জাতীয় সংবাদ, ধর্ম | তারিখঃ মে ১১, ২০২৩ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 4027 বার
গ্রামের সংবাদ ডেস্ক : আজ ১১ই মে ঐতিহাসিক কুরআন দিবস। কুরআনের সকল আরবি কপি ও অনুবাদ বাজেয়াপ্ত করার জন্য ভারতের কলকাতা হাইকোর্টে একটি রীট আবেদন করে। এই ঘটনার প্রতিবাদে ১৯৮৫ সালের ১১মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঈদগাহ ময়দানে প্রতিবাদ আন্দোলনে কুরআন প্রেমীদের উপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণে ৮ জন নিহত এবং আহত হয় অর্ধ শতাধিক মানুষ। যার প্রেক্ষিতে ১১ মে কুরআন দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
কুরআনকে বাজেয়াপ্ত করার মামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে কলকাতাসহ সারা বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় উঠে। সারা দেশের মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জ ঈদগাহ ময়দানে আয়োজন করা হয় এক প্রতিবাদ সমাবেশ। ঘটনার দিন বেলা ১১টার সময় সমাবেশের আহ্বায়ক মাওলানা হোসাইন আহমদকে এসপি অফিসে ডেকে সমাবেশ বন্ধ করার জন্য চাপ দেয়া হয়। কিন্তু ইসলামী জনতা দলে দলে আসতে থাকে ঈদগাহ ময়দানের দিকে। উপায় না দেখে ঈদগাহ ময়দানে ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। শুধুমাত্র দোয়া করে জনতাকে শান্ত করে চলে যাবো নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সেই আবেদনও শুনেনি তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট ওয়াহিদুজ্জামান মোল্লা।
ইসলামী জনতা শুধুমাত্র দোয়া করার অনুমতি চাইলে তা না দিয়ে জনতার উপর গুলী বর্ষণ করে পুলিশ। এতে স্কুল ছাত্র, কৃষক, রিকশাওয়ালা ও রেল শ্রমিকসহ গুলীবিদ্ধ হয়ে ৮ জন শাহাদাতবরণ করেন। এ ঘটনায় শীষ মোহাম্মদ, রশিদুল হক, ৮ম শ্রেণীর ছাত্র সেলিম, সাহাবুদ্দীন, কৃষক আলতাফুর রহমান সবুর, রিকশাচালক মোক্তার হোসেন ও রেলশ্রমিক নজরুল ইসলাম শহীদ হন। আহত হয় অর্ধ শতাধিক মানুষ। এই ঘটনা ইসলামপ্রিয় জনতাকে হতবিহবল করে তোলে।
এ সময় ইসলামী জনতা বিক্ষোভে ফেটে পড়লে ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে এলোপাতাড়ি গুলীবর্ষণ শুরু করে পুলিশ। পুলিশের গুলীতে প্রথমেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে ১০ম শ্রেণীর ছাত্র শিবির কর্মী আব্দুল মতিন। হাসপাতালে নেয়ার পর কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করে। এ ঘটনায় শীষ মোহাম্মদ, রশিদুল হক, ৮ম শ্রেণীর ছাত্র সেলিম, সাহাবুদ্দীন, কৃষক আলতাফুর রহমান সবুর, রিকশাচালক মোক্তার হোসেন ও রেল শ্রমিক নজরুল ইসলাম শহীদ হন। আহত হয় অর্ধ শতাধিক মানুষ।
উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালের ১২ এপ্রিল ভারতের নাগরিক পদ্মপল চোপরা ও শীতল সিং কুরআনের সকল আরবি কপি ও অনুবাদ বাজেয়াপ্ত করার জন্য কলকাতা হাইকোর্টে একটি রীট আবেদন করে। রীটে বলা হয়, কুরআনে এমন কিছু আয়াত আছে যেখানে কাফির ও মুশরিকদের হত্যা এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রেরণা দেয়া হয়েছে, তাই এই গ্রন্থ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্ম দিতে পারে। মিসেস পদ্মা খাস্তগীর এই মামলা গ্রহণ করে এ বিষয়ে ৩ সপ্তাহের মধ্যে এফিডেভিট প্রদানের জন্য রাজ্য সরকারের প্রতি নির্দেশ দেয়। এ সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে সারা বিশ্বে প্রতিবাদের ঝড় উঠে।
২০২১ সালের এপ্রিলে আল কুরআনের ২৬টি আয়াত নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি তোলে সৈয়দ ওয়াসিম রিজভি নামের ভারতের উত্তরপ্রদেশের শিয়া ওয়াকফ বোর্ডের একজন সাবেক চেয়ারম্যান এবং দেশের শিয়া মুসলিম সমাজের একজন প্রভাবশালী নেতা। তার যুক্তি ছিল, এই আয়াতগুলো মুসলিমদের তরুণ প্রজন্মকে শিখিয়ে বিধর্মীদের, বিশেষত মূর্তিপূজায় বিশ্বাসীদের হত্যা করতে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ওয়াসিম রিজভির করা এই জনস্বার্থ পিটিশন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সরাসরি খারিজ করে দিয়েছে এবং এরকম একটি ‘সম্পূর্ণ অর্থহীন’ পিটিশন দাখিল করার জন্য আবেদনকারী সৈয়দ ওয়াসিম রিজভিকে ৫০,০০০ রুপি জরিমানাও করা হয়েছে। এই ঘটনার বিরোধিতা করে ভারত-বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বে মুসলিমরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে।
যে ২৬ আয়াত নিষিদ্ধের দাবি তোলা হয়: সূরা নিসা, আয়াত ৫৬, ৮৯, ১০১। সূরা মায়িদাহ, আয়াত ১৪, ৩৩, ৫১, ৫৭। সূরা আনফাল, আয়াত ১২, ৬৫, ৬৯। সূরা তাওবাহ, আয়াত ৫, ১৪, ২৩, ২৮-২৯, ৩৭, ৫৮, ১১১, ১২৩। সূরা আম্বিয়া, আয়াত ৯৮। সূরা সাজদাহ, আয়াত ২২। সূরা আহজাব, আয়াত ৬১। সূরা হামিম সাজদাহ, আয়াত ২৭-২৮। সূরা ফাতহ, আয়াত ২০। সূরা তহারিম, আয়াত ৯।