স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা | তারিখঃ জুন ২৩, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 4791 বার
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ডেস্ক : গর্ভাবস্থায় কাঁচা বা পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা। আমের পুষ্টিগুণ। আম খাওয়ার সঠিক সময় এবং পরিমাণ। আম অনেকেই খান কিন্তু কী জানেন আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা যদি না জানেন আসুন দেখেনিন।
কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা:-
১: ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে:-
কাঁচা আম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
২: ঘামাচি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে:-
কাঁচা আমের এমন কিছু পুষ্টিকর উপাদান আছে যা ঘামাচি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
৩: লিভারের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়:-
কাঁচা আম লিভারের নানা সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়।কারণ এটি খেলে পিত্ত থলির অ্যাসিড পিত্ত রস বাড়ায়।এর কারণে অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ করে এবং
যকৃতের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
৪: মুখের বিভিন্ন সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়:-
কাঁচা আমে আছে প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন সি।যা স্কার্ভি ও মাড়ি থেকে রক্তপাতের সমস্যায় হ্রাস করে,মুখের বিভিন্ন ক্ষত সারায়,দাঁতের ক্ষয়রোধ করে এবং নিশ্বাসে দুর্গন্ধ রোধ করে।
৫: ওজন হ্রাস করে:- যারা ওজন কমাতে চান তারা কাঁচা আম খেতে পারেন। কারণ এটি দেহে অতিরিক্ত ক্যালরি কমাতে সাহায্য করে।
৬: হজমক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করে:- কাঁচা আমে আছে গ্যালিক অ্যাসিড।যা হজমক্ষমতা বৃদ্ধি করে।এরফলে অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর হয়।
৭: রক্তস্বল্পতা সমস্যায় উপকার করে:- কাঁচা আমে আছে প্রচুর আয়রন। যা রক্তস্বল্পতা সমস্যায় খুব ভাল কাজ করে।
৮: চোখের জন্য:- কাঁচা আমে আছে ক্যারোটিন ও ভিটামিন এ। যা চোখের দৃষ্টি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং রাতকানা রোগ প্রতিরোধ করে।
৯: রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:- কাঁচা আমে আছে ভিটামিন সি, ভিটামিন ই ও নানা ধরনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। এরফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শ্বেত রক্তকণিকার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।
১০: গরম হাত থেকে রক্ষা করে:- কাঁচা আম হিটস্ট্রোকের হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস।
১১: বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করে:- কিডনির সমস্যা প্রতিরোধ সাহায্য করে,হাড় শক্তিশালী করে, এতে আছে ভিটামিন সি শরীরকে ইনফ্লামেশনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে,আয়রনের শোষণে এবং রক্তপাতের প্রবণতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে,নখ, চুল, মজবুত করতে সাহায্য করে,ব্ৰণ মুক্তি দেয়,ত্বক উজ্বল করে,দেহে প্রচুর পরিমাণে ঘাম গেলে সোডিয়াম ক্লোরাইড এবং আয়রন হ্রাস পায়।এই প্রক্রিয়াকে প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে কাঁচা আম।
কাঁচা বা পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।গর্ভাবস্থায় কাঁচা বা পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।আমের পুষ্টিগুণ।আম খাওয়ার সঠিক সময় এবং পরিমাণ।
কাঁচা আম খাওয়ার অপকারিতা:- ১: খুব বেশি কাঁচা আম খেলে ডায়রিয়া হতে পারে। ২: কাঁচা আমের কষ মুখে লাগলে সংক্রমণ হতে পারে। তাই সাবধান থাকবেন। ৩: অনেকেরই অ্যালার্জির সমস্যা আছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই খাবেন।
