হাফেজ মোঃ গোলাম রহমান : জুমাবার মুসলমানদের কাছে একটি কাঙ্ক্ষিত দিন। এই দিনকে সাপ্তাহিক ঈদ বলা হয়েছে হাদিসে। সৃষ্টিজগতের শুরু থেকে দিনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জুমা নামে পবিত্র কোরআনে একটি স্বতন্ত্র সুরা আছে। মুমিনের উচিত- দিনটির মর্যাদা রক্ষায় কোনো অবহেলা না করা।

জুমার নামাজ প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ ও স্থায়ী মুসলমানের জন্য যথাসময়ে আদায় করা ফরজ। এদের ওপর জুমার নামাজ পড়া ফরজ এবং জুমার নামাজের আজানের পর নামাজের প্রস্তুতি ছাড়া অন্য যেকোনো কাজ করা নাজায়েজ; এ বিষয়ের সুস্পষ্ট ইঙ্গিত এসেছে কোরআনে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা উপলব্ধি করো।’ (সুরা জুমা: ৯)

উক্ত আয়াতে জুমার আজানের পর বেচাকেনা করার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এজন্য জুমার আজানের পর ক্রয় বিক্রয় করা নাজায়েজ।

জুমার দিন জুমার নামাজ উপলক্ষে দুইবার আজান দেওয়া হয়। একবার জুমার সময় শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে আরেকটি জুমার খুতবার আগে। জুমার প্রথম আজানের পর অনেকেই খানাপিনা, কাপড় ইস্ত্রি, কাপড় ধোয়া, কোরআন তেলাওয়াত ইত্যাদি কাজ করে থাকে। আলেমরা বলেন, জুমার আজানের পর এসব কাজ করা ঠিক নয়। অবশ্য নামাজের প্রস্তুতিমূলক কাজ যেমন-অজু, গোসল, কাপড় পরিধান ইত্যাদির সুযোগ রয়েছে। বস্তুত, জুমার প্রথম আজানের পর অন্যকোনো কাজে লিপ্ত না হয়ে মসজিদে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া এবং মসজিদের দিকে রওনা হওয়া জরুরি।

খুতবার আগ মুহূর্তে দ্বিতীয় আজান দেওয়া হয়। এরপর যেকোনো কাজ নিষিদ্ধ। আর জুমার খুতবা শুরু হওয়ার পর থেকে কথা বলা নিষেধ এবং চুপ করে মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা ওয়াজিব। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন- জুমার দিন খুতবার সময় যদি তুমি তোমার সঙ্গীকে ‘চুপ করো’ বলো সেটাও অনর্থক।’ (বুখারি: ৮৯২; মুসলিম: ২০০৫)

হাদিস দ্বারা সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয়, খুতবার সময় নিশ্চুপ হয়ে খুতবা শোনা ওয়াজিব ও কথাবার্তা বলা হারাম। অনুরূপ খুতবার সময় সুন্নত-নফল নামাজ পড়াও বৈধ নয়। এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘যখন ইমাম খুতবার জন্য বের হবেন, তখন নামাজ পড়বে না, কথাও বলবে না।’

সূত্র: (সহিহ বুখারি: ৮৭৮; ফাতহুল বারি: ২/৪১৯; তাফসিরে কুরতুবি: ১৮/৭০; আহকামুল কুরআন, থানভী: ৪/৬৪; আলবাহরুর রায়েক: ২/১৫৬; ফতোয়ায়ে উসমানি: ১/৫৮০; মেশকাত, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা-৪৩২)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জুমার দিনের পবিত্রতা রক্ষার তাওফিক দান করুন। ইসলামিক নির্দেশনা যথাযথ মেনে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।