আশরাফুজ্জামান বাবু, ঝিকরগাছা প্রতিনিধিঃ হাসপাতালে ভর্তি থাকা অসহায় হতদরিদ্র মানুষের চিকিৎসা সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হলো রোগী কল্যাণ সমিতি। বর্তমানে দেশব্যাপী সিটি কর্পোরেশন এবং জেলা পর্যায়ে ৯০ টি এবং উপজেলা পর্যায়ে ৩৪২টি সরকারি হাসপাতালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের মাধ্যমে রোগী কল্যাণ সমিতির এই কার্যক্রম চলমান।

কিন্তু ঝিকরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী কল্যাণ সমিতির কার্যক্রম চলে অনেকটা সংগোপনে। এখানে রোগী কল্যাণ সমিতির কার্যক্রম আছে এটা অনেকেই জানেনা আবার এই সুবিধা কারা পাবে সেটা নির্ভর করে নার্সদের পছন্দের উপর। আর যাদের এটি দেখভাল করার কথা সেই সরকার কতৃক অনুমোদিত কমিটির অনেক সদস্য জানেনই না যে তারা এই কমিটির সদস্য। ২০/১১/২০২০ সালে ঝিকরগাছা রোগী কল্যাণ সমিতির এগারো সদস্যের একটি কমিটি অনুমোদিত হয়েছে যার সভাপতি হাসপাতালের তত্বাবধায়ক এবং সদস্য সচিব হলেন উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা। বাকী নয়জন সদস্যের মধ্যে খায়রুল হুদা রাসেল এবং শামীম রেজা মারা গেছেন প্রায় এক বছর পূর্বে কিন্তু তাদের পদে কাউকে কো-অপ্ট করা হয়নি। অবশিষ্ট সাতজনের মধ্যে তিনজন জানিয়েছেন তারা জানেনই না যে এই কমিটিতে তাদের সদস্য করা হয়েছে। দুজন জানিয়েছেন এক/দেড় বছর আগে একবার মিটিং এ ডেকেছিলো এরপর আর কিছু জানিনা। যদিও রোগী কল্যাণ সমিতির নিয়ম অনুযায়ী নিয়মিত মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার এবং সুবিধাভোগী চিহ্নিত করতে তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা থাকার কথা।

তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায়, গত ২০২১ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঝিকরগাছা রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে আর্থিক সহযোগিতা পেয়েছেন ৯৫ জন রোগী। এর মধ্যে ৮৯ জনই সিজারিয়ান অপারেশনের রোগী। রোগীর আর্থিক সহযোগিতা চেয়ে যে আবেদন ফরম পুরন করা হয়েছে সেখানে তাদের আইডেন্টিটি জাস্টিফাই করার মত যথেষ্ট তথ্য নেই। নেই জাতীয় পরিচয় পত্রের নং কিংবা ফটোকপি, নেই কোনো মোবাইল নং। ফলে পুরনকৃত ফরমের নাম ঠিকানার রোগীই যে সেবা পেয়েছে এবিষয়ে নিশ্চিত হবার কোনো সুযোগ নেই। ৯৫ জন রোগীর মধ্যে ৮৯ জনই সিজারিয়ান রোগী এ বিষয়টি বেশ সন্দেহজনক মনে হয়। ঘটনার গভীরে গিয়ে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। রোগী কল্যাণ সমিতির আর্থিক সহযোগিতা কারা পাবে এটা ঠিক করে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেবিকারা। সাধারণত সব সিজারে একই পরিমাণ ঔষধ কেনা হলেও রোগী ভেদে ঔষধ কম লাগে। এখানে বেচে যাওয়া ঔষধগুলো আবারও বাইরে বিক্রয় করার সুযোগ আছে। আবার প্রতিটি রোগীর সেলাইয়ের জন্য ৬৪০ টাকা দামের দুটি সুতা কেনা হয়। ফার্মেসীতে খোঁজ নিয়ে দেখা যায় এই সুতা ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত দামের আছে। তবে হাসপাতালে যে সুতা ব্যবহার করা হয় সেটার গড় দাম ২০০ টাকার ওপরে নয়। সেই হিসেবে প্রতি রোগী থেকে সুতা কেনা বাবদ প্রায় ২৫০ টাকা বাচিয়ে রাখা হয়। সিজারিয়ান অপারেশনের ঔষধপত্র কেনাকাটা হাসপাতাল কতৃপক্ষের মনোনীত দোকান থেকে তারা নিজেরাই করে থাকে। ফলে সুবিধাভোগীদের জানার উপায় নেই তারা কত টাকার সহযোগিতা পেলো। দোকানীর সাথে সমঝোতা করে এখান থেকে বড় অংকের অর্থ এই কাজের সাথে জড়িতরা তুলে নিয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালে ভর্তি অন্য রোগীর ঔষধ কিনে দিলে এসব অনিয়মের সুযোগ নেই এজন্যই এখানে শুধুমাত্র সিজারিয়ান রোগীদেরকেই বেছে নেয়া হচ্ছে। ফলে সরকারের এরকম একটি জনবান্ধব উদ্যোগের সেবা বঞ্চিত হচ্ছে গরীব অসহায় রোগীরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঝিকরগাছা হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার রশিদুল আলম বলেন, এখন থেকে সব ধরনের রোগী যাতে এই অর্থ সহযোগিতা পায় সেই বিষয়ে সকলকে অবগত করা হয়েছে। আইডেন্টিটি কনফার্ম করার জন্য বাধ্যতামুলকভাবে ফরমে মোবাইল নং লিখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সবধরনের রোগী এই সেবার আওতায় আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। মিটিং না হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিষয়টি সমাজসেবা অধিদপ্তরের দায়িত্ব বলে তিনি জানান।

ঝিকরগাছা উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা জনাব মেজবাহ উদ্দিন জানান, আমি এখানে নতুন এসেছি। খুব শীঘ্রই রোগী কল্যাণ সমিতির সভা আহবান করবো। ৯৫ জনে ৮৯ জন কেন সিজারিয়ান রোগী সহায়তা পেলো এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সাধারণত হাসপাতাল কতৃপক্ষ এটি সিদ্ধান্ত দেয়, আমরা শুধু টাকা পরিশোধ করি। আমাদের লোকবল কম থাকায় সবকিছু তদারকি করা সম্ভব হয়না। তবে ভবিষ্যতে এই বিষয় গুলো খেয়াল রাখা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।