ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ মানবদেহের জন্য অত্যান্ত উপকারী ফল অ্যাভোকাডো এখন ঝিনাইদহে চাষ হচ্ছে।

জেলার কোটচাঁদপুর উপজেলার কাগমারি গ্রামের স্কুল শিক্ষক হারুন অর রশিদ মুছা বানিজ্যিক ভিত্তিতে আড়াই’শ অ্যাভোকাডো গাছ লাগিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়ছেন। গাছগুলোতে ব্যাপক হারে ফল এসেছে। ক’দিন পরই এই ফল বিক্রি করা যাবে। ব্যাপক পুষ্টিগুণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এ ফলের চাষ বিশ্বে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও অ্যাভোকাডোর বাণিজ্যিক চাষ বাংলাদেশে একেবারেই নতুন। হারুন অর রশিদ মুছার চাষ দেখে এখন আশপাশের কৃষকেরাও ঝুঁকে পড়ছেন অ্যাভোকাডো চাষে। হারুন অর রশিদ মুছা কাগমারী গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। তিনি স্থানীয় কাগমারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ধর্মীয় বিষয়ের শিক্ষক।

মুছা জানান, তার পিতা ছিলেন গ্রামের বড় কৃষক। ছোট বেলা থেকেই তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের ফলের গাছ লাগাতেন। গ্রামের স্কুলে চাকরি করার সুবাদে কৃষি কাজে বেশ সময় দিতে পারেন তিনি। পৈত্রিক সূত্রে ২০ বিঘা জমি পেয়েছেন। এসব জমিতে ফলের চাষ করে কমপক্ষে আরও ১৫ বিঘা জমি কিনেছেন। ২০০৫ সালে তিনি ঝিনাইদহ জেলায় প্রথম বাউকুল চাষ করে ানেক লাভ করেন। ওই বছর তিনি মোট ছয় বিঘা জমিতে বাউকুলের চাষ করে ২০ লাখ টাকার কুল বিক্রি করেন। তিনি আরো বলেন, তবে ২০১৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণার সাবেক মহাপরিচালক এনামুল হকের সহযোগিতায় বিদেশি ব্যয়বহুল অ্যাভোকাডোর চারা এনে রোপণ করেন। গত দুই বছর ধরে তার গাছে অ্যাভোকাডো ধরছে। এখন তার বাগানে প্রায় ২৫০ অ্যাভোকাডো গাছ রয়েছে। যার বেশিরভাগেই ফল এসেছে। এবার তিনি প্রতি কেজি ৫০০ টাকা দরে ফল বিক্রি করছেন। যা বিদেশে মিশন থেকে ফিরে আসা সেনা সদস্যরা ছাড়াও ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, রংপুরসহ বিভিন্ন জেলার ফল ব্যবসায়ীরা অনলাইনে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের বাড়ির সঙ্গে লাগোয়া প্রায় পাঁচ বিঘা জমিতে অ্যাভোকাডো ছাড়াও সাদা ড্রাগন, পারসিমন, লংগান (কাঠলিচু), সাদা জাম, গোলাপ জাম, মালবেরি, ব্লাকবেরি, সুইটলেমন, প্যালেস্টাইন বাতাবি লেবু, চায়না বাতাবি লেবু, করোসল, মিশরীয় কমলা, দার্জিলিং লেবু, ব্লাক গেন্ডারিসহ কমপক্ষে ২৫ ধরনের বিদেশি পুষ্টিকর ফলের চাষ রয়েছে। মুছা জানান, বাগানের একেকটি অ্যাভোকাডোর চারা বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকা করে। ওই বাগানের শ্রমিক গোলাম রসুল বলেন, অনেক দিন ধরে আটজন শ্রমিক বাগানে কাজ করছি। মুছা ভাইয়ের মতো অনেকে যদি এ ধরনের অ্যাভোকাডো বাগান করে, তাহলে এলাকার অনেক বেকার যুবক নিজের পায়ে দাড়াতে পারবে। কোটচাঁদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মহসীন আলী জানান, মুছা একজন স্কুল শিক্ষক। চাকরির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন ফলের চাষ করে আসছেন। তিনি অনেক বিদেশি পুষ্টিকর ফলের চাষ করেন। তার মধ্যে মেক্সিকান জাতের অ্যাভোকাডো অন্যতম। তিনি বলেন, অ্যাভোকাডো ফল পুষ্টিগুণে ভরা। এ ফল বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্তদের পথ্য হিসেবে কার্যকর। এ ফলে মানবদেহের জন্য উপকারী ফ্যাট রয়েছে। যা শরীর গঠনের জন্য উপকারী। তিনি বলেন, অ্যাভোকাডো ৮০০ থেকে ১২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। অ্যাভোকাডো চাষের জন্য এ দেশের মাটি ও আবহাওয়া বিশেষ উপযোগী হওয়ায় দেশে এ ফল চাষের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাময়। আমরা হারুনের বাগানের নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছি এবং তাকে বিভিন্ন পরমর্শ দিয়ে আসছি।