নিজস্ব প্রতিবেদক : বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির বিপরীতে চট্টগ্রামের নুরজাহান গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান মাররীন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেড অগ্রণী ব্যাংকে থেকে ঋণের নামে ২৫৮ কোটি টাকা আত্মসাত করেছে। এরইমধ্যে এই অভিযোগে নুরজাহান গ্রুপের দুজন আর তিন ব্যাংক কর্মকর্তাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দুদকের তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ২০১১ সালের ১০ মার্চ মাররীন ভেজিটেবল অয়েলস অগ্রণী ব্যাংকের চট্টগ্রামের একটি শাখায় ৩৫ হাজার মেট্রিক টন ক্রুড পামওলিন আমদানির জন্য ২০ শতাংশ মার্জিনে ১২০ দিন মেয়াদে প্রায় ৩২৭ কোটি চার লাখ টাকা ঋণপত্র এবং মার্জিন ২৬১ কোটি ৬৩ লাখ টাকার টিআর ঋণের জন্য আবেদন করেছিলো।

ঋণ আবেদনটি যাচাইবাছাই শেষে বাংলাদেশে ব্যাংকের সিআইবি রিপোর্ট ও অন্যান্য কাগজপত্রসহ ঋণ প্রস্তাব আকারে একই বছরের ৪ এপ্রিল অগ্রণী ব্যাংক প্রধান কার্যালয়ে ঋণ প্রস্তাব ও ক্রেডিট কমিটির কাছে কিছু শর্ত সাপেক্ষে ঋণ মঞ্জুরীপত্র প্রদান করে।

সেসময় মাররীন ভেজিটেবল অয়েলসেকে ঋণ নিতে যেসব শর্ত দেওয়া হয়েছিলো তার একটি ছিল নুরজাহার গ্রুপের আরেক অঙ্গপ্রতিষ্ঠান জাসমীর ভেজিটেবল অয়েলসের কাছে অগ্রণী ব্যাংকের আছাদগঞ্জ শাখায় ২০১২ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮৫ কোটি ৯৭ লাখ ৭৭ হাজার১৮ টাকার অনাদায়ী ঋণ পরিশোধ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সেই ঋখ মঞ্জুরিপত্রে বলা হয়, ‘সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নিকট এ ব্যাংকের (অগ্রণী ব্যাংক) বিভিন্ন শাখায় টি আর ঋণের মেয়াদোত্তীর্ণ দায় পরিশোধ সাপেক্ষে এই ঋণ কার্যহকর্র হবে। এছাড়া পূর্বের টিআর ঋণ পরিশোধ সাপেক্ষে প্রস্তাবিত টিআর ঋণ সৃষ্টি করা যাবে।’

দুদকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘অগ্রণী ব্যাংকের আগ্রাবাদ জাহান ভবন শাখা হতে মারবীন ভেজিটেবল অয়েলসের অনুকূলে ঋণের নামে ২০১১ থেকে ২০১২ সালের পর্যন্ত মোট ২৮০ কোটি ৭২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৭৩ টাকা ব্যাংক কোনো শর্ত না মেনেই ছাড় করা হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে জানা যায়, ২০১১-২০১২ সালে ২৮০ কোটি ৭২ লাখ ৩৮ হাজার ৩৭৩ টাকা নেওয়া ঋণের মধ্যে মাত্র ২২ কোটি ১৬ লাখ ২২ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন। আর বাকি ২৫৮ কোটি ৫৬ লাখ ১৬ হাজার ৩৭৩ টাকা আত্মসাৎ করেন।

দুদকের তদন্তে বলা হয়, ‘অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড আগ্রাবাদ শাখার তৎকালীন শাখা ব্যবস্থাপক বেলায়েত হোসেন উল্লিখিত ঋণ প্রধানকালে প্রধান কার্য়ালয়ের অনুমোদন পত্রের ১নং শর্তের সুস্পষ্ঠ লংঘন করাসহ ব্যাংকের বৈদেশিক বিনিময় বাণিজ্য ঋণের অর্পিত ক্ষমতা অনুসরণ করেননি।’

তবে এই বিষয়ে নুরজাহান গ্রুপ ও মাররীন ভেজিটেবল অয়েলসের চেয়ারম্যানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগর চেষ্টা করেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।

আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির আশ্রয় গ্রহণ করে আমদানিকৃত মালামাল ছাড়িয়ে নিয়ে তা টাকায় রূপান্তর করে ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ না করেই ২৫৮ কোটি ৫৬ লাখ ১৬ হাজার ৩৭৩ টাকা প্রতারণা, জালিয়াতি এবং মানি লন্ডারিং এর মাধ্যমে আত্মসাৎ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করার প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া যায়।

এই ঘটনায় গত ২৪ এপ্রিল মাররীন ভেজিটেবল অয়েলস লিমিটেডের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান, নুরজাহান গ্রুপের চেয়ারম্যান ও মাররীন ভেজিটেবল অয়েলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ, অগ্রণী ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখার তৎকালীন সিনিয়র অফিসার ও ঋণ প্রস্তাবকারী ত্রিপদ চাকমা, বৈদেশিক বাণিজ্যের তৎকালীন ব্যবস্থাপক মো. রমিজ উদ্দিন এবং শাখা প্রধান ও ডিজিএম বেলায়েত হোসেন বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে।

দুদকের তদন্ত সূত্রে জানা যায়, নিজে অথবা অন্যকে আর্থিকভাবে লাভবান করার অসৎ উদ্দেশ্যে অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করায় দণ্ডবিধির ৪০৯, ১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে তাদের বিরুদ্ধে শিগগিরই মামলা হবে।