সানজিদা আক্তার সান্তনা, যশোর অফিস : যশোরে বিল্লাল হোসেন @ মিয়াদ (২৮) নিখোঁজ সংক্রান্ত জিডি অনুসন্ধানকালে কঙ্কাল উদ্ধার পরিচয় সনাক্ত ও আসামী গ্রেফতার এবং আলামত উদ্ধার করলো পিবিআই যশোর।
গত কাল ১৬ জুলাই শহরের কাজীপাড়া কাঁঠালতলা এলাকা থেকে আব্দুল কাদের মোল্লা (২৩) ও জুয়েল শেখ (২৫) নামে দুই আসামিকে গ্রেফতার করে পিবিআই যশোর।

তাদের স্বীকারোক্তি ও দেখানো মতে ভিকটিমের ব্যাটারী চালিত রিক্সা, হত্যার কাজে ব্যবহৃত চাকু ও ভিকটিমের ব্যবহৃত গামছা উদ্ধার করা হয়। নিহত বিল্লাল হোসেন মিয়াদ বাগেরহাট জেলার মোড়েলগঞ্জ থানার ছোট বাদুড়া গ্রামের লোক মানুষের ছেলে। তিনি থাকতেন যশোর সদর উপজেলার পাগলা দা মাঠপাড়া এলাক। পেশায় তিনি ব্যাটারি চালিত অটো রিক্সা চালক ছিলেন।

আটক আসামীরা হল যশোর শহরের কাজীপাড়া কাঁঠালতলা এলাকার তোতা মিয়ার বাড়ির ভাড়াটিয়া জাহিদুল ইসলাম মিঠুর ছেলে আব্দুল কাদের মোল্লা (২৩) ও একই এলাকার তিতাসের বাড়ির ভাড়াটিয়া ইউনুচ শেখের ছেলে জুয়েল শেখ (২৫)।

যশোর পিবিআই এর পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, নিহত বিল্লাল হোসেন মিয়াদ গত ২১ জুন বিকালে অটো রিক্সা নিয়ে বাসা থেকে বাইর হয় এরপর আর বাড়িতে না ফেরাই তার স্ত্রী শারমিন খাতুন অনেক
খোঁজাখুঁজির পরে বাড়িতে না ফেরার কারণে এবং মোবাইল ফোন বন্ধ থাকার কারণে কোতোয়ালি থানায় ২২ জুন একটি জিডি করেন। শারমিন খাতুনের এই জিডি তদন্তকালে পিবিআই যশোর। শারমিন তার নিখোঁজ স্বামীকে উদ্ধারের জন্য
উল্লেখিত জিডি কপি নিয়ে পুলিশ সুপার, পিবিআই, যশোর বরাবরে আবেদন করলে পিবিআই যশোর জেলা বিষয়টি আমলে নিয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করে।

একপর্যায়ে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। গত ৩ জুলাই যশোর সদর উপজেলার খিতিবদিয়া গ্রামের রেজাউল সরদার এর মেহগনি বাগান হতে কোতয়ালী থানা পুলিশ কর্তৃক মানুষের একটি কঙ্কাল সহ পরিহিত কাপড়-চোপড়সহ উদ্ধার হয়। এসআই ডিএম নূর জামাল শারমিন’কে সাথে নিয়ে থানায় হাজির হয়ে উক্ত কঙ্কালের সাথে থাকা লুঙ্গীর অংশ বিশেষ দেখালে সেটি তার স্বামীর বলে সনাক্ত করেন। উপরোক্ত ঘটনা সংক্রান্তে নিহত বিল্লাল হোসেন মিয়াদ (২৮) এর স্ত্রী শারমিন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামী করে অভিযোগ দায়ের করলে যশোর কোতয়ালী মডেল থানায় হত্যা মামলা নথিভুক্ত হয়।

