গুরুশিষ্য সম্পর্ক ছিল আমাদের। নিমাইদা আমার থেকে বেশ বড়। আমি যখন টু বা থ্রিতে, তখন নিমাইদা
নাইন কি টেনে পড়ে। বিকেলে তার সাথে ঘুরতাম। হাতে
তার সব সময় একটা না একটা বই থাকতো। নানা রকম জ্ঞান দিত। অনেকের কর্মময় জীবনের বর্ননা দিয়ে উৎসাহ জুগাতো। সেই সময় থেকে আমি সুবাস বোস, মহাত্মা গান্ধী,বঙ্গবন্ধু,লেনিন,কার্ল মার্কস, মাও সেতুং, হোচি মিন ইত্যাদি ব্যক্তিদের সম্মন্ধে দু’চারটি
কথা তার মুখ থেকে শুনেছি। মাঝেমধ্যে আমার মত
গোটা দশ-বারজন বালককে নিয়ে সন্ধ্যাবেলা আসর
জমাতো কালীতলায়। কিভাবে চলতে হবে,কোন পথে
চলতে হবে, কেমন ভাবে পড়ালেখা করতে হবে, কি কি
করা উচিৎ হবে না ইত্যাদি ইত্যাদি আমাদের শেখাতো।
নিম্নবিত্ত পরিবারে জন্ম নিয়েও শুধুমাত্র পরিশ্রম করে সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে গেছেন, দেশ ও দশের হাল ধরেছেন,এমন ব্যক্তিদের উদ্ধৃতি টেনে আমাদের সুপ্ত
প্রতিভাকে বিকশিত করার চেষ্টা করতো। দেখতে দেখতে আমরা ছোটরা সবাই নিমাইদার শিষ্য হয়ে গেলাম।
একটা ব্যক্তিত্ব নিয়ে চলতো নিমাইদা। তুখোড় মেধাবী ছিল সে। ক্লাসে বরাবর ফার্স্ট হতো। আদর্শে ছিল অবিচল। আমার মত ছোটদের নিয়ে উনি
‘সমাজ কল্যাণ’ নামে একটা সমিতি গড়েছিলেন। এই
সমিতির নামে আমাদেরকে সাথে নিয়ে দিনের পর দিন
গ্রামের জন্য, মানুষের জন্য কত যে কাজ করে দিত সেই সময়, তার ইয়ত্তা নেই। হুর…হুর…হুররে নিমাইদা।