নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি অর্থ বছরের ১১ মাসে ব্যাংক খাত থেকে ৯২ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে সরকার। যা সরকারের অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৮২.৬৮ শতাংশ। এই ঋণ এক অর্থবছরের হিসাবে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই চিত্র উঠে এসেছে।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাস পর্যন্ত ঋণের সিংহভাগ যোগান দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। অর্থবছরের শেষ সময়ে এসে তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে ঋণের চাহিদা বাড়িয়েছে সরকার। গত দুই মাস ধরে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকেও ঋণ নেওয়া হচ্ছে।

শুধু মে মাসেই এসব ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ১৩ হাজার ০১৫ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের ১০ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। যদিও একইসময়ে (মে মাসে) সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে উল্টো ঋণ পরিশোধ করেছে ২ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা।

ব্যাংক কর্মকর্তাদের মতে, সরকারের সঞ্চয়পত্র বিক্রি নেতিবাচক ধারায় নেমেছে। বৈদেশিক ঋণ ছাড়েও গতি নেই। সরকারের রাজস্ব আদায়েও চলছে ধীরগতি। ফলে সরকার বাধ্য হয়েই ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ বাড়িয়েছে।
আরও পড়ুন>>‘অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে’ ৪০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিচ্ছে এডিবি

অন্যদিকে, আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাচ্ছে। এরইমধ্যে সরকার বাজেটের ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ঋণের পরিমাণ বাড়ানোয় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের (জুলাই-মে) পর্যন্ত ১১ মাসে সরকার ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে (কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও তফসিলি ব্যাংক) থেকে ঋণ নিয়েছে ৯২ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা, যা সরকারের অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রার ৮২.৬৮ শতাংশ। এর আগের অর্থবছরে সরকারের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩২ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। এছাড়া তফসিলি ব্যাংকগুলো থেকে চলতি অর্থবছরে সরকার ঋণ নিয়েছে ২০ হাজার ৬৭৮ কোটি টাকা। যদিও আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ৩০ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছর শেষে ৩০ জুন সরকারের ব্যাংক ঋণের স্থিতি ছিল ২ লাখ ৭০ হাজার ১৮৫ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। বর্তমানে এর পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬০১ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত ১১ মাসে নিট বেড়েছে ৯২ হাজার ২৮৮ কোটি টাকা। মে মাস শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭১ হাজার ৬১০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একইসময়ে ছিল ২ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত অর্থবছরের একইসময়ে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকার নিট ঋণ নিয়েছিল মাত্র ৩২ হাজার ৫১৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নিয়েছিল ২ হাজার ১৪৭ কোটি টাকা। আর বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নিয়েছিল ৩০ হাজার ৩৬৮ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের পুরো সময়ে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার পরিমাণ ছিল ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। এটি তার আগের তিন অর্থবছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ছিল। তবে এবার সেই রেকর্ডও ভাঙলো সরকার।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মূল বাজেটে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের ব্যাংক ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ১ লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বিপরীতে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিট ঋণ নিয়েছে প্রায় ৯২ হাজার ২৮৮ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।

অন্যদিকে, আগামী অর্থবছরেও সরকারের ব্যাংক ঋণ নির্ভরতা বাড়ছে। নতুন অর্থবছরে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এরমধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি। আর স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়া হবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। যদিও অর্থবছরের ১০ মাসে রাজস্ব আহরণ হয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৬৭ শতাংশ।