মোঃ সাইদুল ইসলাম : যশোরের বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টে পাসপোর্টযাত্রীর ভ্রমণ কর জালিয়াতির ঘটনায় যুবলীগ নেতা জসিম উদ্দীন (৪২) ও তার সহযোগী নোমান (৩২)কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

শনিবার (১৬ জুলাই) ভোরে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত জসিমসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। গ্রেফতারকৃত জসিম উদ্দীন বেনাপোল পৌর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক। সে গ্রীণ লাইন পরিবহনের বেনাপোল চেকপোস্ট কাউন্টারের ম্যানেজার এবং স্থানীয় বড় আঁচড়া গ্রামের মৃত আব্দুল হাইয়ের ছেলে। অপর গ্রেফতারকৃত তার সহযোগী নোমান বেনাপোল পোর্ট থানার সাদিপুর গ্রামের গোল্ড সম্রাট মমিনের ছেলে।

সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা যায়, বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন কাস্টমসে দীর্ঘদিন ধরে চেকপোস্টের একটি চক্র কাস্টমস কর্মকর্তাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে জাল ভ্রমণ কর দিয়ে ভারতে পাসপোর্ট যাত্রীদের পার করে আসছিল। গত ১৪ জুলাই দুপুরের দিকে ২৯ জন পাসপোর্ট যাত্রীকে জাল ভ্রমণকরের রশিদ দিয়ে ভারতে পার করছিল। এর মধ্যে অধিবাংশ গ্রীণ লাইন পরিবহনের যাত্রী। এসময় কাস্টমসের কঠোর নজর দারিতে সকল ভ্রমণ কর রশিদ পরীক্ষা করে জাল বলে প্রমানিত হয়। এর পরই কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা আতিউর রহমান ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে যুবলীগ নেতা জসিম, নোমান, শামীমসহ ৯ জনকে আসামী করে বেনাপোল পোর্ট থানায় রাজস্ব ফাঁকির অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে বেনাপোল ইমিগ্রেশন কাস্টমসকে কেন্দ্র করে ভারত যাতায়ায়াতকারী পাসপোর্ট যাত্রীদের সেবার নামে চেকপোস্টে ভুঁইফোড়ের মতো গজিয়ে উঠেছে শতাধীক এন্টার প্রাইজ, স্টোর, পরিবহন কাউন্টার, কম্পিউটার কম্পোজ, ফটোকপিসহ বিভিন্ন নামের দোকান। যাদের অধিকাংশ ভ্রমণ কর জালিয়াতি, পাসপোর্ট যাত্রীদের টাকা গুণে দেওয়ার নাম করে কৌশলে টেবিলের নিচে ফেলে দিয়ে শুভঙ্করের ফাঁকি, ছিনতাই, রাজস্ব ফাঁকি, পাসপোর্টযাত্রী নামধারী ব্যবসায়ীদের ল্যাগেজ পারাপার, হুন্ডি পাচারসহ বিভিন্ন অপকর্মে লিপ্ত থেকে লাখ লাখ টাকার মালিক বনে গেছে। যেখান থেকে এসকল অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকা।

বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবির তরফদার জানান, ইতিমধ্যে পাসপোর্ট যাত্রীর চাপ বেড়েছে বন্দরে। এতে কিছু প্রতারকচক্র যাত্রীদের সাথে প্রতারনা করে ভ্রমন কর জালিয়াতি করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার চেষ্টা করছে। বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) এই চক্রের সদস্যরা কয়েকটি পরিবহনের যাত্রীদের জাল ট্যাক্স করে ইমিগ্রেশন পার করছিল। এসময় সন্দেহ হলে যাত্রীদের ভ্রমন করের কাগজ পরীক্ষা করে দেখা যায় সবই জাল। পরে কাস্টমস তাদের নামে মামলা দায়ের করেন।

বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন ভুঁইয়া ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, কাস্টমস বাদী হয়ে ভ্রমণ কর জালিয়াতি চক্রের ৯ সদস্যর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। জসিম উদ্দীন ও নোমান নামে প্রতারক চক্রের দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি অভিযুক্তরা ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশের অভিযান চলছে।

এ বিষয়ে বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার আব্দুল রশীদ মিয়া জানান, বর্তমানে চেকপোস্ট কাস্টমস ও ইমিগ্রেশনকে দালালমুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে কোনো প্রকার হয়রানি ছাড়া নিরাপদে যাত্রীরা ভারত গমনাগমন করছেন। দালালচক্র কাস্টমসে প্রবেশ করতে না পেরে এখন ভ্রমণকর জাল করে যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এই চক্রের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। কোন ভাবেই সরকারের রাজস্ব ফাঁকি মেনে নেওয়া হবে না। ঝামেলামুক্তভাবে যাত্রীরা যাতে ভারত যাতায়াত করতে পারে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি জানান।