খুলনা বিভাগ, জেলার খবর, যশোর | তারিখঃ অক্টোবর ৪, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 3963 বার
জাহাঙ্গীর আলম : যশোরে শিশু সানজিদা জান্নাত মিষ্টি (৪) হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন প্রতিবেশী আঞ্জুয়ারা বেগম (৪০)। রোববার আদালতে তিনি এই জবানবন্দি দিয়েছেন।
এই জবানবন্দির সূত্র ধরে পুুলিশ ‘লাশ গুমে সহযোগিতার’ অভিযোগে প্রতিবেশী আরেক দম্পতিকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন, যশোর সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডস্থ বি-পতেঙ্গালী গ্রামের কেরামত আলী গাজীর ছেলে আব্দুল মালেক গাজী (৬৫) ও তার স্ত্রী খাদিজা বেগম (৫০)। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর পুলিশের মুখপাত্র ডিবি ওসি রূপন কুমার সরকার। এর আগে সানজিদা জান্নাত মিষ্টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তার পিতা সোহেল রানা কোতোয়ালি থানায় মামলা করেন।
ডিবি ওসি রূপন কুমার সরকার জানান, মিষ্টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটক আঞ্জুয়ারা খাতুনকে রোববার আদালতে সোপর্দ করা হয়। এসময় তিনি পূর্ব আক্রোশে সানজিদা জান্নাত মিষ্টিকে খুন করা হয় বলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল ইসলাম জবানবন্দি শেষে তাকে জেলহাজতে প্রেরণের আদেশ দেন।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, আটক আঞ্জুয়ারা স্বামীসহ বর্তমানে সদর উপজেলার বি-পতেঙ্গালী গ্রামে বসবাস করেন। আঞ্জুয়ারা ও তার স্বামী রেজাউল ওরফে রেজা মাদক, চোরাচালানী ও পাচারকারী দলে সদস্য। তাদের বাড়ি বেনাপোলের পুটখালী হলেও বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করে। আঞ্জুয়ারা ও তার স্বামী রেজার বিভিন্ন অপকর্মের খবর জানতেন মিষ্টির মা শরিফা খাতুন। এছাড়া আঞ্জুয়ারার অপূর্ব হাসান নামে ৭ বছর বয়সের শারীরিক প্রতিবন্ধী একটি ছেলে আছে। মাঝেমধ্যে খেলাধুলা করার সময় মিষ্টির সাথে অপূর্ব হাসানের হাতাহাতি ও মারামারি হয়। মাঝেমধ্যে অপূর্ব হাসানকে পাগল বলেও গালি দিতো মিষ্টি। সব মিলিয়ে মিষ্টির পরিবারের প্রতি প্রতিহিংসা জন্ম নেয়ায় তাদের ক্ষতি করার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকেন আঞ্জুয়ারা ও তার স্বামী রেজা। এরই সূত্র ধরে ১ অক্টোবর দুপুরে আপেল খাওয়ানোর কথা বলে বাড়িতে ডেকে সানজিদা মিষ্টিকে শ্বাসরোধে হত্যা করে।
এ ঘটনায় শনিবার রাত ১১টার দিকে সন্দেহমূলকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আঞ্জুয়ারা পুলিশের কাছে মিষ্টিকে হত্যার কথা স্বীকার করে। পরে তার দেখানো মতে মিষ্টির লাশ আঞ্জুয়ারার চালের ড্রামের মধ্যে থেকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়না তদন্ত করার জন্য যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। রোববার এই ঘটনায় নিহত মিষ্টির পিতার দায়ের করা মামলায় আঞ্জুয়ারাকে আটক দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আঞ্জুয়ারা এরপরে আদালতে মিষ্টিকে হত্যার কথা স্বীকার করে। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, লাশ গুমে সহযোগিতার অভিযোগে তারই প্রতিবেশি দম্পতি আব্দুল মালেক গাজী (৬৫) ও খাদিজা বেগমকে (৫০) রোববার রাত ১০টার দিকে পতেঙ্গালী গ্রাম থেকে আটক করা হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এসআই মফিজুল ইসলাম বলেছেন, সানজিদা জান্নাত মিষ্টি হত্যাকা-ের ঘটনায় আটক আঞ্জুয়ারা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তার জবানবন্দি অনুযায়ী আরও দু’জনকে আটক করা হয়েছে। মামলার তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।