নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আজ। সকাল ১০টায় সারাদেশে ২৯ হাজার ৭৯৮টি প্রতিষ্ঠানের ৩ হাজার ৮১০টি কেন্দ্রে এক যোগে এ পরীক্ষা হবে। প্রতিটি বিষয়ে তিন ঘণ্টা পরীক্ষা নেওয়া হবে। বারাবরের মতো এবার পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে শিক্ষামন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে ফেসবুক ও মোবাইল লেনদেন নজরদারি শুরু করেছে বিটিআরসি। তবে প্রশ্নঁফাস হওয়ার চেয়ে গুজব ঠেকানোই বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টারা। এ বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিংয়ের পাশপাশি সর্তক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থা। সুষ্ঠু ও সুন্দর পরিবেশে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা নিতে কেন্দ্রে কেন্দ্রে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে ২৩ মে পর্যন্ত।

গতকাল ভোলার চরফ্যাশনে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন. এসএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। কেউ গুজব ছড়ালে ধরা পড়লেই কঠোর শাস্তি দেয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষাবোর্ডগুলোর একটি টিম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ডাক ও টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক কমিশন (বিটিআরসি) সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন। বিটিআরসি তত্ত্ববাধানে একটি টিম ফেসবুক তদারকি করছে। এর সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ডর কর্মকর্তারা কাজ করছেন।

জানতে চাইলে ঢাকা আন্তঃশিক্ষা বোর্ডর সমন্বয়ক ও ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার বলেন, ‘ইতোমধ্যে ফেসবুক ও মোবাইল লেনদেন নজরদারি শুরু করেছে বিটিআরসি। এছাড়াও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের গুজব সৃষ্টিকারীদের বিষয়েও সজাগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা।’

তিনি আরও জানান, প্রশ্নঁফাস হওয়ার চেয়ে গুজব ঠেকানোই বড় কঠিন। কারণ প্রশ্নঁফাস করা কঠিন কিন্তু গুজব ছড়ানো সহজ। আইন শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করার সিদ্ধান্ত হয়।

জানা গেছে, পরীক্ষা শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও বিটিআরসিকে সর্বোচ্চ সতর্ক রাখা হয়েছে। যেসব গ্রুপ বা ব্যক্তি ফেসবুকে প্রশ্নফাঁসের গুজব ছড়াবে বা প্রশ্নফাঁস করে দেবে বলে প্রচারণা চালাবে তাদের আইডি শনাক্ত করে পুলিশের বিশেষ শাখা এবং গোয়েন্দা সংস্থাকে দেওয়া হবে। এ রকম গুজব সৃষ্টিকারী ব্যক্তিদের মোবাইল লেনদেনও নজরদারিতে থাকবে।

পরীক্ষা চলাকালে ফেসবুকে প্রশ্নফাঁস নিয়ে গুজব এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সন্দেহজনক লেনদেনে নজর রাখা হবে। প্রশ্ন ছাপানোর সঙ্গে সম্পৃক্ত বিজি প্রেসের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হবে। এমনকি প্রশ্ন সর্টিং ও বহনে জড়িত শিক্ষক ও কর্মকর্তারাও থাকবেন নজরদারিতে।

ঢাকা শিক্ষাবোর্ডের চেয়রম্যান বলেন, ‘সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্নফাঁসের গুজব সৃষ্টিকারীদের পেজ দ্রুত বন্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এজন্য ফেসবুকসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিটিআরসি সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করবে। যদি কোনো মোবাইল নম্বরে একাধিকবার একই অংকের টাকা লেনদেন হয় তাহলে সংশ্লিষ্ট এজেন্টকে নিকটস্থ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অবহিত করতে হবে।’

কেন্দ্র সচিব ব্যতীত পরীক্ষা কেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না। কেন্দ্র সচিব একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। ট্রেজারি-থানা থেকে প্রশ্নপত্র গ্রহণ ও পরিবহন কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, শিক্ষক, কর্মচারীরা কোনো ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না। প্রশ্নপত্র বহন কাজে কালো কাচ যুক্ত মাইক্রোবাস বা এরূপ কোনো যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না। জেলার ক্ষেত্রে ট্রেজারি এবং উপজেলার ক্ষেত্রে থানা প্রশ্নপত্রের ট্রাঙ্ক সংরক্ষণ করতে হবে।

পরীক্ষা শুরু হওয়ার ২৫ মিনিট আগে প্রশ্নের সেট কোড সচিবকে জানানো হবে। সেই অনুযায়ী কেন্দ্র সচিব, ট্যাগ অফিসার ও পুলিশ কর্মকর্তার স্বাক্ষরে প্রশ্নপত্রের প্যাকেট বিধি অনুযায়ী খুলবেন। কেন্দ্রে পৌঁছানোর জন্য দূরত্ব অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সময় নির্ধারণ করে প্রশ্নপত্র আনতে হবে।

ছাত্রছাত্রীদের পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে অবশ্যই পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থীর দেরি হলে তার নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, দেরি হওয়ার কারণ ইত্যাদি একটি রেজিস্টারে লিখে রাখা হবে। পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে সর্ব সাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকবে।

পরীক্ষায় বেআইনি কোনো কাজ করলে সে প্রতিষ্ঠান, প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দোষী শিক্ষক ও কর্মচারী সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলে তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হলে তার এমপিও স্থগিত করা হবে।

এ বছর এসএসসি পরীক্ষা সব বিষয়েই নেওয়া হবে। পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে সব বিষয়ে, পূর্ণাঙ্গ নম্বরে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সৃজনশীল ও নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন (এমসিকিউ) থাকবে আগের মতোই।

প্রথম দিনে এসএসসিতে বাংলা, মাদ্রাসার দাখিলে কোরআন মাজিদ ও তাজবিদ এবং কারিগরির ভোকেশনালে বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষা চলবে আগামী ২৩ মে পর্যন্ত। ২৪ থেকে ৩০ মের মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর ২৭ মে থেকে ৩ জুনের মধ্যে দাখিলের ব্যবহারিক পরীক্ষা নেওয়া হবে। এবার সারা দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের ২০ লাখ ৭২ হাজার ১৬৩ জন পরীক্ষার্থী এবারের পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ছাত্র ১০ লাখ ২১ হাজার ১৯৭ জন এবং ছাত্রী ১০ লাখ ৫০ হাজার ৯৬৬ জন। সে হিসাবে এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে ৫০ হাজার ২৯৫ জন। আর গত বছরের চেয়ে এবার প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ২০৭টি এবং কেন্দ্র বেড়েছে ২০টি। এছাড়া দেশের বাইরে ৮টি কেন্দ্র এবার মোট ৩৭৪ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে।