সানজিদা আক্তার সান্তনা : ব্ল্যাকবেরি বা কালোজাম অধিক জনপ্রিয় একটি ফল। গ্রীষ্মকালে আম এর মতই এর জনপ্রিয়তা। কালচে বেগুনি রঙের এই ফলটি খেতেও যেমন সুস্বাদু, তেমনই পুষ্টিগুণে ভরপুর । ছোট বড়ো সকলেরই এই ফল বেশ পছন্দের। আর যদি আপনি এই ফল পছন্দ না করেন তবে এর উপকারিতা জানলে আপনি নিজেও এই ফল পছন্দ করবেন। তাই আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় হলো কালোজাম।

আলোচনার শুরুতেই জেনে নেব কালোজামএ কি কি আছে?এতে প্রচুর পরিমানে বিভিন্ন উপকারি উপাদান যেমন, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, সোডিয়াম, এছাড়াও ভিটামিন এ, সি, বি-৬, ও আরও আনেক উপকারী উপাদান থাকে। যা শরীরকে ভালো রাখার জন্য প্রতিদিন দরকার। হয়তো জানলে অবাক হবেন শুধু ফলই নয়, এর পাতা ও বীজ বিভিন্ন চিকিত্‍সার কাজে ব্যবহার করা হয়।

চলুন এবার এই কালো জামের গুনাগুন সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নি –

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে –
অনেকেই হয়তো জানেন না কালো জাম অনেকদিন ধরেই ডায়াবেটিসের চিকিত্‍সার জন্য ব্যবহৃত হয়। কালো জামের মধ্যে আছে এমন কিছু উপাদান যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভীষণ ভাবে সাহায্য করে। বিশেষ করে এর বীজ রক্তের সুগার লেবেল কমানোতে একটি প্রমাণিত সমাধান। আর তাই কালো জামকে ডায়াবেটিস বিরোধী বলা হয়। সুতরাং ডায়াবেটিস মুক্ত থাকতে আপনি কিন্তু প্রতিদিন আপনার খাদ্যাভ্যাসে কালোজাম কে স্থান দিতেই পারেন।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তৈরী
কালো জাম হল অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভাণ্ডার। তাই শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তৈরি করার জন্য কালোজামের জুড়ি মেলা ভার। অন্যান্য যেকোনো ফল বা সব্জি যেগুলি সাধারণত আমরা রোজ খেয়ে থাকি সেগুলির থেকে কালো জামে সবথেকে বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। আর আমাদের রোজকার জীবনে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খুবই প্রয়োজনীয়। কারন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আমাদের শরীরকে ভেতর থেকে ফিট রাখে।

হজমে সহায়ক-
কালো জাম হজম করতে সাহায্য করে। হজমের কারণে হওয়া অ্যালসার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাই নিয়মিত কালো জাম খেলে পেটের গোলমাল থেকেও রক্ষা পাবেন আপনি।

দাঁত ভালো রাখে
কালোজাম দাঁত ভালো রাখতে সাহায্য করে। হ্যাঁ এটা খাওয়ার সময় হয়তো আপনার দাঁত কালো হয়ে যেতেও পারে কিন্তু আপনার দাঁতের গোড়া মজবুত করতে এর বিকল্প নেই।সাথে সাথে স্পাইরিয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।

ত্বককেও ভালো রাখে
কালোজাম ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন বার্ধক্য জনিত সমস্যা, বা নানান রকম rash ইনফেকশন দূর করতে নিয়মিত খাওয়া শুরু করুন কালোজাম।

ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে-
আগে হাতেগোনা কিছু মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হতেন। কিন্ত আমাদের অনিয়মিত লাইফস্টাইলের ফলে আজ ক্যান্সারের ঝুঁকি ভীষণভাবে বেড়ে গেছে । আর কালো জাম ক্যান্সার প্রতিরোধে ভীষণভাবে সাহায্য করে। এতে থাকা প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরকে কান্সারে আক্রান্ত হবার হাত থেকে রক্ষা করে। কালো জাম শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পরতে দেয় না। এছাড়া এটি প্রস্টেট ক্যান্সার সারিয়ে তুলতে বিশেষ ভাবে সাহায্য করে। তাই নিজেকে সুস্থ্য রাখতে খেতে হবে কালোজাম।

