নিজস্ব প্রতিনিধি : রাজনীতিতে ক্ষমতা আর অর্থ-বিত্তের দাপটই আজকাল নিয়ামক শক্তি হিসেবে অনেক ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বলেন, ‘ছাত্র রাজনীতিতেও এসব অশুভ ছায়া ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। দখলবাজি আর চাঁদাবাজির কারণে ছাত্ররাজনীতিকে এখন আর মানুষ আগের মতো সম্মানের চোখে না দেখে নেতিবাচকভাবে দেখে। এটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুখকর নয়।’

শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৪টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ সমাবর্তনে অংশ নিয়ে রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে এসব বলেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘ব্যবসায়ী শিল্পপতিরাও ব্যবসা শুরু করেই চিন্তা করে কীভাবে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়া যায়। নীতি-নৈতিকতাকে বাদ দিয়ে কীভাবে শুধু নিজে বড়লোক হতে পারবে সেই চিন্তাভাবনায় ব্যস্ত থাকে। খেলাপী ঋণের এক শতাংশের জন্যও সাধারণ মানুষ দায়ী নয়।’

তিনি বলেন, ‘রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও আমলাদের সমন্বিত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টায় একটি দেশ উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে যায়। এর ব্যাত্যয় দেশ ও জাতির জন্য বয়ে আনে চরম বিপদ। সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সার্কভুক্ত একটি দেশের অর্থনীতির দেউলিয়াত্ব নিয়ে সে দেশের একজন মন্ত্রীর খবর অনেকেরই দৃষ্টিগোচর হয়েছে। অর্থনৈতিক এই দেউলিয়াপনার জন্য আমলা, রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের চক্রকেই দায়ী করা হয়েছে। এই চক্রের অশুভ আঁতাত যে কোনো দেশের জন্যই বিপদ ডেকে আনতে পারে।’

এ সময় আচার্য গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক ভাষণ দেন। সত্য ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনে স্ব স্ব অবস্থান থেকে অবদান রাখার আহ্বান জানান। সনদপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনে মেধার স্বাক্ষর এবং পরিশ্রমী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তোমাদের আজকের এই সাফল্যের পেছনে রয়েছে শিক্ষক, বাবা-মার পাশাপাশি দেশ ও দেশের মানুষের অনেক অবদান। তাই দেশ ও জাতির কল্যাণে তোমাদের ভূমিকা রাখতে হবে। একক নয়, পরিবার, সমাজ এবং জাতীয় উন্নয়নের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে। কর্মপ্রতিষ্ঠানে বাধা বিপত্তি আসতে পারে, সেজন্য সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণে নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে।’

‘মানুষের কর্মজীবনে দুই ধরনের বাধা আসতে পারে। বৈরি প্রকৃতি আর বৈরি মানুষ৷ এই দুই ধরনের বাধা অতিক্রম করতে পারলেই মানুষ এগিয়ে যায়৷ তাই আলস্য ত্যাগ করে পরিশ্রম করতে হবে। সক্রেটিসের একটি কথা মনে রাখবে, যে ব্যক্তি কোনো কাজ করে না শুধু সে-ই অলস নয়, যে ছোট কাজ করে এবং বৃহত্তর কাজে যাকে ব্যবহার করা যেত সেও অলস।’ বলেন আচার্য।

এর আগে দুপুর সাড়ে ৩টায় আচার্য সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। উদ্বোধনের আগে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, বিভিন্ন অনুষদের ডিন এবং শিক্ষকদের অংশগ্রহণে সমাবর্তন শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। এরপর জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন এবং পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে পাঠ করা হয়।

এরপর উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম গ্র্যাজুয়েটদের উদ্দেশে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন।

পরে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রি গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট ডিন কর্তৃক গ্র্যাজুয়েটগণকে চ্যান্সেলর সমীপে উপস্থাপন এবং চ্যান্সেলর কর্তৃক ডিগ্রি দেওয়া হয়। এ সময় স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত ১৬ শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর কর্তৃক স্বর্ণপদক দেওয়া হয়।

পদক দেওয়া শেষে সমাবর্তন বক্তা প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বক্তব্য দেন এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক শেখ মো মনজুরুল হক। এরপর ক্রেস্ট বিনিময় এবং আচারে্যর ভাষণের মধ্য দিয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।

উল্লেখ্য, এবারের সমাবর্তনে মোট ১৫ হাজার ২১৯ জন শিক্ষার্থী সনদ পেয়েছেন। সর্বোচ্চ ফলাফলের ভিত্তিতে স্নাতক ক্যাটাগরিতে আটজন- মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের তানজিনা আক্তার ও মুমতারিন জান্নাত ঐশী, ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) রাতুল কুমার সাহা , বিএম মুহিত সাঈফ ও রাদিআহ হাসান, ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির (আইআইটি) ফারিহা আফসানা, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের উম্মে মাহফুজা শাপলা, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের জান্নাতুল হুসনা তুয়া ‘আসাদুল কবীর স্বর্ণপদক’ পেয়েছেন।

স্নাতকোত্তর ক্যাটাগরিতে সাতজন ‘শরফুদ্দিন স্বর্ণপদক’ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শরিফুল ইসলাম, মোছা. শামীমা খানম, বদরুন্নাহার দীপা, মুহাম্মদ খায়রুল আলম, ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ঊর্মি দাস, অর্থনীতি বিভাগের ইসতিয়াক রায়হান, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের কামরুন নাহার। এছাড়া স্নাতকোত্তরে দর্শন বিভাগের সর্বোচ্চ ফলাফলপ্রাপ্ত সাথী আক্তারকে ‘মোফাসসিল উদ্দিন আহমেদ ট্রাস্টফান্ড স্বর্ণপদক’ দেওয়া হয়েছে।