাকে বিপদেও জড়িত করেন। ইসলামী জ্ঞানের বিখ্যাত পণ্ডিত ইমাম গাজ্জালি [রহ.] বলেছেন, প্রতিটি বেদনা বস্তুত একটি সম্ভাবনা। বিপদে-আপদে হতাশ না হয়ে ধৈর্য্য ধারণ কর এবং ইতিবাচক দৃষ্টিতে বিপদের মোকাবেলা কর। ইসলাম কেবল বিপদে-আপদে ধৈর্য্য ধারণ করার কথা বলেই ক্ষান্ত হয়নি, মানুষের ওপর আগত এসব বিপদ-আপদের কারণও বর্ণনা করেছেন। মিশকাত শরীফের একটি হাদিসে এমন বর্ণনা এসেছে যে, নবিজি [সা.] বলেছেন, আমার প্রভু বলেন, আমার সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের শপথ! যাকে আমি ক্ষমা করতে ইচ্ছে করি, দৈহিক পীড়া এবং জীবিকার কৃচ্ছ তা দ্বারা তার গ্রিবাকে পাপমুক্ত না করা পর্যন্ত আমি তাকে কখনো এ পৃথিবী থেকে অপসারিত করি না। আল্লাহ তায়ালা যাকে বেশি ভালোবাসেন, তাকেই বিপদ-আপদের মাধ্যেমে পরীক্ষা বেশি করেন। সুতরাং বিপদে-আপদে এবং অন্য যে কোনো কারণে জীবনের প্রতি হতাশ হওয়া যাবে না। তারপরও যদি কখনো হতাশা এসে যায়, তখন আল্লাহ তায়ালার ওপর অগাধ বিশ্বাস রেখে তাঁর কাছে মুক্তির প্রার্থনা করতে হবে। আর সব ধরনের হতাশা মুক্তির জন্য সবার আগে এবং প্রধানত যে বিষয়টি মনে রাখতে হবে, তাহলো একমাত্র আল্লাহই মানুষকে বিপদ প্রদান করেন এবং এই বিপদ-আপদ থেকে মুক্তিদাতাও একমাত্র তিনিই। অন্য কারো এসব করার কোনো ক্ষমতা নেই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হতাশামুক্ত জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। – আমিন