আন্তর্জাতিক ডেস্ক : সাধারন মানুষের ওপর নৃশংস দমন-পীড়নের অভিযোগে মিয়ানমারের সদ্য নিযুক্ত বিমানবাহিনীর প্রধানসহ সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর সমন্বিত নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং কানাডার মতো প্রভাবশালী তিনটি দেশ। শনিবার (২৬ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। মার্কিন এই নিষেধাজ্ঞায় পড়েছে মিয়ানমারের তিন অভিযুক্ত অস্ত্র ব্যবসায়ী ও তাদের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলো এবং অনুমোদিত অস্ত্র ব্যবসায়ী টে জাও দ্বারা নিয়ন্ত্রিত দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও।

এ ছাড়াও মিয়ানমারের সেনা ইউনিট ৬৬তম লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যারা গত বছর বড়দিনের উৎসবের আগে দেশের দক্ষিণপূর্ব কায়াহ রাজ্যে গাড়িতে আগুন দিয়ে ৩০ জন বেসামরিক লোককে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন এক বিবৃতিতে বলেন, বার্মার জনগণের প্রতি আমাদের দৃঢ় সমর্থন দেখানোর জন্য, সামরিক শাসনের (মিয়ানমারে) ক্রমবর্ধমান সহিংসতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে আমরা এ পদক্ষেপগুলো নিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, সহিংসতা বন্ধ করে বার্মাকে গণতন্ত্রের পথে ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী এবং তাদের সমর্থনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া অব্যাহত রাখব। যুক্তরাজ্য অস্ত্র বিক্রেতা এবং তাদের সঙ্গে সংযুক্ত সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, যারা মিয়ানমার বিমানবাহিনীকে বিভিন্ন অস্ত্র সরবরাহ করে। বেসামরিক গ্রামগুলোতে মিয়ানমার বিমানবাহিনীর বোমা হামলায় হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।অন্যদিকে তুন অংসহ মিয়ানমারের চার ব্যক্তি এবং দুটি কোম্পানিকে কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে কানাডা।

এই মাসের শুরুর দিকে, মিয়ানমারে সামরিক বাহিনী কর্তৃক সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদেরকে নির্যাতন এবং নির্বিচার হত্যাসহ যুদ্ধাপরাধের জন্য সামরিক বাহিনীকে অভিযুক্ত করেছে জাতিসঙ্ঘ।এদিকে সম্প্রতি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর ওপর দীর্ঘ দিনের সহিংসতাকে বাইডেন প্রশাসন আনুষ্ঠানিকভাবে ‘গণহত্যা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ২৫ অগাস্টের পর থেকে সহিংসতার মুখে কয়েক মাসে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন ৮ লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে কয়েক দফায় আসেন আরো কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ। রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে অবস্থিত জাতিসঙ্ঘের সর্বোচ্চ আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলা চলছে। দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ২০১৯ সালে মামলাটির প্রাথমিক শুনানি শুরু হয়। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের নভেম্বরে আইসিজেতে মামলাটি করে আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে গণধর্ষণ, হত্যা ও বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সূত্র : আলজাজিরা