ডেস্ক রিপোর্ট : রাজধানীর তেজগাঁও কলেজের মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দারকে হেনস্তার কথা তদন্ত কমিটির কাছে স্বীকার করেছেন কনস্টেবল নাজমুল তারেক। এসময় তিনি ওই সময়ের ঘটনার বর্ণনাও দেন। তদন্ত কমিটি কনস্টেবেল তারেকের বক্তব্য ও শিক্ষক লতা সমাদ্দারের অভিযোগের মিল পেয়েছে বলে জানান। তবে ঘটনার শুরুর বিবরণ দুজনের বক্তব্যের বিপরীতমুখী। অভিযোগে লতা সমাদ্দার বলেছেন, রাস্তা দিয়ে চলার সময় কপালে টিপ পরা নিয়ে কনস্টেবল তারেক মোটরসাইকেলে বসা অবস্থায় তাকে ইভটিজিং করেন। কিন্তু তারেকের ভাষ্যমতে উল্টোপথে নাজমুলের মোটরসাইকেল চালানোর জেরে দুজনের বিতণ্ডা শুরু হয়।

সোমবার সকালে কনস্টেবল নাজমুল তারেককে শনাক্ত করার কথা জানায় পুলিশ। সেদিন বিকেলেই তাকে সাময়িক বরখাস্ত করে তদন্ত কমিটি গঠন করে ডিএমপির প্রটেকশন বিভাগ। ঘটনার তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ না থাকায় কী নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার শুরু, সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেননি তদন্তকারীরা। তাই নাজমুলের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হলে এবং লতা সমাদ্দারের জিডির তদন্তের সময় শেরেবাংলা নগর থানা দুজনকে মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। নাজমুলের বিষয়ে বিভাগীয় তদন্ত করছে ডিএমপির প্রটেকশন বিভাগের তদন্ত কমিটি। আর লতা সমাদ্দারের জিডির তদন্ত করছে শেরেবাংলা নগর থানা।

নাজমুল এ ঘটনায় অপরাধী কি না তার প্রাথমিক সত্যতা যাচাই করে ডিএমপির প্রটেকশন বিভাগের দুই সদস্যের তদন্ত কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। তবে বৃহস্পতিবার তিন দিন শেষ হলেও তদন্ত শেষ না হওয়ায় প্রতিবেদন দিতে পারেনি কমিটি। তবে নাজমুলের অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। নাজমুল স্বীকার করেছেন তিনি ওই শিক্ষককে গালিগালাজ করেছেন, এর মধ্যে টিপ নিয়েও কটূক্তি ছিল।

তবে বাগ্‌বিতণ্ডার শুরু নিয়ে নাজমুল তদন্ত কমিটিকে যা বলেছেন তার সঙ্গে লতা সমাদ্দারের বক্তব্যের অসংগতি রয়েছে বলে জানান তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা। নাজমুলের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে তিনি বলেন, ঘটনার দিন ডেইলি রোস্টার অনুযায়ী নাজমুলের ডিউটি ছিল সচিবালয় এলাকার পাশের বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটসহ আরও একটি প্রতিষ্ঠানে। সকাল ৮টায় তার কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার কথা ছিল। তবে নাজমুল জানান, সেদিন তালতলার বাসা থেকে বের হতে দেরি হয়। এরপর তাড়াতাড়ি কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য তিনি খামাড়বাড়ি এলাকায় এসে ইন্দিরা রোডের সামনে দিয়ে উল্টোপথে ফার্মগেট মোড়ে পৌঁছাতে চেষ্টা করেন। একই সময়ে শিক্ষক লতা সমাদ্দার হেঁটে তেজগাঁও কলেজে যাচ্ছিলেন। সেজান পয়েন্ট মার্কেটের সামনে উল্টোপথে আসা নাজমুলের মোটরসাইকেলের সামনে পড়ে যান তিনি। নাজমুল লতাকে সরাতে অসহিষ্ণু হয়ে তিনবার মোটরসাইকেলে হর্ন বাজান। এতে রেগে যান কলেজশিক্ষক লতা।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, বিরক্ত লতা সমাদ্দার নাজমুলকে বলেন, পুলিশ হয়ে উল্টোপথে এসে একে তো আইন ভেঙেছেন আবার হর্ন বাজাচ্ছেন কেন? নাজমুলও ক্ষিপ্ত হয়ে প্রত্যুত্তরে বলেন, এত বড় টিপ পরেছেন, এটাও তো দেখতে একটা চোখের মতো লাগে। তিন চোখ দিয়ে সামনে এত বড় মোটরসাইকেল দেখেন না? নাজমুলের এই কথার পর পরই টিপ নিয়ে ইভটিজিংয়ের কারণ জানতে চান লতা সমাদ্দার। এ সময় নাজমুল নোংরা ভাষায় তাকে গালিগালাজ করেন। লতা নিজের কর্মস্থলের পরিচয় দিয়ে নাজমুলের পথ রোধ করার চেষ্টা করেন। এর মধ্যেই নাজমুল মোটরসাইকেল টান দিলে ছিটকে পড়েন লতা সমাদ্দার।

পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, তবে নাজমুলের এই বক্তব্যের সঙ্গে অভিযোগকারীর বর্ণনা মিলছে না। অভিযোগে বলা হচ্ছে, নাজমুল স্টার্ট বন্ধ করে বাইকের ওপর বসে ছিলেন। লতা সমাদ্দার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় টিপ পরায় তাকে ইভটিজিং করা হয়। ঘটনাস্থলের কোনো ফুটেজ না থাকায় আমরা দুজনের কারও কথাই সত্য বলে ধরে নিচ্ছি না। বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখতে হবে। তাদের দুজনকে যখন মুখোমুখি করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তখন পুরো চিত্র পরিষ্কার হবে। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে কলেজশিক্ষক লতা সমাদ্দার শুক্রবার বলেন, ঘটনা যেমন ছিল, ঠিক সেভাবেই আমি অভিযোগে লিখেছি। এখানে কোনো ভুল নেই। আমার স্পষ্ট মনে আছে বন্ধ থাকা বাইকের ওপর বসে ছিলেন ওই পুলিশ সদস্য। তার বাম দিক অতিক্রম করার সময় আমাকে বলেন, টিপ কেন পরছিস? আমি ঘুরে যখন দেখলাম একজন পুলিশ আমাকে এভাবে বলছে, তখন আমি তার কাছে এর ব্যাখ্যা চাই। তখন তিনি আরও গালিগালাজ করে সেখান থেকে চলে যেতে চাইলে আমি তাকে থামানোর জন্য পোশাকের লিনিয়ার টেনে ধরি। এতেও না থামলে তার বাইকের বাম পাশের লুকিং মিররের অংশ টেনে ধরার চেষ্টা করি, কিন্তু থামাতে পারিনি। আমিই বাইকের নিচে চাপা পড়তে যাচ্ছিলাম। আর একটু সামনে গিয়ে তিনিও বাইক নিয়ে কাত হয়ে পড়ে যান।

এদিকে কনস্টেবল নাজমুল তারেকের ক্ষেত্রে শিক্ষককে হেনস্তা করার অভিযোগ ছাড়াও আরও কিছু অনিয়মকে বিবেচনায় নিচ্ছে ডিএমপি। এগুলো হলো, কর্মস্থলে সময়মতো উপস্থিত না থাকা, হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালানো, উল্টোপথে মোটরসাইকেল চালানো এবং পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার। পুলিশের ঊর্ধ্বতন ওই কর্মকর্তা জানান, বাহিনীর ইমেজের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নাজমুল তারেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলার সময় এই অনিয়মগুলো উল্লেখ করা হবে।