অর্থ ও বাণিজ্য ডেস্ক : ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ আশঙ্কাজনক। মাত্র ৬ মাসে ২১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি বেড়েছে। এ নিয়ে চলতি বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। তাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে ২০টি ব্যাংক। খেলাপি বৃদ্ধি পাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে পাঁচটি রাষ্ট্রায়ত্ত ও বাকি ১৫টি বেসরকারি খাতের। ব্যাংকিং খাতে মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৭৫ শতাংশই আছে এই ২০টি ব্যাংকে। বাকি ৪১টি ব্যাংকে রয়েছে মাত্র ২৫ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন বলেছে, গত ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ২৫ হাজার ২৫৮ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এর মধ্যে ওই ২০ ব্যাংকেই আছে ৯৩ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। যা মোট খেলাপি ঋণের তিন চতুর্থাংশ। ওই ২০ ব্যাংকের মাঝে সবচেয়ে বেশি খেলাপি রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকে।ছয় মাসে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে পাঁচ হাজার ১২৬ কোটি টাকা। ছয় মাস আগে, ডিসেম্বর প্রান্তিক শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ১৩৭ কোটি টাকা। চলতি বছরের জুন প্রান্তিক শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ২৬৩ কোটি টাকায়।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে নাজুক পরিস্থিতিতে থাকা ন্যাশনাল ব্যাংক। ৬ মাসের ব্যবধানে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩ হাজার ৪৩৮ কোটি টাকা। গত বছরের ডিসেম্বরে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল পাঁচ হাজার ৯৫৬ কোটি। তবে ছয় মাসের ব্যবধানে এই অঙ্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকার ঘরে। তৃতীয় স্থানে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। এই ছয় মাসে দুই হাজার ৮০২ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি বেড়ে ১০ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকায় পৌঁছেছে ব্যাংকটি। রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের এক হাজার ১৯২ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ৮৯৩ কোটি বেড়ে ১২ হাজার ১২৬ কোটি টাকা, ওয়ান ব্যাংকের ৮৮৩ কোটি টাকা বেড়ে দুই হাজার ৭৯৩ কোটি, ইসলামী ব্যাংকের ৫৭২ কোটি টাকা বেড়ে চার হাজার ৫১১ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংকের ৫১৪ কোটি টাকা বেড়ে দুই হাজার ৩২৭ কোটি, পূবালী ব্যাংকের ৪৭৯ কোটি টাকা বেড়ে এক হাজার ৫৭২ কোটি এবং বেসিক ব্যাংকের ৪০০ কোটি টাকা বেড়ে জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা।

তালিকায় ৩ নম্বরে রয়েছে অগ্রণি ব্যাংক। এই ছয় মাসে দুই হাজার ৮০২ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি বেড়ে ১০ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকায় পৌঁছেছে ব্যাংকটি। রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের এক হাজার ১৯২ কোটি টাকার ঋণ খেলাপি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৪৬৬ কোটি টাকা, রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের ৮৯৩ কোটি বেড়ে ১২ হাজার ১২৬ কোটি টাকা, ওয়ান ব্যাংকের ৮৮৩ কোটি টাকা বেড়ে দুই হাজার ৭৯৩ কোটি, ইসলামী ব্যাংকের ৫৭২ কোটি টাকা বেড়ে চার হাজার ৫১১ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংকের ৫১৪ কোটি টাকা বেড়ে দুই হাজার ৩২৭ কোটি, পূবালী ব্যাংকের ৪৭৯ কোটি টাকা বেড়ে এক হাজার ৫৭২ কোটি এবং বেসিক ব্যাংকের ৪০০ কোটি টাকা বেড়ে জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২৪৯ কোটি টাকা।

এছাড়াও ঋণ খেলাপি ২০ ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক। ছয় মাসে ৩৯৭ কোটি টাকা ঋণ খেলাপি বৃদ্ধি পেয়েছে ব্যাংকটির। এনআরবিসি ব্যাংকের বেড়েছে ৩৪৬ কোটি, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের ৩৩১ কোটি, এবি ব্যাংকের ৩১৫ কোটি, উত্তরা ব্যাংকের ২৯২ কোটি, পদ্মা ব্যাংকের ২৮৫ কোটি, ঢাকা ব্যাংকের ২৭৯ কোটি, এনসিসি ব্যাংকের ২৭৭ কোটি, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের ২৬৩ কোটি এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি পেয়েছে ২৪৪ কোটি টাকা।

এ সংক্রান্ত একটা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, চলতি ২০২২ সালের জুন প্রান্তিক শেষে ব্যাংকিং খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৯৮ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণ ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। যা মোট বিতরণ করা ঋণের ৮.৯৬ শতাংশ। তিন মাস আগে মার্চ শেষে খেলাপি ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ৩ মাসে খেলাপি বেড়েছে ১১ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা। আর ২০২১ সালের জুন প্রান্তিক শেষে খেলাপি ছিল ৯৯ হাজার ২০৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে খেলাপি বেড়েছে ২৬ হাজার ৫২ কোটি টাকা। যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয় তাহলে খেলাপি বাড়বেই। এখন যেসব নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে এর ফলে ব্যাংকের ভাল গ্রাহকরা নিরুৎসাহিত হয়। কারণ ঋণটি খেলাপি হলেই মিলবে নতুন নতুন সুযোগ। এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংককে আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। আইনের প্রয়োগ এখন সময়ের দাবি। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন ফেরাতে না পারলে আর্থিক পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।’

সুত্র সংগৃহীত