ডেস্ক রিপোর্ট : ছোট্ট পাহাড়ি খাদের ওপর ঝুলন্ত সেতু, চারপাশে সেতু চোখ ধাঁধাঁনো প্রাকৃতিক দৃশ্য। ম্যাপল, বার্চ গাছের সারী কিন্তু রি ঝুলন্ত সেতু-ই রহস্যে মোড়া। এই সেতুতে এলেই আত্মহত্যার চেষ্টা করে কুকুররা।

স্কটল্যান্ডের ডাম্বারটন শহরের ওভারটাউন ব্রিজ। কোনও রহস্যময় কারণে এই সেতু থেকে আত্মহত্যার চেষ্টা করে যে-কোনও কুকুর। শুধু শেষ ৫০ বছরের ইতিহাসে প্রায় ৩০০-রও কুকুর এই সেতু থেকে লাফ মেরে আত্মহত্যা করেছে। সেই কারণে ব্রিজের প্রবেশপথে সরকারের তরফে বসেছে সতর্কবার্তা…“ডেঞ্জারেস ব্রিজ : প্লিস কিপ ইয়োর ডগ অন আ লিস”।

সেতুটি নির্মিত হয়েছিল ১৮৯৫ সালে। ওভারটাউন প্যালেসের সঙ্গে শহরের মূল রাস্তার সংযোগ করতেই সেতুটির নির্মাণ করেন ওভারটাউন দম্পতি। প্রাথমিকভাবে এই সেতুটি তেমন কোনো আকর্ষণের বিষয় ছিল না স্থানীয়দের কাছে। ১৯০৮ সালে মৃত্যু হয় মিস্টার ওভারটাউন-এর। বিশ্বযুদ্ধের পর মারা যান লেডি ওভারটাউন-ও। তারপর থেকেই আচমকা রাতারাতি বদলে যায় ওভারটাউন ব্রিজ। ঘটতে থাকে একের পর এক পোষ্যের আত্মহত্যার ঘটনা। স্থানীয়রা মনে করতে থাকেন, লেডি ওভারটাউনের অতৃপ্ত আত্মাই দায়ী এই ‘ভৌতিক’ কার্যকলাপের জন্য।

অন্যদিকে লেডি ওভারটনের মৃত্যুর পর প্রাসাদটি ব্যবহার করা হয় বিশ্বযুদ্ধের হাসপাতাল এবং মাতৃসদন হিসাবে। বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন অসংখ্য মানুষের মৃত্যুও হয়েছে ওভারটন প্যালেসে। স্থানীয়দের বিশ্বাস, মৃতদের আত্মারাই এই অঘটন ঘটাচ্ছে। তাদের দেখা পেয়েই সেতু থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কুকুরেরা।

পঞ্চাশের দশকে এই সেতুটির নাম দেওয়া হয় ‘ব্রিজ অফ ডেথ’। স্থানীয়রা বলেন, ‘ডগ সুইসাইড ব্রিজ’। তবে শুধু কুকুরই নয়, ১৯৯৪ সালে ঘটে যায় আরও অদ্ভুত একটি ঘটনা। স্ত্রীয়ের সঙ্গে ঘুরতে এসে ৫০ ফুট উঁচু ব্রিজ থেকে হঠাৎ করেই নিজের সদ্যজাত সন্তানকে নিচে ছুঁড়ে ফেলে দেন কেভিন নামের এক ব্যক্তি। । বছর কয়েকের মধ্যে আরও এক স্কটিশ খ্রিস্টান সন্ত দাবি করেন, অজানা কোনও কারণে তিনি ব্রিজের কিনারে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, তখনই অদৃশ্য কেউ তাঁকে ব্রিজ থেকে ঠেলে ফেলে দেওয়া চেষ্টা করছিল।

রহস্যের সমাধান করতে একদল বিজ্ঞানী ব্রিজটিতে গিয়ে নানা পরীক্ষা করেন। তাঁদের দাবি, ব্রিজের তলায় জল না থাকায়, জঙ্গলাকীর্ণ পাথুরে জমিতে বসবাস করে মিঙ্ক প্রজাতির প্রাণীরা। কুকুরের ঘ্রাণশক্তি প্রখর হওয়ার কারণে তাদের গন্ধ পেয়ে আকৃষ্ট হয় সারমেয়রা। তখনই ঝাাঁপ দেয়। পাশাপাশি ওই একই জায়গায় রয়েছে বিদ্যুৎবাহী তারের খুঁটি যা সরাসরি সংযুক্ত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে। সেই পোস্টের কম্পনের শব্দও কুকুরকে তাড়না করে ঝাঁপ দেওয়ার জন্য।
কিন্তু এই দাবি মানেন না অধিকাংশ প্রাণীকর্মীরাই। সব মিলিয়ে প্রায় একশো বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরও স্কটল্যান্ডের এই ঝুলন্ত সেতু রহস্যে মোড়া।