নিজস্ব প্রতিবেদক : নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন সংস্কার উদ্যোগে জাতিসংঘ দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছে।

শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা হয়েছে।

বুধবার নিউইয়র্কে জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল ফর পলিটিক্যাল অ্যান্ড পিস বিল্ডিং অ্যাফেয়ার্স রোজমেরি ডিকার্লো এবং সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিনের মধ্যে এক বৈঠকে এ সমর্থন জানানো হয়।

পররাষ্ট্র সচিব বৈঠকে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে জাতিসংঘের সমর্থন ‘গুরুত্বপূর্ণ’বলে অভিহিত করেন। এসময় জাতিসংঘের সমর্থনের জন্য ডিকার্লোকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

বৈঠকে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশের অবদান এবং রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা হয়। পররাষ্ট্র সচিব জাতিসংঘ শান্তি মিশন কার্যক্রমের বিষয়ে ইউএসজির মাধ্যমে জাতিসংঘের কাছে ঊর্ধ্বতন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে বাংলাদেশি নাগরিকদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর অনুরোধ জানান।

এসময় জসিম উদ্দিন রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সংকট সমাধানে ‘বিশ্বব্যাপী মনোযোগের পাশাপাশি বৈশ্বিক পদক্ষেপের’ ওপরও জোর দেন।

তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “মিয়ানমারের বর্তমান সংঘাতময় পরিস্থিতি রোহিঙ্গাদের নতুন করে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের দিকে চালিত করছে।”

সমগ্র অঞ্চলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে পররাষ্ট্র সচিব মিয়ানমারের সংকট সমাধান এবং রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে বৃহত্তর ভূমিকা পালনের জন্য জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি এ লক্ষ্যে মহাসচিবের বিশেষ দূতকে বাংলাদেশের পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাসও দেন।

পররাষ্ট্র সচিব রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আহ্বানের জন্য প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রস্তাবের কথা স্মরণ করেন এবং এ বিষয়ে জাতিসংঘের সহায়তার অনুরোধ করেন।

জবাবে আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার দপ্তরের মধ্যে চলমান সহযোগিতার প্রশংসা করেন।

তিনি প্রধান ক্ষেত্রগুলোতে সংস্কার উদ্যোগ এগিয়ে নিতে আরও সহযোগিতার প্রস্তাব দেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের ভূমিকারও প্রশংসা করেন তিনি।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে ডিকার্লো আশা প্রকাশ করেন, মহাসচিব জুলি বিশপের নতুন বিশেষ দূত এই সমস্যাটি সমন্বিতভাবে মোকাবেলায় সকল অংশীজনকে সঙ্গে নিয়ে কাজ চালিয়ে যাবেন।

এর আগে পররাষ্ট্র সচিব ‘নারী অগ্রগতি’ বিষয়ক সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটিতে বিবৃতি দেন।

বিবৃতিতে তিনি নারী শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্থান একত্রিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।

জসিম নারী শিক্ষা, লিঙ্গ সমতা, ডিজিটাল বিভাজন নিরসন এবং নারীদের স্বাবলম্বী করতে তাদের সুস্থতা ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগের ওপর জোর দেন।

পররাষ্ট্র সচিব ১৯৯৫ সালের বেইজিং ঘোষণা এবং প্ল্যাটফর্ম ফর অ্যাকশন, সিডো এবং নারী, শান্তি ও নিরাপত্তা এজেন্ডার প্রতি বাংলাদেশের অঙ্গীকার তুলে ধরেন এবং জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য হিসেবে ২০০০ সালে এর প্রতিষ্ঠায় ১৩২৫ নম্বর প্রস্তাব গ্রহণে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন।