অর্থ ও বাণিজ্য, জাতীয় সংবাদ | তারিখঃ আগস্ট ২০, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 65790 বার
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের ডিম ও মুরগির বাজার মাফিয়া চক্রের হাতে চলে যাওয়ার অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন। তাদের দাবি, এই মাফিয়া চক্র পরিকল্পিত আর অযৌক্তিকভাবে ১৫ দিনে ৫১৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
শনিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি—ডিআরইউতে এক সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করেন সারা দেশের প্রান্তিক খামারি ও ডিলারদের সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুমন হাওলাদার, সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খন্দকার, সহসভাপতি বাপ্পি কুমার দেবসহ সংগঠনের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, ডিম, মুরগি ও বাচ্চার দাম পরিকল্পিতভাবে বাড়িয়ে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মাফিয়া চক্রটি। ১০ থেকে ১২টি বড় কোম্পানি মিলে এই চক্র গড়ে উঠেছে। তারা দেশের প্রান্তিক খামারিদের ধ্বংস করে দিতে চাইছে।
সংবাদ সম্মেলনে সুমন হাওলাদার বলেন, ‘দেশে পোল্ট্রি খাতে মাফিয়া চক্রের থাবায় প্রায় অর্ধেক প্রান্তিক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। আর যারা কষ্ট করে এখনও টিকে আছে, তারা ডিম ও মুরগি উৎপাদন করলেও দাম নির্ধারণ করতে পারে না। বর্তমানে দেশে ডিম ও মুরগির বাজারে যে অস্থিরতা চলছে তা বড় কোম্পানিগুলো জেনেশুনে তৈরি করেছে।’
পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির দাবি, কাজী ফার্মস, প্যারাগন, সিপি, নারিশ, ৭১, আফিল, সাগুনাসহ ১০ থেকে ১২টি বড় কোম্পানি যৌথভাবে এই চক্র তৈরি করেছে।
সুমন হাওলাদার বলেন, ‘প্রান্তিক খামারিকে বর্তমানে এক বস্তা ফিড কিনতে হয় ৩ হাজার ৩০০ টাকায়। কিন্তু বড় কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিতে গেলে সেই একই বস্তার মেলে আড়াই হাজার টাকায়। অর্থাৎ কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে না থাকা খামারিদের কাছ বস্তা প্রতি ৮০০ টাকা বাড়তি লাভ করছে বড় কোম্পানিগুলো। একই রকম ভাবে এই কোম্পানিগুলো প্রতিটি ডিমে বাড়তি তিন টাকা আর প্রতিটি ব্রয়লারের বাচ্চা বিক্রি করে বাড়তি ২০ থেকে ২২ টাকা বাড়তি লাভ করছে।’
পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে দৈনিক ডিমের চাহিদা চার কোটি পিস। এর মধ্যে বড় কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে আসে আড়াই কোটি। প্রতি ডিমে তিন টাকা করে বেশি নিলে প্রতিদিন তারা সাত কোটিরও বেশি টাকা অবৈধভাবে লাভ করেছে। অর্থাৎ গত ১৫ দিনে তারা ডিমের বাজার থেকে ১১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
একইভাবে ব্রয়লার মুরগির ক্ষেত্রেও সরবরাহ সংকট তৈরি করা হচ্ছে। প্রতিদিন ১৯ কোটি ৫০ লাখ কেজি মজুত সংকট তৈরি করে পরবর্তীতে প্রতি কেজিতে ১৫ টাকা বাড়তি দাম নেয়া হয়েছে। আর এভাবে গত ১৫ দিনে ১৭২ কোটি টাকার অতিরিক্ত মুনাফা করেছে বড় কোম্পানিগুলো।
প্রান্তিক খামারিদের এই সংগঠন বলছে, প্রতিটি ব্রয়লারের বাচ্চা বিক্রি করে বাড়তি ২০ থেকে ২২ টাকা বাড়তি লাভ করছে। দিনে এক কোটি ৩০ লাখ বাচ্চা বিক্রি থেকে গড়ে ১২৯ টাকা বেশি নেয়া হয়েছে। এভাবে গত ১৫ দিনে বড় কোম্পানিগেুলো বাড়তি মুনাফা করেছে ২৩৪ কোটি টাকা।
দেশের ডিম ও মুরগির বাজার স্থিতিশীল করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরকে নিয়মিত বাজার তদারকির পরামর্শ রেখেছে পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতারা বলেন, ‘বড় কোম্পানি গুলোর চক্রান্ত থেকে দেশের ভোক্তাদের বাঁচাতে হবে। কারণ ডিম ও মুরগির যে দাম তারা নির্ধারণ করে সেই দামেই আড়তে বিক্রি হয়। দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে প্রান্তিক খামারিরা অস্তিত্ব সংকটে পড়বেন। পাশাপাশি ডিম আর ব্রয়লার মুরগির দামে আরও অস্থিতিশীলতা তৈরি হবে।’