গর্ভাবস্থায় কাঁচা আম খাওয়ার উপকারিতা:- ১:কাঁচা আম গর্ভাবস্থায় মায়েরা খেলে শিশুর হাড় গঠনে সাহায্য করে। ২: ভিটামিন সি লোহিত রক্ত কণিকা বৃদ্ধি করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। ৩: কাঁচা আম রক্তনালীকে শক্তিশালী করে। ৪: কাঁচা আম হজম প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য এর সমস্যা দেখা দেয় কাঁচা আম কোষ্ঠকাঠিন্য এর সমস্যা দূর করে এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা দূর করে। অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই খাবেন।
পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা:- ১: ঠান্ডার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে:- আমে আছে প্রচুর ভিটামিন এ এবং ডি। এই ভিটামিন দুটি ঠান্ডাজনিত সমস্যা দ্রুত হ্রাস করে। ২: স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে:- আম মস্তিষ্কের চাপ হ্রাস,করে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।আমে আছে গ্লুটামিক অ্যাসিড যা মস্তিষ্কের কোষ উজ্জীবিত করে। ৩: হজমে সাহায্য করে:- আমে আছে প্রচুর আঁশ।তাই আম খেলে হজমক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি দেয়। ৪: মিনারেলের ঘাটতি দূর করে:- শরীরে মিনারেলের অভাব দেখা দিলে দেহে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হবে।আর এই আম খেলে মিনারেলের ঘাটতি দূর হয়।এছাড়াও প্রয়োজনীয় লবণের অভাব পূরণ করে। ৫: বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি দেয়:- আমে আছে প্রচুর বিটা ক্যারোটিন।এটি ভিটামিন এ এর উৎস।তাই আম খেলে হৃদরোগ, ভুলে যাওয়ার সমস্যা, আথ্রাইটিসের মতো রোগ দূরে করে।
পাকা আম খাওয়ার অপকারিতা:- ১: পাকা আমে চিনির মাত্রা বেশি থাকে।তাই এটি খেলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। ২: যাদের ডায়াবেটিস আছে তারা ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই খাবেন। ৩: খুব বেশি আম খেলে বদ হজম বা ডায়েরিয়া হতে পারে।
গর্ভাবস্থায় পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা:- ১: অকাল জন্ম ও স্বল্প ওজন রোধ করে:- অনেক সময় গর্ভপতি মহিলারা ফোলেটের অভাব থাকে তাদের স্নায়ু বিফিডার মতো নিউরাল টিউব ত্রুটিযুক্ত বাচ্চা হওয়ার আশঙ্কা থাকে।এই ফোলেটের অভাব থাকলে অকাল জন্ম ও স্বল্প ওজনের শিশু হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় আম খেতে পারেন।
২: আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে:- কাঁচা বা পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।গর্ভাবস্থায় কাঁচা বা পাকা আম খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা।আমের পুষ্টিগুণ।আম খাওয়ার সঠিক সময় এবং পরিমাণ।
গর্ভাবস্থায় অনেক মহিলাদের আয়রনের ঘাটতি দেখা দেয়।এর ফলে হিমোগ্লোবিনের অভাব দেখা দেয়।গর্ভাবস্থায় পাকা আম খেলে এই সমস্যা আর দেখা দেয় না।কারণ
পাকা আম খেলে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্য এর সমস্যা দূর করে, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
গর্ভাবস্থায় পাকা আম খাওয়ার অপকারিতা:- গর্ভাবস্থায় অনেক মহিলাদের ডায়াবেটিস দেখা দেয় এই জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই খাবেন।তাছাড়াও সব কিছু পরিমাণ অনুযায়ী খাওয়া উচিত না হলে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।
প্রতি ১০০ গ্রাম আমের পুষ্টিগুণ:-
২৭৪০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিন
১.৩ গ্রাম আয়রন
১৪ মি.গ্রা. ক্যালসিয়াম
১৬ মি.গ্রা. ফসফরাস
০.৯ মি.গ্রা. রিভোফ্লাবিন ও ভিটামিন সি
০.০৮ মি. গ্রা. থায়ামিন
প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে
০.১ মি.গ্রা. ভিটামিন বি-১
০.০৭ মি.গ্রা. বি-২
০.৫ গ্রাম খনিজ লবণ
১ গ্রাম প্রোটিন
২০ গ্রাম শ্বেতসার
এক কাপ বা ১৬৫ গ্রাম পাকা আমে
ক্যালরি ৯৯
প্রোটিন ১.৪ গ্রাম
শর্করা ২৪.৬ গ্রাম
ফ্যাট ও আঁশ যথাক্রম ০.৬ ও ২.৬ গ্রাম
ভিটামিন সি-৬৭%আরডিআই
কপার ২০%আরডিআই
ফলেট ১৮%আরডিআই
ভিটামিন এ এবং কে ১০%আরডিআই পটাসিয়াম ৬%আরডিআই
ম্যাগনেসিয়াম ৪%আরডিআই
আম খাওয়ার সঠিক সময় এবং পরিমাণ:- আম সকালে এবং বিকালে খেতে পারেন।প্রতিদিন আম এক থেকে দেড় কাপ খেতে পারেন। গর্ভাবস্থায় মায়েরা বড় আম হলে ১টি আর ছোট হলে ২টি আম খেতে পারেন।
শরীরের অবস্থা বুঝে আম খাওয়া উচিত। তাই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই খাবেন।