নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত অন্তত ছয়জনের প্রাণহানি ঘটেছে। গত কয়েক দিন ধরে চলা আন্দোলন সহিংস রূপ নেওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রভাবশালী সব গণমাধ্যম গুরুত্বের সঙ্গে এই বিষয়ে খবর পরিবেশন করছে।

এবার বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানালেন জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক। তিনি বলেছেন, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করা মৌলিক মানবাধিকার। বাংলাদেশ সরকারের উচিত মানুষের এ অধিকার নিশ্চিত করা।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) জাতিসংঘ মহাসচিবের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এ মন্তব্য করেন।

ব্রিফিংয়ে ডুজারিকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশজুড়ে আন্দোলন চলছে। সরকারি ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে কি জাতিসংঘের মহাসচিব অবগত আছেন?

জবাবে স্টিফেন ডুজারিক বলেন, “হ্যাঁ, আমরা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত। উদ্বেগ নিয়েই গভীরভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আমি মনে করি, বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্য সব জায়গায় মানুষের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার অধিকার রয়েছে।”

জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র আরও বলেন, “যেকোনো হুমকি ও সংঘাত থেকে প্রতিবাদকারীদের রক্ষা করার উদ্যোগ নিতে আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। বিশেষ করে তরুণ, শিশু ও বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের মতো যাঁদের বাড়তি নিরাপত্তার প্রয়োজন রয়েছে।”

প্রসঙ্গত, চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন মঙ্গলবার বেশ সহিংস রূপ নেয়। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষে ছয়জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন কয়েকশ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এ অবস্থায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় সারা দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। একইসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের সব কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে।

এর আগে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা প্রসঙ্গে কথা বলার সময় মন্তব্য করেন “মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?” প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তারা ধরে নিয়েছেন “রাজাকারের নাতিপুতি” তাদেরই বলা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রবিবার মধ্যরাত থেকে আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।