সারাবিশ্ব ডেস্ক : আরকান আর্মি আরো অগ্রসর হলো মিয়ারমারের পশ্চিম রাখাইন প্রদেশে থাকা সামরিক সদর দপ্তর দখলের মধ্য দিয়ে। ইতোমধ্যে জানা যাচ্ছে রাখাইনের ৮০ শতাংশ এলাকা দখলে নেয়া আরাকান আর্মি সেখানে নতুন রাষ্ট্রের ঘোষণা দিয়ে নতুন সরকারও গঠন করতে পারে। কক্সবাজার সীমান্তের ওপাড়ে থাকা প্রতিবেশি রাখাইনকে নিয়ে আরাকান আর্মি এমন ঘটনার জন্ম দিলে নতুন স্বাধীন দেশ হবে ‘আরাকান’।

অন্যদিকে, মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রীর এক বক্তৃতায় বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমারের চিন প্রদেশের অংশ নিয়ে নতুন খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের পুরনো বিষয়টি সামনে আসায় ভূ-রাজনীতির নতুন হিসাব চলছে। যদি এরকম কিছু ঘটে যায় তাহলে নতুন এক ভূ-রাজনৈতিক সংকটে পড়বে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে এসব কর্মকাণ্ডে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়সহ বাংলাদেশের নজর এখন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, রাখাইন হচ্ছে বাংলাদেশ এবং বঙ্গোপসাগরের সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমারের একটি উপকূলীয় রাজ্য। মিয়ানমারের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চলগুলোর মধ্যেও একটি। যদিও এখানে রয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাসের রিজার্ভ এবং কিয়াউক পিউতে প্রস্তাবিত অর্থনৈতিক অঞ্চল। এখান থেকেই চিনে তেল ও গ্যাস বহনকারী পাইপলাইন রয়েছে। আরাকান আর্মি এখানে নতুন দেশ এবং সরকারের ঘোষণা দিলে সব ধরনের হিসাব পাল্টে যাবে। জন্ম নেবে নতুন সমীকরণ। এর ফল কতটা স্বস্তিকর হবে ঢাকার জন্য- এই নিয়েও চলছে বিশ্লেষণ। পাশাপাশি মারাত্মক জটিল আকার ধারণ করবে রোহিঙ্গা সংকটও।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান যুদ্ধে আরাকান আর্মি বাংলাদেশ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সীমান্তের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণ করছে- এমন খবর আসার পর বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগের উদ্যোগের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। গত ১৩ ডিসেম্বর ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা সংকট ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিয়ে দেয়া বক্তৃতায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান এ ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তিনি বলেন, আরাকানের পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে কিনা তা নিয়ে ‘সুচিন্তিত’ পদক্ষেপ নেয়া হবে। তিনি বলেন, আমাদের জন্য সীমান্ত ব্যবস্থাপনা গুরুত্বপূর্ণ। রাখাইনের সঙ্গে আমাদের সীমান্ত আছে। তবে সেখানকার পরিস্থিতি ঠিক কী অবস্থায় আছে এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় কারা- সেটি নিশ্চিত হয়েই আমাদের পদক্ষেপ নিতে হবে। এসব বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র

উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করলেও আরাকান নিয়ে কোনো মন্তব্য প্রকাশে আসেনি। বৈঠকের পর ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান ছাড়া মিয়ানমারে স্থায়ী শান্তি ও স্থিতিশীলতা আসবে না।

এদিকে, সাবেক সচিব, গবেষক ও বিশ্লেষক শামসুল আলম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে লিছেন, বাংলাদেশের পাশে জন্ম নিতে যাচ্ছে নতুন একটি স্বাধীন রাষ্ট্র আরাকান! যে কোনো সময় আত্মপ্রকাশ ঘটতে পারে দেশটির। প্রায় দেড় দশক আগে আরাকান আর্মি তৈরি হয়। প্রতিষ্ঠার মাত্র দেড় দশকের কম সময়ের মধ্যে দেশটির সরকারি বাহিনীকে পরাজিত করে রাখাইন আর্মি তৈরি করতে যাচ্ছে নতুন দেশ। সরকারি বাহিনীকে রীতিমতো পরাজিত করে পুরো অঞ্চল দখল নিয়েছে এই আর্মি। সর্বশেষ মংডু দখল করার মধ্য দিয়ে তারা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শেষ ঘাঁটির পতন ঘটায়।

