সানজিদা আক্তার সান্তনা : বর্তমান সময়ে মানুষের খাবার নিয়ে সচেতনতা অনেক। প্রতিদিনের খাবারে কি কি পুষ্টিগুণ আছে, আর কি কি খেলে প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও পুষ্টি পাওয়া যাবে তা নিয়ে সচেতন অনেকেই। আর তাই নিত্য নতুন খাবারে মনোযোগ সবার।

‘চিয়া সিড’ ঠিক তেমনই এক সুপারফুড চিয়া সিড। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষের খাবারের তালিকায় এখন বেশ জনপ্রিয়।

চিয়া সিড কি?
চিয়া সিড মূলত মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া উদ্ভিদের বীজ। এটি মধ্য আমেরিকার অনেক অংশে পাওয়া যায়। এটি সাধারণত শস্যের তালিকায় পড়লেও একে এক ধরণের ভেষজও বলা হয়। প্রাচীন অ্যাজটেক জাতির প্রধান খাদ্য তালিকায় এটি অন্তর্ভুক্ত বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করে থাকেন। চিয়া সিড দেখতে অনেকটা তিলের দানার মতো।

পুষ্টিগুণ
পৃথিবীর পুষ্টিকর খাবারগুলোর মধ্যে চিয়া সিড অন্যতম। প্রাচীন অ্যাজটেক জাতি একে সোনার চেয়েও মূল্যবান মনে করতো।

বীজ জাতীয় যে কোনো খাবারই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। চিয়া সিডে আছে প্রচুর ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড ও ক্যাফিক এসিড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম এবং দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় খাদ্য আঁশ।

উপকারিতা
১. চিয়া সিডস এ রয়েছে প্রচুর পরিমাণ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে।

২. চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-৩ হৃদরোগের ঝুঁকি ও ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে

৩. বিশেষজ্ঞদের মতে মুরগির ডিম থেকে ৩ গুণ বেশি উচ্চমাত্রার প্রোটিন আছে চিয়া সিডে, যা মানবদেহের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও উপকারী।

৪. দুধের চেয়ে ৫ গুণ বেশি ক্যালসিয়াম পাওয়া যায় চিয়া সিডে। যা হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা এবং মজবুত করে তুলতে বিশেষ উপকারী।

৫. গবেষকদের দাবি, চিয়া সিডে এ স্যালমন মাছের চেয়ে ৮ গুণ বেশি ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। যা হৃদরোগের ঝুঁকি ও ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে

৬. চিয়া সিড ব্লাড সুগার (রক্তের চিনি) স্বাভাবিক রাখে, যা ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি কমায়

৭. এ ছাড়া চিয়া সিড শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের হতে সাহায্য করে,গ্যাসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে এবং ভালো ঘুমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি ত্বক, চুল ও নখ সুন্দর রাখে।

খাওয়ার নিয়ম
চিয়া সিডের নিজস্ব কোন স্বাদ না থাকায় এটা সাধারণত সালাদ, কাস্টার্ড, স্মাদি যে কোন খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া যায়।

তবে খাওয়ার আগে ৩০ মিনিট পানিতে ভিনিয়ে রাখলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে দ্রুত ওজন কমাতে খালি পেটে সকালে ও রাতে ঘুমানোর আগে ১ গ্লাস পানির মধ্যে ২ চা চামচ চিয়া সিড ও ২ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

অপকারিতা
প্রতিটি খাবারের উপকারিতার পাশাপাশি বিপরীত অপকারিতাও থাকে কিছুনা কিছু। তেমনই চিয়া সিডের ও কিছু অপকারিতা রয়েছে।

১. কয়েকজন বিজ্ঞানীর দ্বারা পরিচালিত পরীক্ষায় দেখা গেছে যে চিয়া সিড প্রোটেস্ট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সারকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। সুতরাং এটি সীমিত পরিমাণে ব্যবহার করা উচিত।

২. চিয়া সিড বেশি খেলে পেটের সমস্যা হতে পারে। কারণ চিয়া বীজের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। তাই অল্প পরিমাণে চিয়া খাওয়া উচিত। আর স্বাস্থ্য সমস্যা মনে হলে সাথে সাথে এটি খাওয়া বন্ধ কড়া উচিত।

৩. অতিরিক্ত চিয়া সিড খেলে ওজন অস্বাভাবিকভাবে কমে যেতে পারে।

৪. চিয়া সিড দেহের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে রক্তচাপ কমায়। তাই অতিরিক্ত চিয়া সিড সেবনে রক্তচাপ বেশি কমে যাওয়ান সম্ভাবনা থাকে।