উজ্জ্বল রায়, নড়াইল থেকে: নড়াইলে ৭ শিক্ষক জাল সনদে কর্মরত, ভাতা’র অর্ধকোটি টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরতের নির্দেশ।

নড়াইলের ৭ জন শিক্ষক জাল সনদে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে অর্ধকোটি টাকা সরকারি বেতন ভাতা ভোগ করেছেন বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক নোটিশে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।

সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে এসব নির্দেশনা দিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী সচিব মো. সেলিম শিকদার স্বাক্ষরিত এক চিঠি পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তর যাচাই বাছাই করে সারাদেশে ৬৭৮ জন শিক্ষক কর্মচারীর জাল সনদ শনাক্ত করেছে। এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি সনদ প্রদানকারী দপ্তর প্রধান প্রতিনিধি সমন্বয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের সনদের সত্যতা যাচাইপূর্বক ৬৭৮ জনের জাল সনদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ৬৭৮ জনের জাল সনদধারীর মধ্যে নড়াইলের ৭ জন শিক্ষক সরকারের ৪৯ লাখ ৮৫ হাজার ৮১৫ টাকা অবৈধ ভাবে বেতন ভাতা ভোগ করেছেন। তাদের মধ্যে-নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া মহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক (সাচিবিক বিদ্যা ও অফিস ব্যবস্থাপনা) মো. আবদুস সবুর শেখ ১১ লাখ ৭০ হাজার ৩২০ টাকা, উজিরপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ইসলাম ধর্ম) মো. মনিরুজ্জামান ৫ লাখ ১০ হাজার ৭৭০ টাকা, গোবরা প্রগতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (সমাজ) সৈয়দা হাবিবা আলম ৩ লাখ ১৬ হাজার ৭৫০ টাকা ও দেবভোগ নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (আরবী) মুস্তাহিদ আল আমিন ৩ লাখ ৫৮ হাজার ৭৪০ টাকা। কালিয়া উপজেলার জে এ চৌধুরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক মো. ওয়ালিউর রহমান চৌধুরী ১৬ লাখ ৫২ হাজার ৩৪৫ টাকা, আদর্শ সম্মিলনী উচ্চ বিদ্যাপীঠ সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) রেজবি সুলতানা ৯ লাখ ৭৬ হাজার ৮৯০ টাকা এবং খামার পারখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ইসলাম ধর্ম) মো. আবুল হাসান (এমপিও ভুক্ত নয়) উল্লেখিত টাকা ভোগ করেছেন বলে চিঠিতে জানা যায়।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নড়াইলের জাল সনদধারী ৭ শিক্ষকের ৫ জন স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে পূর্বের ন্যায় পাঠদান চালু রেখেছেন। অন্যদিকে, আদর্শ সম্মিলনী উচ্চ বিদ্যাপীঠ সহকারী শিক্ষক (শরীর চর্চা) রেজবি সুলতানাকে অভিযোগের ভিত্তিতে পূর্বেই চাকরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে বেতনভাতাদি সরকারি কোষাগারে ইতিমধ্যেই জমা দেওয়া হয়েছে বলে ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মফিজুল ইসলাম জানান এবং খামার পারখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (ইসলাম ধর্ম) মো. আবুল হাসান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পূর্বের অডিট অভিযোগের ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠান থেকে অব্যাহতি নিয়ে চলে গেছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মল্লিক আকবর আলী। বিভিন্ন স্কুল-কলেজে কর্মরত ৬৭৮ জন জাল সনদধারী শিক্ষককে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে তাদের এমপিও বন্ধ করা এবং অবৈধ ভাবে এমপিও বাবদ ভোগ করা লাখ লাখ টাকা সরকারি কোষাগারে ফেরত নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে। এছাড়াও জাল সনদধারী যেসব শিক্ষক অবসরে গেছেন তাদের অবসর সুবিধা বাতিল করতে বলেছে মন্ত্রণালয়। যারা স্বেচ্ছায় অবসরে গেছেন বা চাকরি ছেড়ে পালিয়েছেন তাদের টাকা অধ্যক্ষ ও প্রধান শিক্ষকের মাধ্যমে আদায় করতে বলা হয়েছে। আর প্রতিষ্ঠান প্রধানদেরকে জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধে মামলা করতে বলা হয়েছে চিঠিতে। জাল সনদধারী শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধেও বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হায়দার আলী বলেন, নড়াইলে জাল সনদধারী শিক্ষকদের অফিস আদেশ এখনো পাইনি। আদেশের পর নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।