মানসিক স্বাস্থ্য
একটু অবাক লাগলেও এটা কিন্তু সত্যি আমরা সব সময় মানসিক দিক থেকে সবাই সুস্থ থাকি না। কিন্ত কালোজাম এমন একটি ফল
যা শরীরকে ভালো রাখার সাথে সাথে মনকে ভালো রাখতেও সাহায্য করে। এতে থাকা গ্লুকোজ কাজ করার শক্তি বাড়ায়। ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। তার ফলে মস্তিষ্ক দ্রুত চলতে থাকে। স্ট্রেসকে কমাতে সাহায্য করে। যার ফলে আপনার মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

হার্টকে ভালো রাখে
কালো জাম হার্টকে ভালো রাখতেও সাহায্য করে। এতে থাকা ভিটামিন সি, বি-৬, ফাইবার, রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমান কমায়। তার ফলে হার্ট সুস্থ থাকে ও হার্টের অসুখে আক্রান্ত হবার সম্ভবনা থাকে না।

এছাড়াও এটি শরীরে দুষিত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমান কমায়। এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতেও বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।

ধরুন আপনার অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাচ্ছে। কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছেন না? কিছু খেতে ভয় পাচ্ছেন? তাহলে আপনাকে বলব আপনি কালোজাম খাওয়া শুরু করুন। কারণ ওজন কমাতে কিন্তু কালোজাম সাহায্য করে।

সর্দিকাশি থেকে চিরতরে মুক্তি
এগুলি ছাড়াও কালো জাম সর্দি কাশি কমাতে সাহায্য করে। যদি খুব সর্দিকাশিতে ভোগেন তাহলে রোজ কালোজাম খান। এতে থাকা ভিটামিন এ, সি, বি-৬ শরীরের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বাড়ায়। আর রোগ-প্রতিরোধক্ষমতা বারলে সর্দি-কাশি লাগার সম্ভাবনা কমে যায়। আর ধীরে ধীরে সর্দি-কাশি একেবারে চলে যায়।

বহুমূত্র রোগ নিরাময়
বহুমূত্র রোগ কত বড় সমস্যা এটা শুধুমাত্র যাদের আছে তারা উপলব্ধি করতে পারবেন। অনেক চেষ্টা করেছেন কমানোর কিন্তু কিছুতেই কমছে না? ডাক্তার দেখিও কোন ফোন নেই ….

তাহলে জেনে রাখুন
জামের বীজ বহুমুত্র রোগ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। নিয়মিত খেলে এই সমস্যা থেকে চিরতরে মুক্তি পেটে পারেন সহজে।

মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে
২০০৯-এর একটি সমীক্ষা করা হয়েছিল। সেখানেই কিছুসংখ্যক ইঁদুরকে কালোজাম খাওয়ানো হয়েছিল আর কিছু সংখ্যক ইঁদুরকে কালোজাম খাওয়ানো হয়নি।দেখা গেছে যে ব্ল্যাকবেরি খাওয়ানো ইঁদুরগুলি কোন ইঁদুর দের তুলনায় জ্ঞানীয় এবং মোটর দক্ষতার উন্নতি করেছিল। সমীক্ষার লেখকরা পরামর্শ দিয়েছিলেন যে ব্ল্যাকবেরিতে থাকা পলিফেনল নামক রাসায়নিকের কারণে এটি হতে পারে।

এত কেন ব্ল্যাকবেরি কেন খাবেন সে সম্পর্কে আলোচনা। চলুন এবার একটু জেনে নেই কি কি সর্তকতা অবলম্বন করবেন ব্ল্যাকবেরি খাওয়ার সময়। যদি শরীরে এলার্জি প্রবণতা থাকে তাহলে এই ব্ল্যাকবেরি আপনাকে অভয়েড করতে হবে। তাই এই বিষয়টিতে সচেতন হয় নিয়মিত খাওয়া শুরু করে দিন ব্ল্যাকবেরি।

সুত্র– সংগ্রিত।