০২:১৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০২ মে ২০২৫

মানবিক করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেবে নির্বাচিত সংসদ: তারেক রহমান

নিউজ ডেস্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক : মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সংসদ থেকে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, সবার আগে বাংলাদেশ- এটিই হতে হবে একমাত্র লক্ষ্য।

বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের আয়োজিত সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

তারেক রহমান বলেন, ‘সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক করিডোর দেওয়ার বিষয়ে জনগণ বা রাজনৈতিক দলগুলোকে কিছু জানায়নি। করিডোরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সংসদের কাছ থেকে আসতে হবে। সবার আগে বাংলাদেশ এটিই হতে হবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’

তারেক রহমান দেশে বহুল আলোচিত সংস্কার প্রসঙ্গটিতে শ্রমিকদের প্রতি অবহেলার কথা তুলে ধরেন। বলেন ‘দেশে সংস্কার নিয়ে শোরগোল চলছে। কিন্তু সেই কর্মযজ্ঞে শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠস্বর কোথায়? রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে জনগণের কথা পৌঁছাতে নির্বাচিত সংসদ ও সরকার প্রয়োজন। কারণ, প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিতরা জনগণের কথা শুনতে বাধ্য।’

অন্তর্বর্তী সরকারের একটি অংশ নির্বাচন ও সংস্কারকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে রাজনৈতিক ঐক্যে বিভেদ উসকে দিতে চায় বলে অভিযোগ করেন তারেক রহমান। তবে সংস্কার ও নির্বাচন উভয়ই প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সংস্কারের কথা বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা যৌক্তিক নয় বলে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্বৈরাচার যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেজন্য জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা জরুরি। জনগণের ওপর একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাইলে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ক্ষমতার সুপ্তবাসনা যেন স্বৈরাচারের পথে ঠেলে না দেয়।’

১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশে প্রায় আট কোটি মানুষই শ্রমজীবী- এ কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এই শ্রমিকরাই উন্নয়ন ও অর্থনীতির প্রাণ। কর্মজীবীদের অবহেলা বা অধিকারবঞ্চিত রেখে কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

এর আগে ‘মে দিবস দিচ্ছে ডাক, বৈষম্য নিপাত যাক’- এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে নয়াপল্টনে শুরু হয় শ্রমিক দলের সমাবেশ। দুপুর ২টা ১০ মিনিটে কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমাবেশের কার্যক্রম। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক সেই ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত হাজারো শ্রমিকের উপস্থিতিতে সমাবেশটি রূপ নেয় জনসমুদ্রে।

সমাবেশে মাথায় লাল টুপি, গায়ে লাল গেঞ্জি পরে আসা শ্রমিকদের কণ্ঠের অন্যতম স্লোগান ছিল, ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও, লড়াই করো’। এই সর্বজনীন স্লোগানের পাশাপাশি ‘অবিলম্বে সংসদ নির্বাচন চাই, নির্বাচন দিতে হবে দিতে হবে’ এই স্লোগানও উচ্চারিত হয় সর্বক্ষণ।

সমাবেশে শ্রমিক দল ১২ দফা দাবি তুলে ধরে। সেগুলো হলো- অবিলম্বে সংসদ নির্বাচন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিচার, সব প্রতিষ্ঠানে ডে-কেয়ার সেন্টার, বন্ধ শিল্প চালু, নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান, আউট সোর্সিং বন্ধ করে স্থায়ী পদ সৃষ্টি, অবাধ ও গণতান্ত্রিক ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, শ্রমিক হত্যার বিচার, শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ, নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করা, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ৩০ হাজার টাকা, বৈষম্যহীন জাতীয় পে-স্কেল ও মজুরি হার ঘোষণা, জরুরি পরিষেবা আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল এবং খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানো।

শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শ্রমিক দলের প্রচার সম্পাদক মঞ্জরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, শ্রমিক দলের সমন্বয়কারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ছায়েদুল আলম বাবুল, কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, শ্রমিক দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক সুমন ভূইয়া, সদস্য সচিব বদরুল আলম সবুজ, উত্তরের সদস্য সচিব কামরুল জামান প্রমুখ।

Please Share This Post in Your Social Media

আপডেট: ০৭:৪৩:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫
৩৩

মানবিক করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেবে নির্বাচিত সংসদ: তারেক রহমান

