গ্রামের সংবাদ ডেস্ক : ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানোর পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গত ছয় দিনে মোট ১৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি হত্যা, একটি গণহত্যা, একটি অপহরণ ও একটি হত্যাচেষ্টা মামলা।

সবশেষ গতকাল রোববার ঢাকা, জয়পুরহাট, নাটোর ও রংপুরে চারটি হত্যা মামলা হয়েছে। এর সবই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় দায়ের করা। এ ছাড়া ১১ বছর আগে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে গণহত্যার অভিযোগে রোববার ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব মামলার আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তার একাধিক মন্ত্রী, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী।

ঢাকায় ২ শিক্ষার্থী হত্যায় মামলা
ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন কাউসার ও ওমর ফারুক হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য অ্যাডভোকেট নাসরিন বেগম ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে মামলার আবেদন করেন। পরে শুনানিতে হাকিম তরিকুল ইসলাম অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করতে সূত্রাপুর থানা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

অন্য আসামিরা হলেন– সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক উপমহাপরিদর্শক সৈয়দ নুরুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার ও ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান।

শাপলা চত্বরে গণহত্যার অভিযোগে মামলা
মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ঢাকা মহানগর হাকিম জাকী-আল ফারাবী গতকাল রোববার মতিঝিল থানার ওসিকে ওই অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী এদিন মামলার আবেদন করেন।

অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন– সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল-আলম হানিফ, তৎকালীন আইজিপি হাসান মাহাবুব খন্দকার, তৎকালীন র‍্যাবপ্রধান এ কে এম শহিদুল হক, তৎকালীন ডিসি মোহাম্মদ বিপ্লব কুমার সরকার। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ জনকে।

১৩ দফা দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলে সমাবেশ ডাকে হেফাজতে ইসলাম। মামলার আবেদনে বলা হয়, ওই রাতে শেখ হাসিনার মদদে অন্য আসামিরা রাস্তা ও বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দিয়ে মাদ্রাসাছাত্র ও পথচারীর ওপর গণহত্যা চালায়। তারা লাশগুলো গুম করে ফেলে।

খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় মামলা
বিরোধী দলে থাকাকালে ২০১৫ সালে কারওয়ান বাজার এলাকায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ ১১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল রোবরার ঢাকা মহানগর উত্তর ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন তেজগাঁও থানায় এ মামলা করেন। মামলায় ১১৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৫০০-৭০০ জনের কথা এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

লালবাগে শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ হত্যা মামলা

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে নিহত শিক্ষার্থী খালিদ হাসান সাইফুল্লাহ হত্যায় ঢাকার লালবাগ থানায় মামলা করা হয়। এতে শেখ হাসিনাসহ ৯১ জনকে আসামি করা হয়েছে। ১৮ জুলাই আজিমপুরে পুলিশের গুলিতে মারা যান খালিদ। ঘটনার এক মাস পর তার বাবা লালবাগ থানায় মামলার আবেদন করেন। গতকাল রোববার বাদীপক্ষের আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম জানান, ডিউটি অফিসার আশ্বাস দিয়েছেন, মামলাটি আজকালের মধ্যে এজাহারভুক্ত হবে।

জয়পুরহাটে শিক্ষার্থী নজিবুল হত্যা মামলা
জয়পুরহাটে কলেজশিক্ষার্থী নজিবুল সরকার বিশাল নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের, জয়পুরহাট-১ ও ২ আসনের সাবেক এমপিসহ ১২৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে।

নজিবুলের বাবা মজিদুল সরকার আদালতে এ মামলা করেন। জয়পুরহাট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সদর কোর্টের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমান মামলাটি আমলে নিয়ে এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করতে সদর থানাকে নির্দেশ দেন। ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হন নজিবুল।

নাটোরে স্কুলছাত্র ইয়াসিন হত্যা মামলা
নাটোরে স্কুলছাত্র ইয়াসিন ইসলামকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা, নাটোর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল, নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলিসহ ১১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সদর থানায় মামলাটি করেন ইয়াসিনের বাবা ফজের আলী।