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যে কোনো সময় স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারে রাখাইন আর্মি। সব মিলিয়ে খুব দ্রুত হয়তো আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে কক্সবাজারের পাশে নতুন একটি দেশ ‘আরাকান’। ইতোমধ্যে ভারত-চীনের মতো দেশগুলো যোগাযোগ শুরু করেছে আরাকান আর্মির সঙ্গে। তৎপর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রও। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের অস্থিরতার মধ্যেই আরো বড় ঘূর্ণাবর্তে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ পড়তে পারে ভৌগলিক সম্পর্কের নতুন সমীকরণে। বাংলাদেশের সঙ্গে থাকা মিয়ানমারের ২৭০ কিলোমিটারের সীমান্ত এখন পুরোটাই রাখাইন আর্মির দখলে। তার মতে, বাংলাদেশের খুব সতর্ক কূটনৈতিক ও সামরিক পদক্ষেপ প্রয়োজন।

জাতীয় ঐকমত্য তৈরি হওয়া দরকার। একদিকে যেমন আমাদের বর্ডারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, পাশাপাশি উদ্ভূত পরিস্থিতির সঙ্গে সংযুক্ত থাকা। কেননা নতুন রাষ্ট্র হলে আমাদের সঙ্গেই নানা রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক কেমন যাবে, ভারত কতটা খবরদারি করবে, রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো ত্বরান্বিত করা, নতুন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরি প্রভৃতি।

তবে আরাকান নামে দেশ গঠন হওয়ার আগেই রাখাইন রাজ্য দখলে নিয়েই তারা সম্প্রতি আরাকান আর্মির স্বাক্ষরে ১৯ টন চাল বাংলাদেশে আসে। কিন্তু বৈধ কাগজপত্র না হওয়ায় সেই চালের চালানটি ফেরত পাঠায় বাংলাদেশ। টেকনাফ স্থলবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তা বি এম আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, মংডু থেকে আসা চালভর্তি ট্রলারের কাগজপত্রে জটিলতার কারণে পণ্য খালাসের অনুমতি দেয়া হয়নি। কারণ ওই চালানের সঙ্গে মালামালের সঠিক ছাড়পত্র নেই। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকের মিয়ানমার থেকে চাল আনার অনুমতি নেই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের। কাগজপত্র না থাকার কারণে চাল ভর্তি ট্রলারকে পুনরায় রাখাইনে ফেরত যেতে হয়।

সম্প্রতি আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের উত্তরাঞ্চল দখল করে বাংলাদেশের সঙ্গে ২৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তের পুরোটা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার দাবি করেছে। এরপর থেকে টেকনাফ উপজেলার অপর পাশে মংডু জেলায় উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মংডু শহর আরাকান আর্মি দখলের নেয়ার পর প্রথমবারের মতো গত মঙ্গলবার বিকালে চাল ভর্তি একটি ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দর ঘাটে আনেন রোহিঙ্গা মো. জামাল হোসেন মাঝি। তার বাড়ি মংডুর জাম্বুনিয়া গ্রামে। জামাল হোসেন মাঝি বলেন, মিয়ানমারের মংডুর খাইয়ুংখালী খাল থেকে আরাকান আর্মির পাস নিয়ে ৩৮৪ বস্তা চাল নিয়ে টেকনাফ স্থলবন্দরে পৌঁছেছি। কিন্তু একদিন পার হয়ে গেলেও কাগজপত্র জটিলতার কারণে পণ্য খালাস হয়নি।

বিশ্লেষকরা বলেছেন, ভৌগলিকভাবে রাখাইনের অবস্থান ও সম্পদ চীন ও ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই রাখাইনকে নিজেদের বলয়ে রাখতে এশিয়ার দুই পরাশক্তি ভারত ও চীন এর মধ্যেই তাদের জাল বিস্তার করে ফেলেছে। জানা গেছে, রাখাইনে আছে এই দুই দেশের বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ। চীন রাখাইনের চকভিউতে গড়ে তুলেছে গভীর সমুদ্রবন্দর। বঙ্গপোসাগরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব মোকাবিলায় রাখাইনের এই বন্দর চীনের মহাস্ত্র। এছাড়া এই বন্দর থেকেই সরাসরি গ্যাস যায় চীনে। দেশটির বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনেসিয়েটিভ বাস্তবায়ন এবং মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় তেল-গ্যাস পাঠানোর বিকল্প ও সহজ পথও এই অঞ্চলকে ঘিরে।

এছাড়া মিয়ানমারের ইরাবতী নদীতে চীনের ১৩ হাজার মেগাওয়াটের এক জলবিদ্যুৎ প্রকল্প রয়েছে। অন্যদিকে ভারতের জন্য রাখাইন মহাগুরুত্বপূর্ণ। কালাদান মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বাইপাস করে সেভেন সিস্টার্স ও কলকাতার মধ্যে ভারতের যোগাযোগ সহজ করতে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে ভারত।

এছাড়া সেভেন সিস্টার্সকে বিচ্ছিন্নকরণের চীনা হুমকি মোকাবিলায়ও রাখাইন ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমাদেশগুলোর কাছেও রাখাইন গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিয়ে আছে। এশিয়ার এই অঞ্চলের প্রভাব ও বাণিজ্যিক পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাখাইনের বিকল্প নেই তাদের কাছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, রাখাইন নিয়ে ভূ-রাজনীতির যে নতুন সমীকরণ শুরু হয়েছে তাতে বাংলাদেশের পরিস্থিতি ও অবস্থান কি হবে?

মিয়ানমারের সরকার ও আরাকান আর্মি দুপক্ষের সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক আছে ভারত ও চীনের। নতুন রাষ্ট্র গঠন হলেও এই দুই দেশের ক্ষেত্রে তেমন প্রভাব পড়বে না। তবে নতুন রাষ্ট্র গঠিত হলে চাপ বাড়বে বাংলাদেশের। সীমান্ত থাকা প্রতিবেশি মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও বাণিজিক সম্পর্ক একেবারেই সীমিত। স্পর্শকাতর রোহিঙ্গা ইস্যু, সমুদ্রসীমা বিরোধ মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর বাংলাদেশের আকাশ ও সমুদ্রসীমা লঙ্ঘন, পাবর্ত্য অঞ্চলকে নিজেদের বলে দাবি করার মতো বহু কারণে দুই দেশের সম্পর্কও বরফ শীতল।

এছাড়া নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় রোহিঙ্গা ইস্যুতে কার্যত হাত গুটিয়ে নিয়েছে ভারত ও চীন। ফলে শরনার্থী রোহিঙ্গারা নতুন সংকট হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে। জানা গেছে, রোহিঙ্গা ও আরাকান আর্মির মধ্যে বিরোধ বহু পুরনো। এছাড়া গত কয়েক মাস আগে চলা সংঘাতে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বাহিনীর পক্ষে রাখাইনের বেশ কিছু রোহিঙ্গা অংশগ্রহণ করে। ফলে রাখাইনকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে আরাকান আর্মি সরকার গঠন করলে সীমান্তের ওপাড়ে থাকা ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গার বাংলাদেশে ঢল নামারও শঙ্কা করছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো। এছাড়া বাংলাদেশে অবস্থান নেয়া দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার ফেরত যাওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ-ভারত-মিয়ানমারের অংশ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে নতুন খ্রিস্টান রাষ্ট্র : ভারতের মূল ভূখণ্ডের বাইরে দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সেভেন সিস্টার্স বলে খ্যাত সাতটি রাজ্য রয়েছে। বহুদিন ধরেই গুঞ্জন আছে, সেভেন সিস্টার্সকে ভারতের মূল অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের কিছু অংশ নিয়ে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার। মনিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অভিযোগ জানিয়ে বলেছেন, মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লাল দোহমা এই নতুন খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের নেপথ্যে রয়েছেন। তবে এই শঙ্কা নতুন নয়, বহু বছর ধরেই ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বৃহৎ অংশ মিয়ানমার এবং বাংলাদেশের কিছু অংশ নিয়ে আলাদা খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের গুঞ্জন চলে এসেছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় হিন্দু, মুসলিম ও বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ট দেশ থাকলেও খ্রিস্টান সংখ্যাগরিষ্ট কোনো দেশ নেই। এই অঞ্চলের দেশগুলোতে খ্রিস্টান ধর্ম্বালম্বীর সংখ্যাও কিছুটা কম। ভারতে খ্রিস্টান অধিবাসীদের অনুপাতিক সংখ্যা ৫ শতাংশেরও কম। তবে সেভেন সিস্টার্সের অন্তর্ভূক্ত মেঘালয়, অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম এবং নাগাল্যান্ডের অধিবাসীদের প্রধান অংশ খ্রিস্টান।

মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা এন বীরেন সিং বলেন, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের এক অনুষ্ঠানে মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লাল দোহমার দেয়া এক বিতর্কিত ভাষণ তাদের হাতে এসেছে। যেখানে বাংলাদেশ ভারত এবং মিয়ানমারের কিছু অংশ নিয়ে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনার কথা জানান লাল দোহমা। ভবিষ্যতে এই রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে লাল দোহমা আত্মবিশ্বাসী বলেও ঘোষণা দেন। এই নিয়ে ভারত সরকারকে সতর্কও করেছেন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী। খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনে অবৈধ অভিবাসীদের আশ্রয় দেয়া, জমি দখল স্থানীয় লোকদের বিতারিত করা, স্বায়িত্তশাসিত প্রশাসন গঠনের কাজ চলছে বলে জানান তিনি। মণিপুরের পাহাড়গুলোতে সম্প্রতি একের পর এক গ্রাম গড়ে উঠেছে বলে জানান বিজেপি নেতা।

প্রসঙ্গত, ভারত থেকে কিছুটা বিচ্ছিন্ন সেভেন সিস্টার্স, দেশটির মূল ভূখণ্ডে থাকা রাজ্যগুলোর তুলনায় সুযোগ সুবিধায় অনেকটাই পিছিয়ে। বিভিন্ন জেরে স্বাধীনতার দাবিতে এই রাজ্যগুলোতে গড়ে উঠেছে বিচ্ছিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠীও। ভারত সরকার এইসব বিদ্রোহ কঠোরভাবে দমন করলেও বিচ্ছিন্ন অঞ্চলটির সঙ্গে চীন-মিয়ানমারের সম্পর্ক দিল্লি ও মোদি সরকারকে বরাবরই আতঙ্ক ও চাপে রাখে।

এদিকে মণিপুরের সংঘাতের জন্য মিয়ানমারকে দায়ী করে সীমান্তে বেড়া তোলার কাজ শুরু করে মণিপুর রাজ্য প্রশাসন। তবে এই নিয়ে কুকিজ সম্প্রদায়ের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে। সরকারি এই কাজে কোনো প্রকার সহযোগিতা না করার ঘোষণাও দিয়েছেন তারা। এমন অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দুই লাখ বর্গ কিলোমিটারের এলাকা নিয়ে আলাদা একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের তৎপরতার বিষয়ে গুঞ্জন উঠেছে। মণিপুরে থাকা কুকিদের একই সম্প্রদায়ভুক্ত বাসিন্দা রয়েছে সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের চিন রাজ্যে। বাংলাদেশের পাহাড়েও তাদের একটি অংশের বাস। মণিপুরে কয়েক মাস ধরেই চলছে অস্থিরতা। সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে উত্তাল মিয়ানমারেও স্বাধীনতার দাবিতে আলাদা রাজ্যে সক্রিয় রয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। এছাড়া সীমান্তের কাছাকাছি দেশগুলো সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সের বাসিন্দাদের রয়েছে অবিচ্ছেদ্য যোগাযোগ।