খুলনা, খুলনা বিভাগ, বিশেষ সংবাদ | তারিখঃ সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২২ | নিউজ টি পড়া হয়েছেঃ 14405 বার
বিশেষ প্রতিনিধি : এই না হলে জাতির মেরুদণ্ডের কারিগর! তিনি জাতিকে জ্ঞান দেন। শিক্ষা নিয়ে বড় পরিকল্পনার স্বপ্নের কথাও বলেছিলেন। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন অধ্যাপক ড. মোঃ শহীদুর রহমান খান। কপাল খুলে যায় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর।
তার দুর্নীতি স্বজনপ্রীতি নিয়োগ বাণিজ্য রূপকথার গল্পকেও হার মানায়। চার বছরে ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের নামে তিনি কতভাবে সুবিধা হাতিয়ে নিয়েছেন, স্ত্রী স্বজনসহ কতজনকে নানাভাবে চাকরি ও সুবিধা দিয়েছেন তার হিসাব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্তে উঠে এসেছে। পদে থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে এভাবে একটা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়কে শুন্যের কোঠায় নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগটি দুদকের কাছেও পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গেছে।
চার বছরে সীমাহীন দুর্বৃত্তায়ন হয়েছে খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সব কিছু করে উপাচার্য বিদায় নেন গত শনিবার। তাকে জানানো হয়নি বিদায় সংবর্ধনা। রাতে গোপনে ক্যাম্পাস ছাড়লেন তিনি।
২০১৮ সালেই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করে সরকার। অধ্যাপক ড. মো. শহীদুর রহমান খানকে প্রথম ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয়। ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদন ও প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, তিনি ভিসি হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জনবল নিয়োগ বাণিজ্য নিয়ে বেশি ব্যস্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী মাত্র ৩৫০ জন। এর বিপরীতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে ৪২৬ জন।
চার বছরে স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য প্রকল্পই অনুমোদন করাতে পারেননি উপাচার্য। এখন শিক্ষা কার্যক্রম চলছে সিটি করপোরেশনের একটি স্কুল ও আরেকটি ভাড়া করা ভবনে।
তথ্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পাওয়া পদের মধ্যে ৪৪৭ জনই উপাচার্য ঘনিষ্ঠ। তার ছেলেমেয়ে, শ্যালক, ভাতিজাসহ ৪২৬ জনকে নিয়োগের ব্যবস্থা করেছেন। ঝামেলা বাধে স্ত্রীকে নিয়োগ দিতে গেলে । এসব নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম হয়েছে মর্মে ইউজিসির তদন্তেও উঠে আসে। তদন্তে আরও জানা যায়, অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ কার্যক্রম বন্ধ রাখতে চিঠি দিয়েছিল সংস্থাটি। তা অমান্য করে চলতি বছর আরও ৪০ কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেন উপাচার্য।
এমন বাস্তবতায় তদন্তের আলোকে গত ৩ আগস্ট উপাচার্যের ছেলেমেয়েসহ ৯ স্বজন ও ৭৩ শিক্ষকের নিয়োগ বাতিলের নির্দেশ দেয় মন্ত্রণালয়।
সীমাহীন স্বজনপ্রীতি
ভিসির ছেলে শফিউর রহমান খান ও শ্যালক জসিম উদ্দিনকে নিয়োগ দেন শাখা কর্মকর্তা হিসেবে। মেয়ে ইসরাত খানকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে শিক্ষক হিসেবে।
ভিসির চার ভাতিজাও নিয়োগ পায়। তাদের মধ্যে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে মুরাদ বিল্লাহ, প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে সুলতান মাহমুদ, ল্যাব টেকনিশিয়ান হিসেবে ইমরান হোসেন ও মিজানুর রহমানকে নিয়োগ দেন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে।
উপাচার্যের শ্যালিকার ছেলেও পেয়েছেন নিয়োগ। তার নাম সাইফুল্লাহ হক। তাকে নিয়োগ দেওয়া হয় সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) হিসেবে। ভিসির আরেক আত্মীয় নিজাম উদ্দিন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে নিয়োগ পান
স্ত্রীকে যেভাবে চাকরি দিতে তড়িঘড়ি করেন
ভিসির স্ত্রীর নাম ফেরদৌসী বেগম। তাকে বিশ্ববিদ্যালয়টির মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড পাবলিক হেলথ বিভাগের অধ্যাপক পদে প্রার্থী করেন ভিসি। তিনি নিজেই ছিলেন ওই নিয়োগ বোর্ডের প্রধান। বিষয়টি জানাজানি হলে ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর নিয়োগ কার্যক্রম বাতিল করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর পরই ওই বছরের নভেম্বরে তদন্ত কমিটি গঠন করে ইউজিসি। তদন্ত শেষে কমিটি সম্প্রতি মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দাখিল করে।
ভিসির দুর্নীতির বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, ‘আমরা তদন্তে যা পেয়েছি তা প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।’ বক্তব্য জানার জন্য ভিসিকে কয়েকবার ফোন করলেও তিনি রেসপন্স করেননি।