তিনি এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ৪ আগস্ট শহরের মাদ্রাসা মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে শেখ হাসিনার নির্দেশে সাবেক এমপি শিমুলসহ উল্লিখিত আসামিরা ইয়াসিনকে অপহরণ করেন। পরদিন শিমুলের বাসায় আটকে রেখে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।

রংপুরে শিক্ষার্থী তাহির হত্যা মামলা
রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল-তাহির নিহতের ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪০ জনকে। রংপুরের কোতোয়ালি মেট্রো থানার আমলি আদালত ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে মামলা করেন তাহিরের বাবা আবদুর রহমান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ১৯ জুলাই মিছিল বের হলে রংপুর সিটি বাজারের সামনে পুলিশের গুলিতে তাহির নিহত হন।

তাহির হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন– সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, রংপুর রেঞ্জের সাবেক ডিআইজি আবদুল বাতেন, সাবেক পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার উত্তম কুমার পাল, এডিসি ক্রাইম উৎপল কুমার রায়, রংপুর মেট্রোর এডিসি (ডিবি) নুর ইসলাম পাটোয়ারী, কোতয়ালি থানার ইনচার্জ মোন্তাসির বিল্লাহ, মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক এ কে এম ছায়াদত হোসেন বকুল, সাবেক সংরক্ষিত এমপি নাছিমা জামান ববি।

মোহাম্মদপুরে মুদি দোকানি হত্যা মামলা
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার ৯ দিনের মাথায় শেখ হাসিনার নামে ১৩ আগস্ট প্রথম হত্যা মামলা হয়। ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে পুলিশের গুলিতে এক মুদি দোকানির মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেন আদাবর এলাকার দুগ্ধ খামারি আমীর হামজা শাতিল।

বাদীর জবানবন্দি নিয়ে মামলার নথি পর্যালোচনা করে মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরী আবেদনটি মোহাম্মদপুর থানাকে সরাসরি এজাহার (এফআইআর) হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন। দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় দায়ের করা এ মামলা আদালত আমলে নেওয়ায় আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে।

আবু সায়েদ হত্যা মামলায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়াও আসামি করা হয়েছে সাবেক সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ এবং যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকারকে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা পুলিশ কর্মকর্তা বা পুলিশের সদস্য ও তৎকালীন সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।

মোহাম্মদপুরে শিশু ও শেরেবাংলা নগরে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক হত্যা মামলা
গত ১৯ জুলাই রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকায় হেলিকপ্টার থেকে র‍্যাবের করা গুলিতে দারুননাজাত ইসলামীয়া মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র জোবাইদ হোসেন ইমন (১২) নিহত হয়। এ ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৬ জনের নামে ১৫ আগস্ট একটি হত্যা মামলার আবেদন করা হয়েছে। ইমনের মামা তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা আবদুল্লাহ আবু সাঈদ ভুঁইয়া বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

ঢাকা মহানগর হাকিম রাজেশ চৌধুরীর আদালতে এ মামলার আবেদন করেন আবদুল্লাহ আবু সাঈদ ভুঁইয়া। আদালত বাদীর জবানবন্দি নিয়ে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার জন্য মোহাম্মদপুর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন।

শেখ হাসিনা ছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন– আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক, তাজুল ইসলাম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, হাছান মাহমুদ ও মোহাম্মদ এ আরাফাত, সালমান এফ রহমান, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, র‍্যাবের সাবেক ডিজি হারুন অর রশিদ, সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি খ মাহিদ উদ্দিন, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ এবং ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা র‍্যাব সদস্যদেরও আসামি করা হয়েছে।

অন্যদিকে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক শাহাবুদ্দিনকে (৩৫) হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ৫ আগস্ট শেরেবাংলা নগর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শাহাবুদ্দিন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ছাত্র-জনতার ওপর পুলিশের গুলিতে অসংখ্য হতাহত হয়। ৫ আগস্ট সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে ভিকটিম তাঁর পরিবারের সদস্যদের জন্য খাবার আনতে গিয়ে ঘটনাস্থল পশ্চিম আগারগাঁও চৌরাস্তায় ওঠার সময় হঠাৎ তাঁর মাথায় পুলিশের ছররা গুলি লাগে। এরপর রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন শাহাবুদ্দিন। আশপাশের লোকজন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে এ মামলার আবেদন করেন শাহাবুদ্দিনের বাবা আবুল কালাম। হাকিম ফারাহ দিবা ছন্দা গতকাল মামলার আবেদনটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য শেরেবাংলা নগর থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। বাদীর আইনজীবী লিটন মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এ মামলার অন্য আসামিরা হলেন– সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, আসাদুজ্জামান খান কামাল, ড. হাছান মাহমুদ, মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সালমান এফ রহমান, পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার মো. হারুন অর রশীদ ও যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার।

হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ
শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের আরও একটি অভিযোগ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থায় দায়ের করা হয়েছে। গত ২০ জুলাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চিটাগাং রোডে নিহত মেহেদীর বাবা মো. সানাউল্লাহর পক্ষে গতকাল আবেদনটি দাখিল করেন আইনজীবী গাজী এমএইচ তামিম। ঘটনার দিন বিকেল ৫টায় মেহেদীর মাথায় গুলি লেগে মগজ বের হয়ে যায়। এর আগে বুধবার তদন্ত সংস্থায় প্রথম অভিযোগ দায়ের করেছিলেন নিহত সিয়ামের বাবা বুলবুল কবির।

অপরাধের ধরনে বলা হয়েছে, ১ থেকে ৯ নম্বর আসামির নির্দেশ ও পরিকল্পনায় অন্য আসামিরা দেশি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলি করে আন্দোলনকারী সাধারণ নিরস্ত্র ছাত্র-জনতাকে হত্যা করে তাদের সমূলে বা আংশিক নির্মূল করার উদ্দেশ্যে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেন।

বগুড়ায় শিক্ষক সেলিম হোসেন হত্যা মামলা
বগুড়ায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ১০১ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা হয়েছে। এতে আসামি করা হয়েছে অজ্ঞাত ৩৫০ জনকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট শিক্ষক সেলিম হোসেনকে হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা সেকেন্দার আলী বগুড়া সদর থানায় গতকাল শুক্রবার মামলাটি করেন। মামলায় শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরকে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বগুড়া-৫ আসনের সাবেক এমপি মজিবর রহমান মজনু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বগুড়া-৬ আসনের সাবেক এমপি রাগেবুল আহসান রিপু, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি টি জামান নিকেতার নাম রয়েছে।

চট্টগ্রামে শিক্ষার্থী হত্যা মামলা
কোটা সংস্কার আন্দোলনে চট্টগ্রামে এক শিক্ষার্থীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে গত শুক্রবার রাতে নগরীর চান্দগাঁও থানায় মামলা হয় শেখ হাসিনা, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ৩৪ জনের নামে। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৪০-৫০ জনকে। মামলার বাদী নিহত শিক্ষার্থী তানভীর সিদ্দিকীর চাচা মোহাম্মদ পারভেজ।

নারায়ণগঞ্জে তরুণ হত্যা মামলা
নারায়ণগঞ্জে আবুল হাসান নামে তরুণকে হত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ ৪৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শনিবার রাতে আবুল হাসানের বড় ভাই আবুল বাশার সদর মডেল থানায় এ মামলা করেন।

চান্দগাঁও থানায় করা মামলায় অন্য আসামিদের মধ্যে নগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান চৌধুরী, চসিকের ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসরারুল হক, জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন ও চকবাজারের ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুর মোস্তফা টিনুর নাম রয়েছে। এজাহারে বলা হয়, তানভীর গত ১৮ জুলাই দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ‘শাটডাউন’ কর্মসূচিতে অংশ নেন। শিক্ষার্থীরা বহদ্দারহাট কাঁচাবাজারের সামনে রাস্তার ওপর শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিলেন। বিকেলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে আসামিরা চাপাতি, কিরিচ ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে সেখানে হামলা চালায়। তারা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করলে তানভীরসহ অনেকে গুলিবিদ্ধ হন। তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

৫ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন বন্দর উপজেলার কুশিয়ারা এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে আবুল হাসান। এ ঘটনায় শেখ হাসিনা, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমানসহ ৪৮ জনের নাম উল্লেখ এবং আরও দুই শতাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান, শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, শ্যালক বিসিবি পরিচালক তানভীর আহমেদ টিটু এবং নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর ছোট ভাই মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বল। সুত্র: দৈনিক সমকাল।