রাজনীতি | তারিখঃ জানুয়ারি ৪, ২০২৪ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 7786 বার
নিজস্ব প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার শেষ হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টায়। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে শহর কিংবা গ্রামে শেষ মুহুর্তের প্রচারে বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীরা।
বিভিন্ন আসনে প্রার্থীদের নানা প্রতিশ্রুতি ও একে অপরের সমালোচনার ঝড় এখন নবীন প্রবীণ ভোটারদের মুখে মুখে।
শেষ মুহুর্তের প্রচারে ভোটারদের আকৃষ্ট করা, তাদের কেন্দ্রে নেওয়া এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার চালাচ্ছেন, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের বিপরীতে হ্যাভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছে আওয়ামী লীগ পন্থি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। সেই হিসেবে প্রায় প্রতিটি আসনেই নির্বাচনে ভোটের মাঠে বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে। এরই মধ্যে বেশ কিছু আসনে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার ঘটনায় উতকন্ঠাও বিরাজ করছে অনেকের মাঝে। সব কিছুই ছাপিয়ে ভোটের মাঠে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়ানো সকল প্রার্থীদেরই এখন ভড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তাই প্রার্থীরা সরাসরি দিনরাত মানুষের দ্বারে দ্বারে ভোট চাইতে দেখা গেছে।
পথিমধ্যে ভোটারদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেলেই অনেক প্রার্থীরা তাদের খোঁজ-খবর নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন।
ঢাকা-৫ আসনের ৫০নং ওয়ার্ডের ভোটার রইজ উদ্দিন ঢাকা টাইমসকে বলেন, সারাবছর এইসব প্রার্থীদের ধারে কাছেও আমরা যাইতে পারি নাই, তয় এইবার ভোটের জন্য সবাই আমাগো কাছে আইতাছে। এইবার সময় হইছে ভোটের মাধ্যমেই তাদের জবাব দিমু।
একই আসনের ৪৮ নং ওয়ার্ডের ভোটার কলেজ পড়ুয়া সাদ্দাম হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, এইবার আমি প্রথম ভোটার হয়েছি। অনেক প্রার্থীই আমার কাছে এসে ভোট চেয়েছেন। বিষয়টি আমার কাছে ভালোই লেগেছে। জীবনে এই প্রথমবার আমি ভোটার হয়েছি, ভোট তো অবশ্যই দিবো।
বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনি প্রচারে মাইক ও সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহার করেও চলছে প্রচারণা। অনেকেই আবার বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে লিফলেট বিতরণ করছেন। সন্ধ্যার পর বিভিন্ন এলাকার বাজার বা খেলার মাঠে হচ্ছে জনসভা। এছাড়াও দিনের বেলাতেও একের পর এক উঠান বৈঠকে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন প্রার্থীরা। বিরামহীন এই প্রচারণায় অনেক প্রার্থীরা ক্লান্ত হয়েও পড়ছেন। তবুও নির্বাচনি মাঠে কালন্ত শরীর নিয়েই চলছে তাদের শেষ সময়ের প্রচারণা।
নড়াইল-২ আসনের প্রার্থী মাশরাফি বিন মর্তুজাকে দেখা গেছে ক্লান্ত শরীর নিয়েই তিনি পথসভা করছেন। কখনো আবার চায়ের দোকানগুলোতে একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার শুরু করেন প্রচারণা। এছাড়া ঢাকা-৪, ১৮ , ১ ও ১৩ আসনেও দেখা গেছে প্রার্থীরা এই শেষ সময় নির্বাচনি প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
ঢাকা-১৩ আসনের প্রচারে গিয়ে নৌকার মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘নির্বাচনের ভোটের দিন খুবই সন্নিকটে। ঢাকা-১৩ আসনের মতো সারাদেশে ভোটের উৎসব লক্ষ্য করা গেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যেকটা নির্বাচনি জনসভায় মানুষের ঢল নেমেছে। এর মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে যেÍ ৭ জানুয়ারি জনগণের অংশগ্রহণে একটি উৎসবমুখর ভোট অনুষ্ঠিত হবে। আপনারা পরিবার নিয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিয়ে আপনাদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ করবেন।’
নানক বলেন, ‘নির্বাচন দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার নির্বাচন। এদেশের এত উন্নয়ন হয়েছে, সবই আওয়ামী লীগের হাত ধরে হয়েছে। চলমান এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সরকারের বিকল্প নেই। তাই আপনারা ভোট দিয়ে উন্নয়নের এই দ্বারা ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে শামিল হন।’
এছাড়াও ঢাকার আসনগুলোতে দেখা গেছে, শহরের বিভিন্ন এলাকার অলিগলিতে প্রার্থীদের নির্বাচনি সমর্থকরাও প্রচারণায় নিজ নিজ এলাকায় ব্যস্ত রয়েছে। এক কথায় নির্বাচনি মাঠ এখন বেশ উৎসবমুখর পরিবেশের মধ্যদিয়ে চলছে।
প্রসঙ্গত, আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের প্রার্থীরা প্রচারের সময় পেয়েছেন ১৯ দিন। এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র রয়েছে ৪২ হাজার ১০৩টি। আর ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন এবং নারী ভোটার ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন। আর হিজড়া ভোটার রয়েছেন ৮৫২ জন।
চার লাখ ছয় হাজার ৩৬৪ জন প্রিজাইডিং অফিসার, দুই লাখ ৮৭ হাজার ৭২২ জন সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার এবং পাঁচ লাখ ৭৫ হাজার ৪৪৩ জন পোলিং অফিসার, মোট নয় লাখ নয় হাজার ৫২৯ জন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন।
ইসি সূতে জানা গেছে, ভোটের আগে পরে ১৩ দিন নিয়োজিত থাকবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আনসারের পাঁচ লাখ ১৬ হাজার সদস্য, কোস্টগার্ডের ২ হাজার ৩৫০ জন, বিজিবির ৪৬ হাজার ৮৭৬ সদস্য, পুলিশের (র্যা বসহ) থাকবে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন সদস্য। অর্থাৎ সাত লাখ ৪৭ হাজার ৩২২ জন সদস্য ভোটের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া মাঠে থাকবে সশস্ত্র বাহিনীও।