আপডেট: ০৭:৪৩:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সংসদ থেকে আসতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, সবার আগে বাংলাদেশ- এটিই হতে হবে একমাত্র লক্ষ্য।

বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে মহান মে দিবস উপলক্ষে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের আয়োজিত সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

তারেক রহমান বলেন, ‘সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক করিডোর দেওয়ার বিষয়ে জনগণ বা রাজনৈতিক দলগুলোকে কিছু জানায়নি। করিডোরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সংসদের কাছ থেকে আসতে হবে। সবার আগে বাংলাদেশ এটিই হতে হবে আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’

তারেক রহমান দেশে বহুল আলোচিত সংস্কার প্রসঙ্গটিতে শ্রমিকদের প্রতি অবহেলার কথা তুলে ধরেন। বলেন ‘দেশে সংস্কার নিয়ে শোরগোল চলছে। কিন্তু সেই কর্মযজ্ঞে শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠস্বর কোথায়? রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে জনগণের কথা পৌঁছাতে নির্বাচিত সংসদ ও সরকার প্রয়োজন। কারণ, প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিতরা জনগণের কথা শুনতে বাধ্য।’

অন্তর্বর্তী সরকারের একটি অংশ নির্বাচন ও সংস্কারকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে রাজনৈতিক ঐক্যে বিভেদ উসকে দিতে চায় বলে অভিযোগ করেন তারেক রহমান। তবে সংস্কার ও নির্বাচন উভয়ই প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সংস্কারের কথা বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা যৌক্তিক নয় বলে উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্বৈরাচার যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে, সেজন্য জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা জরুরি। জনগণের ওপর একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাইলে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ক্ষমতার সুপ্তবাসনা যেন স্বৈরাচারের পথে ঠেলে না দেয়।’

১৮ কোটি মানুষের বাংলাদেশে প্রায় আট কোটি মানুষই শ্রমজীবী- এ কথা উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, এই শ্রমিকরাই উন্নয়ন ও অর্থনীতির প্রাণ। কর্মজীবীদের অবহেলা বা অধিকারবঞ্চিত রেখে কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।

এর আগে ‘মে দিবস দিচ্ছে ডাক, বৈষম্য নিপাত যাক’- এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে নয়াপল্টনে শুরু হয় শ্রমিক দলের সমাবেশ। দুপুর ২টা ১০ মিনিটে কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমাবেশের কার্যক্রম। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক সেই ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত হাজারো শ্রমিকের উপস্থিতিতে সমাবেশটি রূপ নেয় জনসমুদ্রে।

সমাবেশে মাথায় লাল টুপি, গায়ে লাল গেঞ্জি পরে আসা শ্রমিকদের কণ্ঠের অন্যতম স্লোগান ছিল, ‘দুনিয়ার মজদুর এক হও, লড়াই করো’। এই সর্বজনীন স্লোগানের পাশাপাশি ‘অবিলম্বে সংসদ নির্বাচন চাই, নির্বাচন দিতে হবে দিতে হবে’ এই স্লোগানও উচ্চারিত হয় সর্বক্ষণ।

সমাবেশে শ্রমিক দল ১২ দফা দাবি তুলে ধরে। সেগুলো হলো- অবিলম্বে সংসদ নির্বাচন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিচার, সব প্রতিষ্ঠানে ডে-কেয়ার সেন্টার, বন্ধ শিল্প চালু, নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান, আউট সোর্সিং বন্ধ করে স্থায়ী পদ সৃষ্টি, অবাধ ও গণতান্ত্রিক ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, শ্রমিক হত্যার বিচার, শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ, নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করা, জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ৩০ হাজার টাকা, বৈষম্যহীন জাতীয় পে-স্কেল ও মজুরি হার ঘোষণা, জরুরি পরিষেবা আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল এবং খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানো।

শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শ্রমিক দলের প্রচার সম্পাদক মঞ্জরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, শ্রমিক দলের সমন্বয়কারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ছায়েদুল আলম বাবুল, কৃষক দলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, শ্রমিক দলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহবায়ক সুমন ভূইয়া, সদস্য সচিব বদরুল আলম সবুজ, উত্তরের সদস্য সচিব কামরুল জামান প্রমুখ।