ফরিদপুর প্রতিনিধি: ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় স্থানীয় সাংবাদিক মুজাহিদুল ইসলাম নাঈমকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করার ঘটনা ঘটেছে। মুজাহিদ ঢাকাটাইমস পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে আলফাডাঙ্গার স্থানীয় পরিবহণ বাসস্টান্ডে এ ঘটনা ঘটে।

ঘটনার সময় স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে চিকিৎসকরা তাকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন।

আহত সাংবাদিক মুজাহিদ জানান, আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র সাইফুর রহমানের ভাই জাপান ও তার পাঁচজন-ছয়জন সহযোগীরা হঠাৎ করে হামলা চালায়। তিনি বলেন, হামলাকারিরা লোহার রড, স্ট্যাম্প, দেশিয় অস্ত্র-সস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে আহত করে। এসময় স্থানীয়রা হামলাকারিদের হাত থেকে আমাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে তাদের ওপর চড়াও হয় দুর্বৃত্তরা। এতে বেশ ক’জন আহত হন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, এই ঘটনায় জড়িত একজনকে আটক করা হয়েছে; যিনি সাংবাদিক মুজাহিদকে মারধরে সহযোগীতা করেছিলেন। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আলফাডাঙ্গার রাজধানী পরিবহনের কাউন্টারে টিকেট কিনতে যান রমিজ নামের এক যুবক। তিনি ঢাকার একটি টিকেটের দাম পরিশোধ করে বাসে ওঠেন। বাস ছাড়ার আগ মূহুর্তে ‘ক্যাশ কাউন্টার’ থেকে বলা হয় রমিজ টিকিটের টাকা দেননি। তাই তাকে ঢাকায় যেতে দেয়া হবে না। বিষয়টি জানিয়ে নাঈমের সহযোগীতা চান রমিজ।

ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টির মিমাংসা করার কথা বলতেই সাংবাদিক মুজাহিদের ওপর চড়াও হয় কাউন্টারের ম্যানেজার জাপান ও তার সহযোগীরা। জাপান স্থানীয় পৌর মেয়র সাইফারের ছোট ভাই। কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে মুজাহিদকে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। এসময় পাশে থাকা লোকজন এগিয়ে এলে তাদের উপরও চড়াও হন জাপান ও সহযোগিরা।

আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সেকেন্দার আলম বলেন, আমি ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি মুজাহিদকে দুর্বৃত্তরা লোহার রড, কাঠের বাট্যাম দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার হাত ও পায়ে বেশ জখম হয়েছে। পরে এক্সরে করা হয়। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকরা তাকে ফরিদপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজে রেফার্ড করছেন।

সাংবাদিক মুহাজিদকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এমন মারপিট করা হয়েছে জানিয়ে স্থানীয় এই সাংবাদিক নেতা আরও বলেন, তাকে মেরে ফেলার জন্য ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয়রা এগিয়ে আসায় তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অবহিত করা হয়েছে।

এদিকে স্থানীয় প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন সাংবাদিকরা। তারা বলছেন, এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। দ্রুত প্রশাসন ব্যবস্থা না নিলে সাংবাদিকরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।

এ বিষয়ে মধুখালী সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সুমন কর বলেন, ঘটনা জানার পর পরই আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এই ঘটনায় একজনকে আটক করা হয়েছে। ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলে এটা মামলা হিসেবে নেওয়া হবে। সাংবাদিক নির্যাতনের সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

এ প্রসঙ্গে ফরিদপুরে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (ডিসি) অতুল সরকার জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আলফাডাঙ্গাকে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি।