ইয়ানূর রহমান : ২০২১-২২ অর্থ বছরে বেনাপোল কাস্টম হাউসে লক্ষ্যমাত্রা ৬ হাজার ২৪৫ কোটি টাকার বিপরীতে আদায় হয়েছে ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এতে এবারও রাজস্ব ঘাটতি হয়েছে ১ হাজার ৬৪৫ কোটি ৮ লাখ টাকা । তবে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৫ হাজার ১৫৮ কোটি টাকার বিপরীতে এই রাজস্ব ঘাটতির পরিমান ৫৫৮ কোটি ৮ লাখ। এদিকে বেশ কয়েক বছর ধরে এনবিআর’র দেওয়া রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে বেনাপোল কাস্টম হাউস।

জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে আমদানি পণ্য থেকে এনবিআর থেকে বেনাপোল কাস্টম হাউসের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৬ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। এ হিসেবে রাজস্ব ঘাটতি হচ্ছিল দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। তবে বছর শেষের দিকে রাজস্ব পূরনে শঙ্কা দেখা দেওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় ৫ হাজার ১’শ ৫৮ কোটি টাকা। কিন্তু ৩০ জুন বছর শেষে ৪ হাজার ৫৯৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকা আদায়ে ঘাটতি থেকে যায় ৫৫৮ কোটি ৮ লাখ টাকা। পণ্য খালাসে নানান জটিলতা ও বন্দরের অব্যবস্থাপনায় রাজস্ব ঘাটতির প্রধান কারণ বলে জানিয়েছে কাস্টমস।
এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে কাস্টমসে রাজস্ব ঘাটতি ছিল ২ হাজার ৫৭ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ঘাটতি ৩ হাজার ৩৯২ কোটি, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ঘাটতি ১১৪৫ কোটি।

বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহ-সভাপতি আমিনুল হক জানান, বেনাপোল বন্দর থেকে ভারতের দ্বিতীয় বাণিজ্যিক শহর হিসেবে পরিচিত কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৫ কিলোমিটার। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়াতে এ বন্দর দিয়ে দুই দেশের ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যে আগ্রহ বেশি। আমদানি পণ্যের মধ্যে বড় একটি অংশ কেমিকেল ও খাদ্যদ্রব্য জাতীয় পণ্য। এখান থেকে বড় অংকের রাজস্ব আসে সরকারের। তবে সুষ্ঠ ও নিরাপদ বাণিজ্য পরিচালনায় বন্দর ও কাস্টমসে আজও গড়ে উঠেনি প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। এতে গত ১০ বছর ধরে রাজস্ব আয়ে বিরুপ প্রভাব পড়ছে।

বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ¦ শামছুর রহমান জানান, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় বেনাপোল বন্দরের বাণিজ্যেও নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। সেসাথে দক্ষীন বঙ্গের সাথে উত্তর বঙ্গে পণ্য পরিবহনে আর কোন জটিলতা না থাকায় এ বন্দর দিয়ে ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য বেড়ে যাবে। তবে সুষ্ঠ ভাবে বাণিজ্য পরিচালনার জন্য বন্দরের অবকাঠামো বাড়ানো খুব জরুরী হয়ে দাড়িয়েছে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, প্রতিদিন এ বন্দর থেকে ৭’শ ট্রাক থেকে ৮’শ ট্রাক পণ্য আমদানির চাহিদা থাকলেও বন্দরে জায়গার অভাবে ৪০০ ট্রাকের বেশি পণ্য আমদানি করা সম্ভব হচ্ছেনা। সেসাথে ফর্কক্লিপ ও ক্রেনের অভাবে পণ্য খালাসের অপেক্ষায় মাসের পর মাস ট্রাক দাড়িয়ে থাকছে এখানে। এতে লোকশানে পড়ে অনেক ব্যবসায়ীরা এপথে পণ্য আমদানি বন্ধ করেছেন। যার বিরুপ প্রভাব পড়েছে এনবিআর কর্তৃক বেঁধে দেওয়া বেনাপোল কাস্টমসের রাজস্ব আয়ের উপর।
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক(ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, বন্দরে নতুন জায়গা অধিগ্রহন, পণ্যগার তৈরী ও বন্দরের নিরাপত্তা প্রাচীর নির্মানের কাজ শুরু করা হয়েছে। শেষ হয়েছে সিসি ক্যামেরা বসানো ও অটোমেশন পদ্ধতি। তবে সব স্থাপনা নির্মান শেষ হতে এখনো ২ বছর সময় লাগবে।

বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার আজিজুর রহমান জানান, কেমিকেল ও খাদ্যদ্রব্য থেকে বড় অংকের রাজস্ব আসে। তবে বেনাপোল কাস্টমসে বিএসটিআই ও বিএসআইআরের অফিস না থাকায় এ ধরনের পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এতে কাঙ্খিত রাজস্ব আসছেনা।