আটক আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভিকটিম বিল্লাল হোসেন @ মিয়াদ (২৮) পেশায় একজন ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা চালক। গত ২১জুন সন্ধ্যার দিকে অভিযুক্ত আঃ কাদের মোল্যা (২৩) ও জুয়েল শেখ (২৫) দের কোতয়ালী থানাধীন কাঁঠালতলা মোড়ে বসে ভিকটিম বিল্লাল হোসেন @ মিয়াদ’কে হত্যা করতঃ তার ব্যাটারী চালিত রিক্সাটি ছিনতাই করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক ঐদিনই রাত অনুমান সাড়ে আটটার সময় অভিযুক্ত কাদের ভিকটিম বিল্লাল হোসেন @ মিয়াদের মোবাইলে কল করে তাকে কাঁঠালতলা মোড়ে আসতে বলে। তখন ভিকটিম মিয়াদ তার রিক্সাসহ কাঁঠালতলা মোড়ে আসলে আসামীরা তাকে মহিলার সাথে অনৈতিক মেলামেশার প্রস্তাব করে। ভিকটিম রাজী হলে তারা ভিকটিমের রিক্সাযোগে সদর উপজেলার খিতিবদিয়া গ্রামে যায়। পরবর্তীতে তারা খিতিবদিয়া গ্রামের সাইদুল ইসলাম(২৪) এর বসত বাড়ির সামনে কাঁচা রাস্তার উপরে ভিকটিম মিয়াদের রিক্সাটি রেখে তাকে জনৈক রেজাউল সরদার এর মেহগনি বাগানে নিয়ে যায়। যাওয়ার পথে অভিযুক্ত জুয়েল রাস্তায় একটি দড়ি পেয়ে পকেটে ভরে রাখে। মেহগনি বাগানে যাওয়ার পর অভিযুক্ত জুয়েলের কাছে থাকা রশি দিয়ে পিছন দিক থেকে ভিকটিমের গলায় রশি পেচিয়ে ধরে, সেই সময় কাদের ও জুয়েল রশির দুই দিক থেকে টেনে ধরে রাখে ভিকটিম মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লে অভিযুক্ত কাদের তার কোমরে থাকা চাকু বের করে ভিকটিমের পেটের বাম পাশে ও রানের পেছন দিকে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এরপর অভিযুক্ত জুয়েল আসামী কাদের এর কাছ থেকে চাকুটি নিয়ে ভিকটিমের ডান পাশের পাজরে ও পিঠে এলোপাতাড়ি আঘাত করে।

ভিকটিম মাটিতে পড়ে গেলে অভিযুক্ত কাদের জুয়েলের নিকট থেকে চাকু নিয়ে ভিকটিমের কোমরে থাকা গামছা চাকু দিয়ে কেটে দেয় এবং জুয়েল উক্ত গামছা দিয়ে ভিকটিমের দুই পা বাধে। অতঃপর অভিযুক্ত জুয়েল ভিকটিমের মাথার চুল টেনে ধরলে কাদের তার হাতে থাকা চাকু দিয়ে ভিকটিমকে জবাই করে হত্যা নিশ্চিত করে। এরপর অভিযুক্ত জুয়েল ভিকটিমের মোবাইল ফোনটি নিয়ে ফোন থেকে সিম ও মেমোরিকার্ড খুলে কাদেরকে দিলে কাদের মেমোরি ও সিম কার্ড বাগানের মধ্যে ফেলে দেয়। পরবর্তীতে অভিযুক্তদ্বয় ভিকটিমের ব্যাটারী চালিত রিক্সাটি নিয়ে রওনা দিয়ে পথিমধ্যে মোবাইল ফোনটি পাটক্ষেতে ফেলে দেয়। পরের দিন অর্থাৎ গত ২২জুন অভিযুক্তদ্বয় ভিকটিম মিয়াদ এর রিক্সাটি বিক্রি করে দেয় মর্মে স্বীকার করে। অভিযুক্ত মোঃ আঃ কাদের মোল্যা (২৩) ও মোঃ জুয়েল শেখ (২৫) দ্বয়কে অদ্য ১৭ জুলাই মঞ্জুরুল ইসলাম, বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, আমালী আদালত কোতয়ালী, যশোর আদালতে সোপর্দ করা হলে অভিযুক্তরা বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারা মোতাবেক স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। মামলার তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।