সারাবিশ্ব ডেস্ক : বর্তমানে বাংলাদেশের পোশাক খাতের অর্ডার ধীরে ধীরে চলে যাচ্ছে ভারতের তিরুপুরে, যা একসময় বাংলাদেশের প্রধান প্রতিযোগী ছিল। তিরুপুর শহরটি ভারতের অন্যতম বৃহৎ টেক্সটাইল হাব হিসেবে পরিচিত, এবং এখানকার প্রায় ৫ হাজার পোশাক কারখানা বর্তমানে ৯৫ শতাংশ সক্ষমতায় চলছে। কয়েক মাস আগে এসব কারখানা ৬০-৬৫ শতাংশ সক্ষমতায় চলত, কিন্তু এখন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য থেকে আসা অর্ডারের ফলে সেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।

তিরুপুর এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (টিইএ) প্রেসিডেন্ট কে এম সুভ্রমানিয়াম জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্যের ক্রেতারা এখন স্যাম্পল চাচ্ছেন এবং শুল্ক থেকে রেহাই পেতে ফ্রি ট্রেড অ্যাগ্রিমেন্ট (এফটিএ) চুক্তি করতে আগ্রহী। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগামী বছরের শুরুতেই এই চুক্তি বাস্তবায়িত হবে।

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কিছু পশ্চিমা দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য, তাদের পোশাক অর্ডার ভারতীয় কারখানাগুলোতে স্থানান্তরিত করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে গ্রীষ্মকালীন পোশাক তৈরির অর্ডার এসেছে, এবং এখন ভারতীয় কারখানাগুলোতে পূর্ণমাত্রায় উৎপাদন চলছে। চলতি অর্থবছরে তিরুপুরের পোশাক খাত থেকে আয় ছিল ৩৫ হাজার কোটি রুপি, এবং আগামী অর্থবছরে এই আয় বেড়ে ৪০ হাজার কোটি রুপি হতে পারে।

ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স ন্যাশনাল কমিটি অন টেক্সটাইলসের চেয়ারম্যান সঞ্জয় জৈন জানিয়েছেন, মহামারির পর যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানি কমে গিয়েছিল, তবে এখন তারা নতুন করে অর্ডার দিচ্ছে। এ কারণে কিছু অর্ডার বাংলাদেশ থেকে ভারত চলে আসছে, যার প্রধান কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। তিনি আশা করছেন, আগামী অর্থবছরে ভারতের পোশাক রপ্তানি আয় ১ হাজার ৮৫০ কোটি ডলার থেকে ১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার পর্যন্ত পৌঁছাবে।

বাংলাদেশ থেকে যেসব অর্ডার ভারত আসছে, সেগুলো সামলানোর জন্য ভারতের পোশাক খাতের বড় কারখানাগুলোর যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। তবে, কিছু ছোট কারখানার অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ভারতের পোশাক তৈরির প্রতিষ্ঠান আরভিন্দ লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান পুনিত লালভাই বলেন, “বাংলাদেশের পরিস্থিতি দেখিয়ে দিয়েছে যে, পোশাক খাতের জন্য একটি দেশের উৎপাদন সক্ষমতা, দক্ষ কর্মী এবং স্থিতিশীল সরকার কতটা গুরুত্বপূর্ণ।”

ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবর মাসে ভারতের পোশাক রপ্তানি ৩৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। বছরের প্রথম দিকে রপ্তানি আয় ছিল ৯০ কোটি ৮৭ লাখ ডলার, যা অক্টোবর নাগাদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২০ কোটি ডলারে।